তাওহীদুল ইসলাম নূরী

আজ ২৫ আগষ্ট ২০২০। রোহিঙ্গা সমস্যার তিন বছর পূর্তি হল। একে তো আমাদের ছোট্ট দেশ, তার উপর ২০১৭ সাল থেকে যুক্ত হয় ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গার বসতি। ১৯৮০ সালে আসা রোহিঙ্গারা আদৌ ফিরে নি । লোক দেখানো কিছুকে ফেরত নেয়া হলেও ‘পাঁচ লক্ষ মত মিশে আছে বাংলাদেশীদের সাথে’ এমন ধারণা রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে । যতই প্রত্যাবাসন চুক্তি হোক না কেন, কাজের কাজ কিছুই হয় নি । তাই,২০১৭ সালে যারা পালিয়ে এসেছে তারা কবে ফিরবে সেটা আজও সকলের কাছে অজানা ।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের সীমাহীন অত্যাচারে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল ঠিক। কিন্তু, এখানে ওরা শুধু নিজেরা নিজেরা নয় কথায় কথায় ঠুনকো ব্যাপারে আশ্রয়দাতা হওয়ার পরেও সংঘর্ষে জড়াচ্ছে বাংলাদেশীদের সাথে। দিনের পর দিন ক্রমবর্ধমান হারে রক্তারক্তি,খুন,ডাকাতি,চোরাচালান,ধর্ষণ,মাদক পাচারসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

কক্সবাজারের প্রশাসনের মতে বাংলাদেশীদের খুন ছাড়াও তাদের নিজেদের হাতে নিজেদের মধ্যেও খুনের ঘটনা ঘটেছে গত তিন বছরের বিভিন্ন সময়ে। যেখানে খুনের পরিমাণও রেকর্ড সংখ্যক এবং বিভিন্ন অপকর্মের কারণে হাজারের অধিক মামলা হয়েছে এদের বিরুদ্ধে। সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় গত বছরের ২৬ আগষ্ট একটি এনজিওর সহায়তায় টেকনাফের একটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জন্য ৬০০০ দেশীয় অস্ত্র সরবরাহের চিত্র দেখে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্সন কার্যক্রমে এনজিওগুলোর বাঁধা এবং ইন্ধন রয়েছে বলে যে জনরব আছে সেটা এরকম কয়েকটি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আরও বেশি স্পষ্ট হয় আমজনতার মাঝে।

নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সংস্থা,সংবাদ মাধ্যম এবং ব্যক্তির তথ্য মতে শুধুমাত্র আইন শৃঙ্খলা নয় প্রাকৃতিক,অর্থনৈতিক,সামাজিকসহ কক্সবাজারের সমকালীন পরিবেশের সর্বত্র বিরুপ প্রভাব পড়ছে এদের কারণে। কক্সবাজারের স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো তো আছেই, জাতীয় সংবাদপত্রগুলোতে চোখ বুলালেও প্রায় প্রতিদিনই আমরা রোহিঙ্গাদের এমন সংবাদ দেখতে পাই।

শুধুমাত্র গত তিন বছরে বন ও পাহাড় কেটে রোহিঙ্গারা নিজেদের বসতি গড়ে তোলায় কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সৃজিত আর প্রাকৃতিক বন এই দুই রকম বনের ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৬৫০০ একর বন । একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় এই রোহিঙ্গাদের কারণে সৃজিত বন,প্রাকৃতিক বন এবং জীববৈচিত্র্যের সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। যা অর্থের মূল্যে হিসাব করলে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে । এখানেই শেষ নয়। পাহাড় কেটে ওদের জন্য কিছুদিন পর পর কখনো ক্যাম্প ইনচার্জ, কখনো পুলিশ ক্যাম্প কিংবা বিভিন্ন সংস্থার অফিসের জন্য অবকাঠামো তৈরী হচ্ছে। যা বন ও পরিবেশের জন্য ব্যাপক হুমকিস্বরুপ।

যদি রোহিঙ্গারা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে তবে কক্সবাজার বিশেষ করে উখিয়া
-টেকনাফের বনভূমি ও বনজ সম্পদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে । আমরা তাই এই রোহিঙ্গা সমস্যার অতিদ্রুত এবং স্থায়ী সমাধান চাই । লোক দেখানোর জন্য নয়,মিয়ানমার সরকারের উপর বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সকল দেশ ও জাতিসংঘসহ আলোচিত সংগঠনগুলো থেকে জোর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নানান প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আসা সকল রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা হোক।
জয় হোক মানবতার।

লেখকঃ আইন বিভাগ (অধ্যয়নরত), আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
শাহারবিল সদর, চকরিয়া, কক্সবাজার।