জাবেদ নূর শান্ত


করোনা মহামারীর এই বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি দিক থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে আমরা পেছনে ঠেলে দিচ্ছি। তবে একটি বিষয়ে আমাদের লক্ষ রাখা উচিত। আর সেটি হল, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি আমাদের জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একদিকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমন ক্রমাগত বাড়ছে, অন্যদিকে ‘উন্নয়ন’ এর নামে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে, যেহেতু পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে আঘাত হানছে আম্পান এর মত বড় বড় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদি।

বর্তমান বিশ্বে জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনে উপকূল অঞ্চলে যে সংকট দেখা দিচ্ছে, বিশ্বনেতাদের অনেকের কাছে বিষয়টি গুরুতর বলে মনে হচ্ছেনা। কিন্তু আমরা জানি, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে কি হচ্ছে না। কারণ, আমরা এই সমস্যা মোকাবেলা করছি ইতোমধ্যে। কক্সবাজারের বিষয়টি যদি তুলে ধরতে চাই তাহলে এখানে সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকির বিষয়টিও জড়িত। কারণ, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনে বৈষ্ণিক উষ্ণায়নের ফলে দিনের পর দিন কক্সবাজারের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েই চলেছে।

ফলে সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে সৈকতের লাবণী, শৈবাল, কবিতা চত্ত্বর, শাহীন বীচ পয়েন্টসহ বিভিন্ন পর্যটন পয়েন্টসমূহ। যার কারণে, কক্সবাজারের প্রকৃৃতি পরিবেশগত এবং পর্যটন খাতে ব্যাপক ক্ষতি দেখা দিতে শুরু করছে যা ইতোমধ্যে কম-বেশী সকলের নজর কেড়েছে। এই অপূরণীয় ক্ষতি পূরণে প্রয়োজন একটি বিশাল ক্ষতিপূরণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বনেতাদের যারা কথা দিয়েছিলো ‘কার্বণ নিঃসরণ বৃদ্ধিতে’ কোনধরণের ভূমিকা রাখবেন নাহ, দিন শেষে ঠিক তাঁরাই তাদের শর্ত ভঙ্গ করলো এবং কয়লা বিদ্যুতের মত পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেই গেলো। জাপান সরকারের মাধ্যমে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যে অনুদান বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা যেনো প্যারিস চুক্তির বিষয়টি মাথায় রেখে করা হয়। এবং সে প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় এতে’ই প্যারিস চুক্তির সফলতা। কারণ, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প আমাদের বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর এবং এটির পরিবেশ ও প্রকৃতি জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এক সময় আমরা কক্সবাজারকে বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতির জন্য ক্যাম্পেইন করেছি। এখন আমরাই আবার কক্সবাজারকে ধ্বংস করছি। কক্সবাজার যদি না বাঁচে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের সামাজিক বিপর্যয়ও ঘটবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, দেশের সম্পদ রক্ষা করতে না পারার জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। আমি একজন সচেতন তরুণ, বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিবেশ দূষণকারী দেশের শীর্ষে দেখতে চাই না।

এছাড়াও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে অবহেলা করায় এ বর্ষায় দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া সহ মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, উজানটিয়াসহ উপকূলের বিভিন্ন ইউনিয়ন পানিতে ডুবে গিয়েছে। এই ৪ উপকূল এলাকার প্রায় দেড় তৃতীয়াংশ ভূগর্ভে বিলীন হয়েছে বিভিন্ন সময়। উপকূলবর্তী গ্রাম সাগর গর্ভে অতীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঘটনা এবং বর্তমানে প্লাবিত হয়ে জীবন-জীবিকা নিয়ে ঝুঁকিতে আছে অনেক পরিবার। তবে এক্ষেত্রে তরুণেরা সকলে এক হয়ে মাঠে নামলে ভবিষ্যতে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তার টেকসই সমাধান সহজ হবে বলে ধারণা করা যায়।

জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনযাত্রার মান কে আরও শক্তিশালী করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন । এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলে যারা বসত-ভিটে হারিয়েছেন তাদের সকলের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের খুরুশকুলে করেছেন বাংলাদেশের সসর্ববৃহৎ জলবায়ু আশ্রয়ন কেন্দ্র। এটি টেকসই সমাধানের একটি দৃশ্যমান উদ্যোগ।
জলবায়ু পরিবর্তনরোধে ঘুমন্ত ও উদাসীন বিশ্ব নেতাদের জেগে ওঠতে হবে এবং পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে সংকট মোকাবেলায় জরুরী টেকসই সমাধান। জলবায়ু সংকটের ফলে বাংলাদেশের উপকূলে বিভিন্ন বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিন দিন বাড়ছে জলবায়ু শরণার্থী। জলবায়ু সংকটের ফলে যেহেতু সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। তাই এ ক্ষেত্রে পলিসি ও কর্মকা-ে উপকূলবর্তী অঞ্চলের তরুণদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।

আমি মনে করি বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। বর্তমানে তরুণ সমাজ বেশ সচেতন এবং যেকোন সংকট মোকাবেলায় সকলে ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং, বিষয়টি কে লক্ষ করে পরিবেশগত বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবেলায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণে আমাদের মত তরুণদের আরো বেশী বেশী অনুপ্রাণিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আমি বলবো, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তরুণদের বইয়ের জগৎ হতে বেরিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমে কাজ করতে হবে। সংকট মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে তরুণদের অংশগ্রহণ যত বেশী হবে পৃথিবীর যেকোন সংকট মোকাবেলা হবে সবচেয়ে বেশী সহজ।


লেখক: সমন্বয়কারী, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, কক্সবাজার শাখা।