মানবজমিন : অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকান্ডে আত্নসমর্পণের পর আদালতের নির্দেশে গ্রেপ্তার রয়েছে টেকনাফ থানা থেকে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। আদালতের আদেশে জব্দ করা হয়েছে ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীসহ ৮জনের ব্যাংক হিসাব।

অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা দূর্নীতির মামলায় গা-ঢাকা দিয়েছে স্ত্রী চুমকি কারণ। এরপরও ওসি প্রদীপের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে কোথা থেকে, তা নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় প্রশাসন ও মামলার তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের।

তাদের প্রশ্ন, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার পরও প্রদীপের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের পেছনে বিপুল পরিমাণ টাকার জোগান দিচ্ছে কে? এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ কোন হদিস পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দুদকের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ।

তিনি বলেন, ওসি প্রদীপের পক্ষে আইনি সহায়তা দিতে গত ২৭ আগস্ট ঢাকার একজন ব্যারিস্টারের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে ৫ জন আইনজীবী ও ২ জন সহকারী কক্সবাজার যান। ১৫ দিন রিমান্ড শেষে গত ২ সেপ্টেম্বর আদালত প্রদীপকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়ার পর এসব আইনজীবী চট্টগ্রামে ফিরে আসেন।

আর ২৭ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ দিন দুই সহকারীসহ ৭ জন আইনজীবী কক্সবাজারের কলাতলি এলাকার ওয়েস্টিন হোটেলে অবস্থান করেন।

এই সময়ে তাদের ফি, থাকা-খাওয়া, যাতায়াতসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যয় হয়েছে ১২-১৫ লাখ টাকা। আর এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আসল কোথা থেকে। কেই বা এই অর্থের জোগানদাতা।

তিনি বলেন, গত ১৭ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণসহ ৮ জনের ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ)। গত ২৩ আগস্ট ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। এরপর গা ঢাকা দেয় চুমকি কারণ। এ অবস্থায় প্রদীপের পক্ষে ব্যয়ের অর্থ জোগানদাতা কে?

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। প্রদীপের পক্ষে কারা কিভাবে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছেন তাদের উৎস খোঁজা হচ্ছে।

দুদক সূত্র জানায়, প্রদীপকে জামিন করাতে ৭ দিন যাবৎ কক্সবাজারে অবস্থান করা পাঁচজন আইনজীবীর প্রত্যেককে এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া ছাড়াও প্রতিদিন একেকজনের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে ৫-৭ হাজার টাকা। আইনজীবীরা হলেন-অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা, মেজবাহউদ্দিন, মহিউদ্দিন, ব্যারিস্টার সাঈদ মঈনুল আহসান।

ওসি প্রদীপের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অর্থ ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা বলেন, ওসি প্রদীপ কারগারে থাকলেও তার জন্য আইনি লড়াইয়ে টাকা খরচের জন্য তার ভাই, আত্নীয়স্বজন ছাড়া আরও অনেক শুভাকাঙ্খী রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। তিনি মারিশবুনিয়ার একটি পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামি ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্নসমর্পণ করেন। পরে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়।

সিনহা হত্যার পর পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। এছাড়া হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও তিন এপিবিএন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে এলিট ফোর্সটি। এনিয়ে মোট ১৩ আসামি কারাগারে রয়েছেন।

অপরদিকে এই ঘটনায় টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। সাক্ষী অপহরণের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় পরে আরেকটি মামলা হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫টি মামলা হয়েছে। যার চারটি তদন্ত করছে র‌্যাব-১৫।

এদিকে ১৫ দিনের রিমান্ড শেষে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রদীপকে কক্সবাজার আদালতে উপস্থাপন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. খায়রুল ইসলাম। প্রদীপকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নতুন করে রিমান্ড আবেদনের আইনি সুযোগ না থাকলেও এদিন তার পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন আবেদন করেননি।