নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় বরখাস্তকৃত টেকনাফের ওসি প্রদীপ বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের শারীরিক অবস্থা এখনো উন্নত হয়নি।
তার ওপর ঘটে যাওয়া প্রদীপ বাহিনীর অমানুষিক নির্যাতনের কথা স্মরণ করে এখনো তিনি শিউরে উঠছেন।
দৃষ্টিশক্তি লোপ, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, বুক, মাথাসহ সর্বাঙ্গে ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। গত ২৭ আগস্ট থেকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন তিনি।
ডায়াবেটিস, শারীরিক ও মানসিক ক্রমশ প্রকট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক ফরিদের স্ত্রী হাসিনা আকতার।
ওসি প্রদীপের নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং মাদক ব্যবসা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে ৬টি মিথ্যা মামলায় ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর গত ২৭ আগস্ট জামিনে মুক্ত হন ফরিদ।
তার স্ত্রী হাসিনা আকতার জানান, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কয়েক দিন কিছুটা ভালো থাকলেও বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ দেখা যাচ্ছে যে, যা আগে দেখিনি। সারাদিন হাসপাতালের বেডে শারীরিক যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদছেন তিনি।
সদর হাসপাতালের দায়িত্বশীল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে দফায় দফায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তারা চেষ্টার ক্রুটি করছেন না তাকে সুস্থ করতে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এক বছর আগে তার হাত-পা গুঁড়িয়ে দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে যে আঘাত করা হয়েছে তা পুরোপুরি সেরে উঠতে সময় লাগবে। তবে তার জন্য আরও উন্নত চিকিৎসারও দরকার রয়েছে; যা কক্সবাজার থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের বড় ভাই সাংবাদিক গোলাম আজম খান জানান, কারামুক্তির আগে তার প্রতি যে অন্যায় হয়েছে তা নজির বিহীন। এদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা এবং গণমাধ্যমে প্রায়ই সব কথা উঠে আসায় প্রতিপক্ষরা এখনও তাদের সেই খুন, গুম ও হামলা-মামলার হুমকি পাঠাচ্ছে। ফলে বর্তমানে হাসপাতালেও সাংবাদিক ফরিদ এবং তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন। অপরদিকে এতগুলো মিথ্যা মামলার দুঃশ্চিন্তা, আর্থিক অভাব-অনটন ও মাথা গোঁজার ঠাঁইসহ ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন রয়েছেন তারা।
ফরিদের স্বজনদের দাবি, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কলম ধরতে গিয়ে ওসি প্রদীপ ও তার লালিত-পালিত বাহিনীর কাছ থেকে তিনি যে জুলুমের শিকার হয়েছেন তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
একই সঙ্গে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, আইনশৃংখলা বাহিনী, সব গোয়েন্দা সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রত্যাশা করেছেন তার নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সাজানো অস্ত্র-মাদকসহ সব মামলা যেন অচিরেই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসাসেবা এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে মাথা গোঁজার স্থান পেতে নির্যাতিত সাংবাদিক পরিবার প্রধানমন্ত্রী ও দেশি-বিদেশি বিত্তবানদের আন্তরিক সাহায্য কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন ২০১৯ সালে টেকনাফের আইনশৃংখলার অবনতি, টাকা না দিলে ক্রস ফায়ার দেন টেকনাফের ওসি শিরোনামে দুটি তথ্য ভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করে প্রদীপের রোষানলে পড়েন সাংবাদিক ফরিদ। এরপর একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে তাকে তুলে এনে প্রদীপ ও তার বাহিনী নির্মম নির্যাতন চালিয়ে অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি, চুরি, মারামারিসহ বিভিন্ন ধারায় ৬টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। চলতি বছরের ২৭ আগস্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান।