ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী :

মহেশখালীতে বাড়ির ভিটার সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশীদের হাতে খুন হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর সিদ্দিকীর ছেলে মনোয়ার কাওসার সিদ্দিকী রুবেল এর হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন,
খুনিরা আমার ছেলেকে হত্যারপর আমাদেরকে বাড়ি ছাড়া করেছে। আবার মিথ্যা মামলা দিয়েও হয়রানি করছে। ছেলে হত্যার দুই মাস অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত একজন আসামীও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিদের অব্যাহত হুমকির মুখে এখন আমার পুরো পরিবারের সদস্যরা বাড়িঘর ত্যাগ করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বসবাস করছি।
গতকাল ২৬ আগস্ট মহেশখালী ‍উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এ বিকাল সাড়ে ৩টায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিহত রুবেলের মা-বাবাসহ পুরো পরিবারের সদস্যরা এবং মহেশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত রুবেলের মা মাসুদা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ আমার ছেলে হত্যার প্রায় দুইমাস অতিবাহিত হলেও কোন আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ আসামীরা প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। হত্যা মামলা আপোষ না করায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে এমন খবরও পাঠাচ্ছে। অথচ সেখানে পুলিশ নিরব। ছেলে হত্যার পর আসামীদের ভয়ে জাগিরাঘোনার বাসায় থাকতে পারছিনা। এখন থাকতে হচ্ছে ২০ কি:মি: দূরে কালারমারছড়ার বাসায়। আমি আমার ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত রুবেলের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর সিদ্দিকী বুকফাটা আহাজারি করে বলেন, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে না পারলেও অন্তত ছেলের খুনিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে মরতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহত রুবেলের পিতা মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর ছিদ্দিকী, মাতা মাসুদা বেগম , মহেশখালী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সালেহ আহমদ, সাবেক উপজেলা কমান্ডার আমজাদ হোসেন, ডেপুটি কমান্ডার ফিরোজ খান, ডেপুটি কমান্ডার ডা. সলিম উল্লাহ খান।
উল্লেখ্য গত ২৪ জুন সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলার পূর্ব জাগিরাঘোনার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সিরাজ, আলম পাশা, জাহাঙ্গীর আলম, শাহ আলম, আবু বক্কর, রাশেদ সহ ১৫/১৬ জনের সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাড়ীতে ঢুকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর সিদ্দিকীর ছেলে মনোয়ার ছিদ্দিকী রুবেলকে মারাত্মক ভাবে আহত করে। পর দিন ২৫ জুন সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুবেল মারা যায়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ সরওয়ার কায়সার সোহেল বাদী হয়ে গত ২৭ জুন ১৬ জনকে আসামী করে মহেশখালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
সাবেক কমান্ডার আমজাদ হোসেন বলেন, হত্যা মামলা দায়েরের দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবধি একজন আসামি ধরা পড়েনি। খুনিরা যদি গ্রেফতার হতো তাহলে হত্যাকান্ড ঘটানোর পর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে এলাকা ছাড়া করার দুঃসাহস দেখাতে পারতোনা।
সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ফিরোজ খান বলেন, আসামীরা খুনের মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তিনি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, রুবেল হত্যার সঠিক বিচারের স্বার্থে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা উচিত। অন্যতায় পুলিশি কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
মামলার বাদী নিহত রুবেলের বাই সোহেল জানান, ঘটনার পর থেকে মামলা তুলে নিতে আসামীরা বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় পরিবার নিয়ে অন্যত্র বসবাস করছে। ভাই হত্যার দুই মাস পার হলেও কোন আসামীই গ্রেপ্তার করেনি থানা পুলিশ। এদিকে বার বার মামলা তুলে নিতে হুমকি দিতে থাকে আসামীরা। গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আসামীরা বাড়ীর সামনে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এসময় মারপিট করে খুন জখম করবে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসাবে বলে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় গত ৬ জুলাই মহেশখালী থানায় সাধারণ ডায়রী দায়ের করেন তিনি। যার ডাইরী নং- ২৪৪। বাদী তার ভাই রুবেলের খুনিদের অচিরেই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।