বরফকল মালিকদের সিন্ডিকেটে জিম্মি মৎস্যখাত

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০১:০৮ , আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০১:৩৯

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


বরফকল মালিকদের কারসাজির প্রতিবাদে ফিশিংবোট মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ। উপস্থিতির একাংশ।

ইমাম খাইর#
কক্সবাজারের বরফকল মালিকদের সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছে ফিশিংবোট মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সঠিক সময়ে বরফের যোগান না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী। ক্ষতি পোষাতে না পেরে অনেকে ব্যবসা বন্ধ রেখেছে। যারা ব্যবসায় আছে তারাও লোকসান গুনে চলছে। সব মিলিয়ে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের ‘মন্দার দিন’ কাটছে। আর অধিক মুনাফা-খুশিতে ফুলছে বরফকল মালিকেরা।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম চিশতি জানান, বরফকল মালিকেরা সিন্ডিকেট করেছে। তারা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বরফ না দিয়ে অধিক দামে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে। তাতে অসংখ্য ব্যবসায়ী ক্ষতির সম্মুখীন।

মৎস্য ব্যবসায়ী শফিউল আলম বাশি জানান, মৎস্য ব্যবসায় আগের তুলনায় খরচ বেড়েছে ৩ গুনের চেয়ে বেশি। সময়মতো বরফ না পেয়ে মাছ নষ্ট হচ্ছে। দেওলিয়া হওয়ার পথে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

তার মতে, অতিরিক্ত দাম ও সঠিক সময়ে বরফ না পাওয়ায় গত এক মাসে লোকসান গুনছে অধিকাংশ মৎস্য ব্যবসায়ায়ী।

সংকট সমাধানে পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের অনুরোধেও পাত্তা দেয় নি বরফকলের মালিকেরা।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বরফ খুবই নিম্নমানের। ওজনেও কম। সময় মতো পাওয়া যায় না যোগান।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, ১৫০ টাকার বরফ ৫০০ টাকায় কিনতে বাধ্য করে। বরফের ঘাটতি পূরণে বাইর থেকে আনতে গেলেও বাধা দেয়া হয়। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত বরফ আকারে বড় হলেও ভেতরে পুরো ফাঁকা। ১২০ কেজি ওজনের বরফ ৩০ কেজিও হয় না। এই বরফ কিনে ক্ষতি হয় ব্যবসায়ীদের।

এদিকে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, খুলনা, মহিপুর থেকে বরফ কিনে আনছে ব্যবসায়ীরা। তাতেও বাধা অসাধু বরফকল মালিকদের।

বরফের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আহরিত ইলিশ মাছ। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্র থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ছবিটি ধারণকৃত।

সুত্র মতে, কক্সবাজারে ১৭ টির মতো বরফকল রয়েছে। যেখানে ২০ থেকে ২৪ কেজি ওজনের ১২০০০ পিস মতো দৈনিক বরফ উৎপাদন হয়। অথচ, ভরা মৌসুমে কক্সবাজারে ২ হাজার পিস বরফের চাহিদা। সংকটেও বাইর থেকে বরফ কিনে আনতে গেলে বাধার সম্মুখীন হয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, মৎস্য অফিসে কর্মরতদের সাথে স্থানীয় বোট মালিক ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয় না থাকায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

বরফকল মালিকদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ফিশিংবোট মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এলাকায় বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন- কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম চিশতি, সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম বাশি, জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু, সাধারণ সম্পাদক জানে আলম পুতু, ব্যবসায়ী নেতা নাসির উদ্দিন বাচ্চু।

এ সময় ব্যবসায়ী নেতা মঈন উদ্দিন, এরশাদ উল্লাহ সওদাগর, শওকত ওসমান ফারুক, কাইছার সওদাগর, জাকারিয়া সওদাগর, ইসমাইল সওদাগরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে তারা বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) কক্সবাজার কেন্দ্রের প্রধান মোঃ জাহিদুল ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সংকট সমাধানে করণীয় ঠিক করতে উভয় পক্ষ একমত হন।