মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে এনেক্স ভবন (বর্ধিত ভবন) নির্মাণ করতে যাচ্ছে- জাতি সংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (UNHCR)। জেলা সদর হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বের খালি ভূমিতে ১০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বহুমুখী অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই এনেক্স ভবনটি নির্মাণ করা হবে। প্রায় ২২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে আপাতত ১০তলা ফাউন্ডেশনের ৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করে দেবে UNHCR। তবে ভূমির মালিকানা জটিলতায় ১০তলা বিশিষ্ট প্রস্তাবিত ভবনটির ভূমি ব্যবহার, নকসা, ডিজাইন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন না হওয়ায় প্রস্তাবিত ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্ভরযোগ্য সুত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে রোগির ক্রমবর্ধ্বমান আধিক্যের কথা চিন্তা করে প্রায় ২বছর আগে থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও কক্সবাজার আরআরআরসি অফিস কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের বর্তমান মূল ভবনের উত্তর পার্শ্বে পূর্বে মসজিদ, পশ্চিমে অস্থায়ী গোডাউন, দক্ষিণে মূল ভবনের সাথে লাগোয়া, উত্তরে নতুন গেইট থেকে একটু জায়গা রেখে একটি নতুন ভবন নির্মাণের চিন্তাভাবনা করে। এ উদ্যোগের অংশ হিসাবে সরকারি সংস্থা গুলো কক্সবাজার UNHCR কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালের উল্লেখিত খোলা জায়গায় আরেকটি বর্ধিত ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। কক্সবাজার UNHCR কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ইতিবাচক হিসাবে নিয়ে ১০তলা বিশিষ্ট একটি এনেক্স ভবনের ডিজিইন ড্রয়িং করে অনুমোদনের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে আরআরআরসি অফিসের মাধ্যমে জমা দেন। কিন্তু প্ল্যান ডিজাইনের সাথে জমির মালিকানা সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র কউক এ জমা না দেওয়ায় কউক ভূমি ব্যবহার করার কোন অনুমতি দিতে পারছেনা।
এবিষয়ে কউক চেয়ারম্যান কর্নেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ আহমেদ (পিএসসি) বলেছেন, হাসপাতালের উন্নয়ন মানে, সর্বোচ্চ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন। মালিকানার বিষয়ে ডিজাইন ড্রইং এর সাথে কোন কাগজপত্র দাখিল করা হয়নি। প্রায় দেড় বছর আগে কউক এ দাখিল করা ন্যূনতম কাগজপত্র থাকলেই ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন এবং ডিজাইন-ড্রইং অনুমোদন দিয়ে তখনই দিয়ে দেওয়া হতো। কউক নিজস্ব উদ্যোগে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ডেকে এনে সব বুঝিয়ে দিয়েছেন। এটি অনুমোদন দেওয়ার জন্য কউক অপেক্ষায় আছে। এখনো আপডেট কিছু ডকুমেন্টস পেলেই ভূমি ব্যবহারের অনুমতি সহ সব অনুমোদন দেওয়া হবে জানান-কউক চেয়ারম্যান কর্নেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ আহমেদ।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. জাকির হোসেন খান বলেন, হাসপাতালে রোগী সংকুলান হচ্ছেনা, ডাক্তার বসার জায়গা নেই। হাসপাতালে ৬১ জন চিকিৎসকের পোস্টে এখন মাত্র ৪১ জন চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের সকলকেও হাসপাতালে বসার ঠিকমতো জায়গা করে দিতে পারছিনা। রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ স্থানীয় রোগীর আধিক্যের কারণে হাসপাতালটির ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে এখন সবসময় ৪ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। এ অবস্থায় একটি নতুন ভবন খুবই দরকার। সুপার ডা. জাকির হোসেন খান আরো বলেন, হাসপাতালের মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র তিনি অনেক খুঁজাখুঁজি করেও পাননি। এবিষয়ে তিনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্রের সংকটের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। এ সমস্যা দ্রুততম সময়ে সুরাহা করতে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন-উক্ত কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন খুবই আন্তরিক বলে জানান উক্ত কর্মকর্তা। তবে, কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মুক্তার এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বা জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা তিনি এখনো পাননি বলে জানিয়েছেন।
এদিকে, বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে, ভূমি ব্যবহারের অনুমতি, ডিজাইন, ড্রইং অনুমোদন হলেই মানসম্পন্ন অত্যাধুনিক বহুমুখী সুবিধা সম্বলিত প্রস্তাবিত এনেক্স ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। প্রায় ২২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ডিজাইন ড্রইং করা প্রস্তাবিত এনেক্স ভবনটি’তে একাধিক লিফট, র্যাম সহ জাতীয় মানের সকল সুবিধাদি রাখা হয়েছে। এনেক্স ভবনটি নির্মাণের পর UNHCR তাদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম সহ সবকিছু সরবরাহ দেবে বলে সুত্র গুলো নিশ্চিত করেছেন। বর্তমান মসজিদ, পার্কিং সহ সমুদয় সুবিধাদি বহাল রেখে প্রস্তাবিত এনেক্স ভবনটি নির্মাণ করা হবে জানান সুত্রটি।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে UNHCR কর্তৃপক্ষ ১০বেডের ICU এবং ৮বেডের HDU নির্মাণ করে দিয়েছে। যেখানে এগুলোর চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় সহ প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা জনবল ও ব্যবস্থাপনার ব্যয় প্রতিমাসে UNHCR নিয়মিত বহন করছে। এছাড়া জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা UNICEF ৫৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ করে দিয়েছে।