সিবিএন ডেস্ক:
অপরাধ প্রবণতা থেকে রোহিঙ্গাদের দূরে রাখতে তাদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কাজে নিয়োজিত রাখার সুপারিশ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। রোহিঙ্গাদের জন্য খেলাধুলাসহ বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা, অলস বসিয়ে না রেখে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, হস্তশিল্পে প্রশিক্ষিত করে তাদের উৎপাদন কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে এতে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির একটি দল সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে এ সুপারিশ করেছে। সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির সভায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্প-৪ ও এক্স-২ ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা অভিযোগ ও অব্যবস্থাপনা দেখতে পান। সুপারিশে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করা, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করা, পরিবেশ দূষণ রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মারামারি, খুন, ইয়াবা চোরাচালান, নেশাজাতীয় অপরাধ রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও সতর্ক থাকা দরকার। পাশাপাশি নানা বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে অনীহা দেখানোয় কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মহীন এসব রোহিঙ্গা অলস বসে থাকায় নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। প্রকাশ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি গুম-হত্যায় নিজেদের শামিল করছে। এ ছাড়া তারা পরিবার-পরিকল্পনা না মানায় অপুষ্ট শিশুসন্তান জন্ম দিচ্ছে, যা উদ্বেগের। এ ছাড়া ক্যাম্প থেকে পালানো, পরিচয় গোপন করে ভোটার হওয়াসহ নানা অপরাধে সহজেই জড়িয়ে পড়ছে তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকা বেড়েই চলছে। একের পর এক ঘটনায় শঙ্কা বাড়ছে ক্যাম্পে থাকা সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝেও। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসন। গত মার্চে এক রাতে বন্দুকযুদ্ধে আটজনের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাে র কারণে এক হাজার ২৭৩ রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি আছে। এ ছাড়া ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে ৭৩ জন।
উখিয়ার ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে বাস করছে নিবন্ধিত ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯১৩ রোহিঙ্গা। এরই মাঝে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে কিছু গ্রুপ। ক্যাম্পের সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহারায় থাকলেও অনিরাপদ হয়ে ওঠে ভেতরের চিত্র। ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকে দেশি অস্ত্র হাতে ২০ থেকে ২৫ সদস্য পাহারা দেয়। ক্যাম্পে সচ্ছল রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, ইয়াবার চালান, দেশের বিভিন্ন এলাকা ও সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাঠানোসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা। গৃহপালিত পশু, ফসল, ফলসহ স্থানীয়দের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি-ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত তারা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হত্যা ও নিপীড়নের মুখে সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ছিল সাত লাখের কাছাকাছি। তাদের বড় অংশই নারী ও শিশু। ইউনিসেফের এক তথ্য মতে, কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে প্রতিদিন গড়ে ৬০টি রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে।
সুপারিশে সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়কে বলেছে, যেভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্মহার বাড়ছে তা রোধ করা না গেলে সেখানে জনসংখ্যার বিস্ম্ফোরণ ঘটবে। মারামারি, খুন, নেশা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ারও সুপারিশ করেছে কমিটি। গোয়েন্দা সংস্থাসহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, জেলা প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে সমন্বয় ও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ জানানো হয়েছে।