চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :

মোঃ ইরফান হোসেন। উচ্চতা যার ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। কর্ণফুলী শিকলবাহা এলাকার একপ্রতিভাবান ফুটবলার। খেলায় যার আগ্রহ দেখে বাবা মার স্বপ্ন ছিল পুরোটা ইরফান জুড়েই। ছেলে বড় হয়ে একদিন দেশের নামকরা ফুটবলার হবেন।

জানা যায়, ২০১০ সালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কালারপোল ক্রীড়া সংস্থার হাত ধরে মোঃ ইরফান হোসেনের পথচলা শুরু হয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ইস্পানি মহানগরী পাইওনিয়ার। পাশাপাশি রাফা ক্লাব। ২০১২ সালে নোয়াখালি ফুটবল একাডেমি থেকে গ্রামীণফোন ফেডারেশন কাপে অংশগ্রহণ। পরে ঢাকায় ১ম বিভাগ ফুটবল লীগে সানরাইজ স্পোর্টিং ক্লাবের সাথে দলবদল করেন। এভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল একজন ফুটবলার ইরফানের খেলার জীবনের সময় গুলো।

২০১৬ সালে ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। ঠিক আজ থেকে ৪ বছর আগে শহর থেকে ফুটবল খেলে গ্রামে ফিরছিলেন ফুটবলার ইরফান। সাম্পান যোগে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে সিএনজিতে উঠে মইজ্জ্যারটেকে যাচ্ছিলেন। পথে খুইদ্যারটেক মিল্কভিটা দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের সামনে ঘটে যায় মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘটনা।

দ্রুতগতিতে আসা সিমেন্ট বোঝাই তিন চাকা একটি গাড়িটির বাম্পারের সাথে আঘাত লাগে ইরফানের ডান পা। ধাক্কা দিয়ে সড়ক থেকে দূরে ফেলে দেয়। পরক্ষণে পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় ভটভটি নামক গাড়িটি।

স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে চমেক হাসপাতাল। ওখানে দুদিন রাখার পর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে স্থানান্তর। সেখানে ডাঃ জাহাঙ্গীর তুহিন-এর তত্বাবধানে ১১/১২দিন চিকিৎসা করার পর জানানো হয় ইরফানের ডান পায়ের হাঁড় ভেঙ্গে থেঁতলে গেছে। বেশ গুরুত্বর আঘাতপ্রাপ্ত অংশে পঁচন ধরেছে।

জানালেন যদি ডান পায়ের হাটুর উপরের অংশ পর্যন্ত খেটে ফেলা না হয় তাহলে পুরো শরীরে পঁচন বাড়বে। বহু চিন্তা করে ডাক্তারের পরামর্শে খেটে ফেলা হলো ইরফানের ডান পায়ের ৮০% অংশ। পা কাটার সাথে সাথে প্রতিভাবান এক খেলোয়াড়ের স্বপ্নেরও কবর হয়। একটি সড়ক দূর্ঘটনা ইরফানের সব স্বপ্ন, আশা-আকাংখা নিমিশেই শেষ করে দেয়। নেমে আসে জীবনে তাঁর হতাশা আর অন্ধকার।

এমনকি অনিচ্ছাসত্বেও বরণ করতে হল পঙ্গুত্ব জীবন। ভবিষ্যৎ তার অনিশ্চিত এক জীবনের দিকে পা বাড়ায়। এমন ঘটনা কেবল ইরফানের জীবনেই নয়; প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দূর্ঘটনা হচ্ছে। মারা যাচ্ছে মানুষ। আবার অনেকেই আহত হচ্ছেন। স্বজনেরা হারাচ্ছে তাদের প্রিয়জনকে। কেউ বা মেনে নিচ্ছে ইরফানের মত পঙ্গুত্ববরণ বরণ।

ইরফানের পরিবারে ছিলো বাবা-মা, বড় দু’বোন ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছোট্ট সুখের সংসার। দূর্ঘটনার ৪ মাস আগে ইরফান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তিনি। সাজানো–গোছানো রাজত্বে বাবা ছিলেন গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মা গৃহিনী।

ঘটনার আগে ইরফান ফুটবল খেলার পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছিল বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ (৪ সেমিস্টার)। আর বেশিদুর এগুতে পারেননি। ডান পা হারালো ইরফান এখন পেশা হিসেবে বেছে নিলেন কবুতর আর মুরগী পালন। কোন রকমে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা।

৪ বছর ধরে তিনি অমানবিক কষ্টে রয়েছেন। কোন রকমে সংসার চলে তাঁর। কিন্তু টান পোড়ানোর সংসার। ইরফান দীর্ঘদিন যাবত ফুটবল নিয়ে মাঠে সরব থাকলেও; বর্তমানে
পঙ্গু হয়ে বাসায় বন্দি রয়েছেন। মানবিক বিবেচনায় বহু ক্রীড়া সংস্থা ও সংগঠনের কাছে ধর্না দিয়েও কোন সাহায্য সহযোগিতা তিনি পাইনি। কিছু মানুষ পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেও সে রকম ভাবে কেউ এখনো এগিয়ে আসেন নি।

চট্টগ্রাম আবাহনী লিঃ সাবেক কোচ মোঃ কাসেম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যখনি ইরফান একজন ভালো ফুটবলার হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন তখনিই সে দূর্ঘটনায় পতিত হলেন। আজ যদি কিনি খেলতেন পারতেন অবশ্যই জসিমের চেয়েও একজন ভালো খেলোয়াড় হতেন। ইরফানের এমন দুঃসময়ে আমাদের সকলের পাশে দাঁড়ানো উচিত।’