সিবিএন ডেস্ক
ছবিটি মঙ্গলবার শ্যামবাজার পেঁয়াজের আড়ৎ থেকে তুলেছেন সাইফুল ইসলাম
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার খবরে দেশের বাজারে অতিমুনাফার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও পেঁয়াজের দাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে শতক ছুঁয়েছে। আর এই ভাবে দ্বিগুণ দামবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

পাইকারদের ভাষ্য, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে তাদের কোনো হাত নেই। তারা কেজিপ্রতি কমিশনের ভিত্তিতে আমদানিকারকদের পেঁয়াজ বিক্রি করে থাকেন। সেক্ষেত্রে আমদানিকারকরাই প্রতিদিনের দাম নির্ধারণ করে দেন। যে কারণে দাম বৃদ্ধিতে তাদের দুষলেও তারা এক্ষেত্রে ভূমিকাহীন।

ঢাকার শ্যামবাজারের একাধিক আড়তদারের দাবি, আগের এলসিতে আমদানি করা পেঁয়াজ আরও অনেকদিন বিক্রি হবে। কিন্তু ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশের আমদানিকারকরা আড়তদারদের দিয়ে আগের কেনা পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রি করাচ্ছেন।

ভারত সরকারের ভাষ্য, তাদের বিভিন্ন রাজ্যে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি রুখতেই গত সোমবার ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার মহাপরিচালক অমিত যাদব স্বাক্ষরিত এক নোটিশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। নোটিশে হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকবে। এই সংক্রান্ত একটি আদেশ ভারতের বিভিন্ন বন্দরের কাস্টমসে পাঠানো হয়।

ভারতের এই সিদ্ধান্তের পর দেশের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামে ব্যবসায়ীরা। গত সোমবার সকালে পেঁয়াজ ভেদে ৩৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় সন্ধ্যার দিকেই তা গড়ায় ৪৫ থেকে ৬৫ টাকায়। আর গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮৫ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি একশ টাকা দরে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্যামবাজারের এক আড়তদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করে তাদেরকে দেয়। আমদারিকারকদের থেকে কেজি প্রতি ৩০ পয়সা এবং পাইকারদের থেকে কেজিপ্রতি ৬০ পয়সা কমিশনে তারা বিক্রি করেন।

নিউ আল মদিনা ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যারা আজকে দেশি পেঁয়াজ ব্যাচছে (বিক্রি করছে), এই মাল তো আগের দামে কেনা। যখন ইন্ডিয়ানটা বন্ধ হইছে, তখন ব্যাপারী বলছে, আগের দামে বেইচেন না (বিক্রি করবেন না), এই দামে ব্যাচেন। কমে ব্যাচলে আপনারে কৈফিয়ত দেওয়া লাগব। এই সমস্ত মাল তো আগের রেটে (দামে) কেন, কম দামে কেনা। এগুলো আমাদের দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করাচ্ছে।’

অর্থাৎ পেঁয়াজের অতিমুনাফা যাচ্ছে আমদানিকারকদের গাঁটে। আগের কেনা পেঁয়াজ দিয়ে দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা করার অনৈতিক সুযোগ নিচ্ছেন তারা। আড়তদাররা পেঁয়াজ মজুদ করছে না বা দাম বাড়াচ্ছে না দাবি করে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) বাজার অনেক বেশি। সবাই দেখতেছে গত বছরের মতো সুযোগ নিতে চাইতেছে যে, মাল কিনলেই লাভ হইতেছে। কিন্তু আমাদের মজুদ করার কোনো সিস্টেম নাই। আমরা বিক্রি করলে কমিশন পাব, বিক্রি না করলে তো কমিশন পাব না। কিন্তু আমাদেরকে মাল দেয়ার পর দাম ঠিক করে দেয়া হয়, ওই দামে ব্যাচা (বিক্রি করা) লাগব। কম ব্যাচলে (বিক্রি করলে) আমার জরিমানা দেওয়া লাগব। ব্যাপারী এটা মাইনা (মেনে) নিব না। তারা মোবাইলে বলে, এই মালডা এই দামে ব্যাচেন।’

শ্যামবাজারের ইমাম ট্রেডার্সের পরিচালক ইদ্রিস আলী মধুর ভাষ্যও একইরকম। তার দাবি, তারা প্রতিকেজিতে পাইকার ও আমদানিকারকদের থেকে মোট ৯০ পয়সা কমিশন পান। কমিশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করাটাই তাদের পেশা। পেঁয়াজের দাম বাড়ানো বা মজুদ করার বিষয়ে তাদের কোনো হাত নেই।

ঢাকা টাইমসকে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানিকারকরা ট্রাকে করে আমাদের কাছে পৌঁছায়। তারা একটা দাম ঠিক করে দেয়, আমরা সে দামে বিক্রি করি। যেমন আজকে (মঙ্গলবার) দাম ৭৫ থেকে ৮২ টাকা। সোমবার ৪৮ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’

ঢাকা টাইমসকে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এখন আমদানিকারকরা আমাদেরকে যেভাবে বিক্রি করতে বলে আমরা সে দামে বিক্রি করি। এছাড়া যদি কেউ ২০ বস্তা পেঁয়াজ নিবে, দাম একটু কম বলে, আমরা আমদানিকারকদের ফোন করি, তারা যদি বলে দুই টাকা, পাঁচ টাকা কমে বিক্রি করতে তখন আমরা দুই টাকা, পাঁচ টাকা কমে দিতে পারি। এছাড়া আমরা আর কিছু করতে পারিনা।’ -ঢাকাটাইমস