শ্যামল রুদ্র,খাগড়াছড়ি :

খাগড়াছড়ির রামগড় লাগোয়া উত্তর ফটিকছড়ি ও মিরসরাইয়ের করেরহাট বনরেঞ্জের অধীন সরকারি রিজার্ভ ফরেস্টের কাঠ অবাধে পাচার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাত-দিন সবসময়ই চলছে বন নিধনের এ অশুভ তৎপরতা। অথচ করেরহাটে রয়েছে একটি বনজদ্রব্য পরীক্ষণ রেঞ্জ কাম ষ্টেশন কার্যালয়। অভিযোগ রয়েছে, বন কর্মকর্তাদের অবৈধ প্রক্রিয়ায় ম্যানেজ করে বাইরে কাঠ পাচার করছে সিন্ডিকেটভুক্ত দুষ্ট চক্রগুলো। স্থানীয়দের অভিযোগ,বনদস্যূদের সাথে গোপন আতাঁত রয়েছে এখানে কর্মরত বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে।

এদিকে,গত ৩১ জুলাই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মহাসড়কের কমর্ফোট হাসপাতালের সামনে থেকে ৮ পিস সেগুন কাঠসহ একটি পিক-আপ (ফেনী ন-১১-০৬-২৪) আটক করে স্থানীয়রা। এসময় ওই পিক-আপের চালক কাঠগুলো করেরহাটের জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বলে জানান।

করেরহাট বনরেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেঞ্জের আওতায় ১২ হাজার ৮৯ একর বন ভূমি রয়েছে। এই বনে সেগুন, আকাশমনি, গামারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত পাচারের সময় প্রায় ৫শত ঘন ফুট কাঠ জব্দ করেছেন বন কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে ৩৫৭.৯৫ ঘন ফুট সেগুন, ৯৯ ঘন ফুট জ্বালানি কাঠ ও ৬ পিচ আকাশমনি। এছাড়া সরকারি সংরক্ষিত বনের গাছ কাটা সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ১০টি। সর্বশেষ চলতি মাসের ১ তারিখে জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করে বন বিভাগ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জামাল উদ্দিনকে সাথে নিয়েই বনে অভিযান চালায় কর্মকর্তারা। অথচ এই বনদস্যূই কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাঠ পাচারের খবর রয়েছে এলাকায়। জানা যায়,রাত-দিন সব সময়ই সরকারি সংরক্ষিত বনের মূল্যবান কাঠ কেটে পাচার করা হয়। বন বিভাগের লোকজনের নাকের ডগায় কাঠ কাটা হলেও এতদিন এই পাচারকারী ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। জামাল উদ্দিনের কাঠ পাচারে সম্পৃক্ত থাকার একটি ভিডিও রের্কড সম্প্রতি সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।

সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, করেরহাট রেঞ্জের অধীন কালাপানি, সাইবেনিখিল, নয়টিলা মাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। এখানে আছে, সেগুন, মেহগনি, আকাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। কিন্তু বনদস্যুদের সিন্ডিকেট রাত-দিন সবসময় মূল্যবান এই গাছগুলো কেটে নিচ্ছে। অথচ নয়টিলা মাজারের সাইবেনিখিল এলাকা থেকে আসার পথেই রয়েছে করেরহাট বন বিভাগের চেক পোষ্ট। এই চেকপোষ্ট গলিয়ে কিভাবে অবৈধ কাঠবাহী ট্রাকগুলো আসা-যাওয়া করে তা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন সাংবাদিকদের বলেন, বনজ সম্পদ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বন বিভাগের উচিত বেশি-বেশি তদারকি বাড়ানো।

জানতে চাইলে, করেরহাট ফরেষ্ট চেক ষ্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নইমুল ইসলাম বলেন, এ সড়কে যাতায়তকারী সকল কাঠের গাড়ি চেক করা হয়। বনদস্যূদের সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তবে জামাল উদ্দিন সাহসী হওয়ায় টহলের সময় মাঝে মধ্যে তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।

করেরহাট রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এজেএম হাসানুর রহমান জানান, খবর পাওয়ার সাথে সাথেই পাচাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি। বর্তমানে টহল ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।