বিডি জার্নাল:

দিনাজপুরে ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবার ওপর হামলার পর থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কারণ ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রকৌশলী, সহকারি ভূমি কমিশনার, মৎস্য কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সরকারি সকল অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। এমনকি এসব কর্মকর্তাদের বাসভবনেও নেই তেমন নিরাপত্তার ব্যবস্থা। তাই তারা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এর আগে সারাদেশে উপজেলাগুলোতে নিয়োগকৃত চিকিৎসকরাও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাতে এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে লাঞ্ছিত হয়েছেন। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে বিষয়টি তখন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এখন ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার পর চিকিৎসকসহ সবার নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনা আসছে।

তবে, ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবার ওপর হামলা পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে রংপুর বিভাগের ৫৮টি উপজেলায় ইউএনওদের নিরাপত্তায় ১০ জন করে অস্ত্রধারী আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু অস্ত্রধারী আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য শুধু আনসার যথেষ্ট নয়। তাদের নিরাপত্তার জন্য আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) মোতায়েন করতে হবে। আর এই নিরাপত্তা শুধু মাঠে কাজ করার সময় নয়, কর্মকর্তাদের বাড়িতেও এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।

জানতে চাইলে সাভার সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার বেগম শামীম আরা নিপা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ইউএনও উপজেলার সভাপতি। সেখানে উনার ওপর হামলা হওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবে কিছুটা উৎকণ্ঠার বিষয় তো থাকেই।

নিরাপত্তার বিষয়ে নিপা আরো বলেন, নিরাপত্তার জন্য (রংপুর বিভাগ) আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আর আমাদের নিরাপত্তার জন্য আনসার না কী অন্য কোনো বাহিনী মোতায়েন করা হবে- এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

একই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করলে সাভার উপজেলার সহকারি (ভূমি) কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আতঙ্কের মধ্যেই আছি। আর আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারণ কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে গেলে আমরা বাধা দিই এবং মাদক বিরোধী অভিযান থেকে বিভিন্ন কাজ আমরা করি। আর এজন্য অনেকেই আমাদেরকে শত্রু মনে করে।

সরকার বিষয়গুলো (নিরাপত্তার) জানে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবিষয়ে খুবই আন্তরিক। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে মনে হয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে- যোগ করেন মাহফুজ।

উল্লেখ্য, গত বুধবার মধ্যরাতে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি ভবনে ঢুকে হামলা চালায় দুষ্কৃতিকারীরা। ঘটনার পর পর তদন্তে নামে র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ দল। বৃহস্পতিবার দিনাজপুর ডিবি গোয়েন্দা পুলিশ ইউএনও’র বাসভবনের নৈশ প্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে এবং গোপন খবরের ভিত্তিতে বাকি পাঁচজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঘটনার তদন্তে এর মধ্যে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে এরইমধ্যে রংপুর বিভাগের ৫৮টি উপজেলায় ইউএনওদের নিরাপত্তায় ১০ জন করে অস্ত্রধারী আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এই ঘটনার পেছনে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

এদিকে এই ঘটনার পর বেরিয়ে আসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া তিনজনই যুবলীগের নেতা। তাদের তিনজনকেই এরমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে।

স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হয়রানি, মাদক সেবনের অভিযোগ আনায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ।

তিনি বলেন, তাদেরকে আর কখনও আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হতে দেয়া হবে না।

গতকাল এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই।

হামলার পর গতকাল ভোরের দিকে ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবা ওমর আলী শেখকে উদ্ধার করে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে মিসেস খানমকে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল ভর্তি করা হয়।

পরে মিসেস খানমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

গত রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর মিসেস খানমের জ্ঞান ফিরেছে বলে জানা গেছে।

অস্ত্রোপচার সফল হলেও মাথায় ৯টি গুরুতর জখম এবং একপাশে খুলি ভেঙ্গে যাওয়ায় পরিস্থিতি পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নয় বলে সাংবাদিকদের জানান হাসপাতালটির বিভাগীয় প্রধান জাহেদ হোসেন।