মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
চকরিয়ায় সার ডিলারের অনিয়মে ভোগান্তিতে রয়েছে একই ইউনিয়নের তিন হাজার কৃষক। তারা সবাই ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এ ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে পৃথক সাব ডিলার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তবে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাগজে-কলমে ডিলারশীপ থাকলেও বাস্তবে এর কোন অস্তিত্বই নেই।
কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষকের হাতের নাগালে সার ও বীজ রাখতে প্রত্যেক ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ডে ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে পৃথক ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু সরেজমিনে যাচাই করে এসব ওয়ার্ডে কোনপ্রকার সার ডিলারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বরং তাদের বিরুদ্ধে উঠে আসে অনিয়মের চাঞ্চল্যকর রহস্য।
খবর নিয়ে জানা গেছে, এ ইউনিয়নের প্রায় সবকটি ওয়ার্ডে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলারশীপ কাগজগুলো ভাড়া দেয়া হয়েছে। লাইসেন্স প্রাপ্ত দু’একজন ছাড়া বাকিরা কেউই এখন আর সার বিক্রি করছে না। কিন্তু তাদের থেকে কাগজপত্রগুলো চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নিয়ে ডুলাহাজারা ও মালুমঘাট বাজারে অনুুুুমোদন বিহীন ব্যাবসায়ীরা চড়া দামে সার বিক্রি করে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আওতাভুক্ত ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের খুচরা সার বিক্রেতারা হলো- ১নং ওয়ার্ডের চাবাগান গ্রাম (রিংভং ব্লক) এর মোক্তার আহমদের পুত্র আমিনুল ইসলাম, ২ নং ওয়ার্ড কাটাখালী গ্রাম (রিংভং ব্লক) এর আলী আকবরের পুত্র আব্বাস আলী, ৩ নং ওয়ার্ড চাবাগান গ্রাম (রিংভং ব্লক) এর মকবুল আহমদের পুত্র মোঃ ইদ্রিস, ৩ নং ওয়ার্ড মালুমঘাট গ্রাম (কাটাখালী ব্লক) এর আলী হোছনের পুত্র শামশুল আলম, ৪মং ওয়ার্ড উলুবনিয়া গ্রামের আলহাজ্ব উলামিয়া সিকদারের পুত্র মোঃ নাজেম উদ্দিন, ৫ নং ওয়ার্ড উত্তরপাড়া গ্রাম (ডুলাহাজারা ব্লক) এর নুরুল হকের পুত্র কায়েম উদ্দিন, ৬ নং ওয়ার্ড উত্তরপাড়া গ্রামের কালা কুমার দে’র পুত্র প্রকাশ কুমার দে, ৭ নং ওয়ার্ড মাইজপাড়া গ্রাম (পাগলিরবীল ব্লক) এর মরহুম নুরুল আবছারের পুত্র দিদারুল ইসলাম, ৮ নং ওয়ার্ড নুতন পাড়া গ্রাম (পাগলিরবীল ব্লক) এর হৃদয় রঞ্জন দেব’র পুত্র বিজয় নিশান দেব ও ৯ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের মৃত আকাম উদ্দিনের পুত্র আহমদ হোছাইন।
নিয়োগপ্রাপ্ত এসব খুচরা সার বিক্রেতারা তাদের ওয়ার্ডে খুচরা সার বিক্রয়ের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে দু’য়েকজন ছাড়া বাকি সবাই অন্যজনকে ডিলারশীপ কাগজপত্র চুক্তির ভিত্তিতে ভাড়া দিয়েছে। বর্তামানে গ্রামে কোনপ্রকার সার ডিলার নেই। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা। বাজার থেকে সার আনতে বস্তা প্রতি দুই’শ থেকে আড়াইশ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। অনেক সময় মহাসড়ক দিয়ে গ্রামে টমটম বা অটোরিক্সা নিয়ে সার পরিবহন করতে গিয়ে হাইওয়ে পুলিশের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ কৃষকদের।
এসব প্রতিকূল অবস্থা থেকে রেহাই পেতে তারা নির্ধারিত ওয়ার্ডে সার ডিলার স্থানান্তরে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষকরা। নতুবা নির্দেশ অমান্যকারী সার ব্যবসায়ীদের ডিলারশীপ বাতিল করে পুনরায় ডিলার নিয়োগের দাবী জানায় তারা।
কৃষকের পক্ষে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কামাল হোসাইনের পুত্র যুবলীগ নেতা মিনহাজ হোসাইন জিকু জানান, এসব অনিয়মের অভিযোগে ইতিপূর্বে উপজেলা প্রশাসন বরাবরে গণস্বাক্ষর সহ কৃষকরা অভিযোগ করেছিল। অভিযোগ তদন্তে সত্যতা প্রমান হলে নিয়োগকৃত ডিলারদের স্ব স্ব ওয়ার্ডে গিয়ে সার বিক্রয়ের নির্দেশ দেয়। কিন্ত রহস্যজনক কারণে জড়িতরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রশাসনের নির্দেশনাকে অমান্য করে। যারফলে কৃষি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে এসব ওয়ার্ড ভিত্তিক সার ডিলাররা।
এ ব্যাপারে ১নং ওয়ার্ডের আমিনুল ইসলাম সহ কয়েকজন ডিলার জানায়, ওয়ার্ডে সার বিক্রির কথা থাকলেও তারা বাজারে সার বিক্রি করা যাচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা সদুত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে ডুলাহাজারা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মিরাজ হোসেন অভিযোগের সত্যতা জানান। এ সম্পর্কে জড়িত ডিলারদের সরাকার নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী যার যার ডিলারশীপ নিয়ে নিজেদের ওয়ার্ডে সার বিক্রির কথা জানালেও তারা কোনপ্রকার কর্নপাত করেনি।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস.এম নাসিম হোসেন জানান, ওয়ার্ডে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার ওয়ার্ডেই সার বিক্রি করবে এটাই নিয়ম। ইতিপূর্বে কৃষকদের লিখিত অভিযোগের বিষয়টি আমি যোগদানের পূর্বে হতে পারে। তবে পরে এ সম্পর্কে একটু শুনছিলাম। এখন কৃষকদের স্বার্থে বিস্তারিত যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।