যুগান্তর :

(সিনহা হত্যা প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপির অভিমত)

সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম বলেন, সিনহা হত্যার ঘটনাটি অত্যন্ত গর্হিত। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একবার শুরু হলে এর লাগাম টেনে ধরা খুব মুশকিল। খারাপ লোক মারলাম, কি ভালো লোক মারলাম- এটা বড় কথা নয়। যে কাজটি হয়েছে সেটি অবৈধ। এটি একটি জঘন্য ও বিরাট অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যে ধারণা তৈরি হয়েছে সেটি মস্ত বড় ভুল ধারণা। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যখন সীমা লঙ্ঘন করে তখন এর রাশ টেনে ধরা যায় না। সিনহা হত্যার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিছু কিছু পুলিশ অফিসার দানবে পরিণত হয়েছে। তারই পরিণতিতে এ ঘটনা। সুতরাং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একেবারে বন্ধ করা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিরো টলারেন্স (শূন্যসহিষ্ণু) নীতির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর করা হয়নি। সিনহা হত্যার ঘটনাটি শুধু গণতন্ত্র ও মানবতার বিরুদ্ধেই নয়, এটি পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিকে কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন করেছে। শুধু একটি ঘটনাই নয়, এরকম বহু ঘটনা আছে। অন্য ঘটনাগুলো রাজনৈতিক কারণে সামনে আসেনি। মেজর সিনহা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য হওয়ায় বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে।
আবদুল কাইয়ুম বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান নয়। এটা দানব সৃষ্টি করে। পরে সে দানবকে আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তিনি বলেন, সিনহা হত্যার ঘটনায় শুরুতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের লক্ষ্য করে সিনহা অস্ত্র তাক করেছিলেন। তাই আত্মরক্ষার জন্য তারা (অভিযুক্ত পুলিশ) গুলি ছুড়েছে। কিন্তু তাদের এ বক্তব্যকে ঘিরে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কারণ আত্মরক্ষার জন্য গুলি করলে এক-দুটি গুলিই যথেষ্ট ছিল। তাই জড়িত পুলিশ সদস্যদের বক্তব্যকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। অতীতে আমরা দেখেছি, সেখানে একজন কাউন্সিলরকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে? অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুম বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর সিনহার সহকর্মী, সিনহার ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে পুলিশ একটি জঘন্য গর্হিত কাজ করেছে। এটা কোনো নিয়মনীতিতে পড়ে না। পুলিশের এ আচরণ কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা রক্ষক। তারা নিরপেক্ষ থাকবে। কিন্তু সারা দেশে বাহিনীর কিছু কিছু পুলিশ সদস্যের আচরণে মনে হচ্ছে, তারা একটি পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার কোনোটিই সঠিকভাবে হয়নি। তাদের কাজগুলো রহস্যে ঘেরা। যারা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন আবদুল কাইয়ুম। পুলিশে যেসব নিবেদিতপ্রাণ কর্মী রয়েছেন তাদের স্বার্থেই সিনহা হত্যায় দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কিছু লোকের জন্য পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক এটা কাম্য নয়। তাই বাহিনীতে এখনই শুদ্ধি অভিযান চালানো জরুরি হয়ে পড়েছে। বাহিনীতে আমূল সংস্কার আনতে হবে। প্রত্যেকটি কাজের জন্য পুলিশ সদস্যদের জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। পুলিশ বাহিনীতে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সবার আগে এটা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ব্যবস্থা দৃশ্যমান হতে হবে। অন্যায় করলে শুধু তাকে ক্লোজ বা সাময়িক বরখাস্ত করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশ কোনো অন্যায় করলে তারা তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করবেই। এ জন্য পুলিশের ওপর নজরদারি রাখতে অন্য সংস্থাকে নিয়োজিত রাখতে হবে।