অনলাইন ডেস্ক :
চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামীর আমীর আহমদ শফীর ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জ এসেছে তারই অনুসারী জুনায়েদ বাবুনগরীর পক্ষ থেকে। শফীর ছেলে আনাস মাদানী অভিযোগ করেছেন, গত দুদিনে বাবুনগরীর সমর্থক ছাত্ররা এবং কিছু বহিরাগত বিক্ষোভ করে মাদ্রাসাটির দখল নিয়েছিল। তবে বাবুনগরীর পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। খবর বিবিসির।

মাদ্রাসাটির একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেছেন, আহমদ শফীর বয়স ১০০ বছরের বেশি হয়েছে। বয়সের ভারে তিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে কোন কর্মকাণ্ড চালাতে পারছেন না। ফলে তার উত্তরসূরি কে হবেন- এই প্রশ্নে অনেকদিন ধরেই মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে নানা আলোচনা ছিল।

মাদ্রাসায় বিক্ষোভকারীরা শফীকে মাদ্রাসার প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দেয়া সহ ছয় দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট বিলি করেছিল। বিক্ষোভ থেকে শফী এবং তার সমর্থক শিক্ষকদের কক্ষে ভাঙচুর এবং একজনকে মারধোরের ঘটনাও ঘটে। বিক্ষোভের মুখে শফীকে হাজির করে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির বৈঠক করা হয় এবং সেই বৈঠকের পর আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতিও দেয়ার কথা জানানো হয়।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ১২৪ বছরের পুরনো এই মাদ্রাসার নাম হচ্ছে, জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম। শফী এই মাদ্রাসায় প্রিন্সিপাল এবং একইসাথে পরিচালকের দায়িত্ব পান ১৯৮৯ সালে। এর আগে ২০ বছরেরও বেশি সময় তিনি সেখানে শিক্ষকতা করেছেন। মাদ্রাসাটির একজন সাবেক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বেশ কয়েক বছর আগে তাকে অসম্মান করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল।

তিনি বলেছেন, শফী যখন প্রধানের দায়িত্ব পালন শুরু করেন, তখন মাদ্রাসার বেশিরভাগ শিক্ষকই তার ছাত্র ছিলেন। ফলে তারা মি: শফীর কোন সিদ্ধান্ত বা কর্মকাণ্ড কখনও চ্যালেঞ্জ করতেন না। এছাড়া ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে শফীর ছেলে আনাস মাদানী মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান।

অন্যদিকে ৯০-এর দশকের শেষদিকে রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব বাড়তে থাকায় দেশের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসার প্রধান হিসাবে শফীর একটা গুরুত্ব এবং ভাবমূর্তি তৈরি হয়। এ সবের সুযোগ নিয়ে পরিস্থিতির কারণে মাদ্রাসাটিতে শফী এবং তার ছেলে আনাস মাদানীর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব গড়ে ওঠে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক জুনায়েদ বাবুনগরীকে ২০১৭ সালে সহকারী পরিচালক করা হয়েছিল। তিনিই উত্তরসূরি হতে পারেন-এমন একটা আলোচনা ছিল। কারণ তাকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিবও করা হয়েছিল।

কিন্তু ঐ সিনিয়র শিক্ষক মনে করেন, আনাস মাদানীর পরামর্শে শফী মাদ্রাসার সাবেক একজন শিক্ষক শেখ আহমদকে আবার ফিরিয়ে আনেন। তখন এটা স্পষ্ট হয় যে বাবুনগরীকে ঠেকানোর জন্য তাকে আনা হয়েছে। এনিয়ে: বাবুনগরী এবং তার সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল।

এই শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, মাদ্রাসা পরিচালনার যে কমিটি রয়েছে, যাকে শূরা বলা হয়, ২০০০ সাল থেকে ১৬ বছর সেই কমিটির কোন বৈঠক করা হয়নি। একক নেতৃত্বে ছাত্র ভর্তি এবং শিক্ষক নিয়োগ ও অপসারণসহ সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে কারণে কর্তৃত্ব বা মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল দীর্ঘ সময় ধরে। এখন তারই প্রকাশ ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন। শেষপর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দেয়।