শাহেদ মিজান, সিবিএন:

পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে আরো পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় বন্দুকযুদ্ধের নামে টেকনাফের হ্নীলার সাদ্দাম হোসেন নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ এনে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার মামলায় গ্রেফতার টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বিকাল পৌনে ৪টায় নিহত সাদ্দাম হোসেনের মা গুল চেহের এর দায়ের করা ফৌজদারী এজাহার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলা হিসেবে রুজু করেছেন। আদালতের বিচারক হেলাল উদ্দীন ফৌজদারী এজাহারটি আমলে নিয়ে তা তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বাদি পক্ষের আইনজীবি এড. ইনসাফুর রহমান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

মামলায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানকে প্রধান আসামী ও ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২নং আসামী করা হয়েছে। মোট ২৮ জন আসামীর মধ্যে ২৭ জনই পুলিশের সদস্য। অন্যজন হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নূরুল আমিন।
এজাহারে বাদি অভিযোগ করেন, গত ৪ জুলাই টেকনাফ হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানের একদল পুলিশ হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার মৃত সুলতান আহামদ প্রকাম বাদশার পুত্র সাদ্দাম হোসেন ও তার ভাই জাহেদ হোসেনকে বাড়ির অদূরে রাস্তা আটক করে নিয়ে ফাঁড়িতে যায়। তাদের ছাড়িয়ে আনতে ফাঁড়িতে যান বাদি (মা) গুলচেহের।

কিন্তু তাদের ছেড়ে দিতে সম্মত হলেও ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান। না দিলে দুই ছেলের মৃতদেহ দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে পাঁচ লাখ টাকায় উভয়ের মধ্যে রফা হয়। পাঁচ টাকার মধ্যে একই দিন তিন লাখ সরাসরি হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানের হাতে দেন বাদি গুলে চেহের। বাকি দুই লাখ পরদিন মশিউর রহমানের কথা মতো তার পাঠানো বাহক ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নুরুল আমিনকে দেন।

বাদি এজাহারে আরো জানান, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান পাঁচ লাখ টাকা গ্রহণ করার পর ৬ জুলাই দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহেদ হোসেনকে একটি মামলা দিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দেয় ।  কিন্তু ৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে থেকে ৩০০ গজ দূরে এনে সাদ্দাম হোসেন ও অন্য একজনকে গুলি করে পুলিশ। এতে গুরুতর আহত সাদ্দাম হোসেন। পরে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বাদি গুল চেহের এজাহারে দাবি করেন, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির  ইনচার্জ মশিউর রহমান, সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও মামলার তিন নং আসামী হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়োজিত  আরিফুর রহমানের পরামর্শ ও নির্দেশক্রমে অন্যান্য আসামীরা সবাই যোগসাজস হয়ে সাদ্দাম হোসেনকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছেন। সাদ্দামকে মারার কিছুদিন আগে  তাদের বাবা সুলতান আহামদ প্রকাশ বাদশাকেও পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছে বাদি এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

কিছুদিনের ব্যবধানে স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বাদি গুল চেহের। অন্যদিকে এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নিয়মিত হুমকি দিয়েছে পুলিশ। তাই মামলার আবেদন করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন বাদি গুল চেহের।

বাদি পক্ষের আইনজীবি এড. ইনসাফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‍সকাল ১১টার দিকে আদালতে মামলার জন্য ফৌজদারি আবেদনটি করা হয়। তখন আদালত শুনানী জন্য বিকাল ৩টা সময় ধার্য্য করেন। সে মতে বিকাল ৩টায় শুনানী শুরু হয়ে শেষে পৌনে চারটায়। শুনানীতে শেষে আদালত আবেদনটি হত্যা ও চাঁদাবাজি ধারায় মামলা হিসেবে নিয়ে তদন্তের জন্য সিআইডিকে ন্যস্ত করেন। সিনিয়র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্যও আদেশ আদালত।