ড.আব্দুস সাত্তারওয়াশিংটন ডি,সি)

  খ্রীস্টান সমাজে সাধারণত প্রথমে পাত্রী দেখা হয়। বরপক্ষ কনে নির্বাচন করে কনের চরিত্র, দোষ-গুণ, বংশ পরিচয় জেনে নেয়। তারপর শুভদিন দেখে বরপক্ষ কনের বাড়ি যেয়ে তাদের উদ্দেশ্যের কথা জানায়। বরপক্ষের প্রস্তাবে কনেপক্ষ রাজি হলে বাগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কোথাও এ অনুষ্ঠানকে ‘পাকা দেখা’ও বলে। বাগদানের পরেও খ্রীস্টান বিয়েতে অনেকগুলো পর্ব থাকে এবং অনেক দিন সময় নিয়ে অনুষ্ঠান চলে, যেমন, বাইয়র অনুষ্ঠানে বরপক্ষের লোকজন কনের বাড়িতে যায়। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বর-কনে সবার আশির্বাদ গ্রহণ করে।

বিয়ের ৩ সপ্তাহ আগে কনের বাড়িতে পুরোহিতের কাছে বর-কনে নাম লেখান। অনেকে এ অনুষ্ঠানে আতসবাজি ও বাজনার আয়োজন করে। কিছুদিন পর আরেকটি অনুষ্ঠানে বর-কনে বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ডলীর বিধি অনুযায়ী এ সময় বিয়ের ক্লাস করতে হয়।  এটি বিয়ে পূর্ব ব্যাধতামূলক ক্লাস ব্যবস্থা। এরপর অপদেবতার নজর থেকে রক্ষার জন্য বিয়ের আগ পর্যন্ত বর-কনেকে অতি সংযমী জীবন করতে হয়। অনেকে এ সময় ভূত-প্রেত ও অপশক্তির নজর থেকে রক্ষার জন্য ‘রোজারি মালা’ বা ‘জপমালা’ গলায় পরেন।

বিয়ের আগের রাতের অনুষ্ঠানকে গা-ধোয়ানী, কামানি বা গা-ধোয়ানী বলে। অনেক খ্রিস্টান সমাজে এই দিন গায়ে হলুদ মাখিয়ে জাকজমকের সঙ্গে অনুষ্ঠান করা হয়। বিয়ের দিন ভোরে বাদকদলসহ বরের আত্মীয়-স্বজন কনের বাড়ি গিয়ে কনেকে নিয়ে আসে। কনেকে ঘর থেকে আনার সময় তার হাতে পয়সা দেওয়া হয়। কনে বাড়ি থেকে আসার সময়  সেই পয়সা ঘরের মধ্যে ছুড়ে ফেলে। এর অর্থ হল যদিও সে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে, তারপরও বাড়ির লক্ষী ঘর থেকে চলে যাচ্ছে না। সেখান থেকে গির্জায় চলে যায়। গির্জার প্রবেশ পথে যাজক বর-কনেকে বরণ করে নেয়। তারপর বর-কনে দুজনের মধ্যে মালা বদল করা হয়। এরপর কনের সিঁথিতে সিদুর পরিয়ে দেওয়া হয়।

শেষ অনুষ্ঠান ঘরে তোলা। এই অনুষ্ঠানে উঠানের দিকে মুখ করে বড় পিঁড়ির উপরে বর-কনেকে দাঁড় করানো হয়। এরপর বর-কনে সাদা-লাল পেড়ে শাড়ির উপর দিয়ে হেঁটে ঘরে ওঠে। এ সময় বর ও কনে একে অপরের কনিষ্ঠ আঙুল ধরে থাকে। 

প্রতিটি বিয়েই ধর্ম ধারা পরিচালিত। তাই আপনি দুনিয়ার যেই প্রান্তেই বসবাস করেন কিন্ত আপনার বিয়ে হবে ধর্মের নিয়মে।পৃথিবীর মোট ধর্মের সংখ্যাটা জানলে আপনি খুবই অবাক হবেন। Adherents.com এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে মোট ধর্মের সংখ্যা ৪,৩০০। তবে সংখ্যাটা এর বেশিও হতে পারে। তাই সব ধর্মের বিয়ের কথা জানাতে পারলাম না। দুইটি পর্ব বিয়ে নিয়ে লিখেছি এবার কিছু কথা। উপরে যে “সুন্দর অবয়ব” ছবিটি দেখা যায় তাঁর নাম আনোয়ার হাজরা। আমরা ৪ ভাই ২ বোন। আনোয়ার আমাদের অতি আদরের ছোট ভাই। তাঁর বিয়ে নিয়ে কিছু কথা লিখতে যাচ্ছি। নজর রাখুন আগামী পর্বে। চলবে………

ড.আব্দুস সাত্তার , লেখক ও সাংবাদিক, ওয়াশিংটন ডি, সি

০৯/১২/২০২০