মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা ৩ আসামির মধ্যে পুলিশ বাহিনী থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া লিয়াকত আলী এবং নন্দ দুলাল রক্ষিতকে কারা ফটকে ৭ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। সোমবার ১৭ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঘটনা সম্পর্কে তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়। মাঝখানে বেলা ২টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত মধ্যহ্ন ভোজের বিরতি দেওয়া হয়েছিলো। বিষয়টি কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ মোকাম্মেল হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
জেল সুপার আরো জানান, সন্ধ্যা ৭টার পর লিয়াকত আলী এবং নন্দ দুলাল রক্ষিতকে কারা অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সময়ের অভাবে বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এর বক্তব্য নিতে পারেননি তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার ১৮ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ এর বক্তব্য নেওয়া হবে।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে, সোমবার ১৭ আগস্ট কারা ফটকে বক্তব্য নেওয়া লিয়াকত আলী ও নন্দ দুলাল রক্ষিত খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। যার জন্য তারা ২ জনকে দীর্ঘ ৭ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
এছাড়া হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী পুলিশের বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, সন্দেহজনক আসামি টেকনাফের বাহারছরার মারশবনিয়া এলাকার নাজিম উদ্দিন নাজু’র পুত্র নুরুল আমিন, নজির আহমদের পুত্র নিজাম উদ্দিন ও জালাল আহমদের পুত্র মোহাম্মদ আয়াছেরও বক্তব্য নেওয়া হবে মঙ্গলবার ১৮ আগস্ট। নির্ভরযোগ্য সুত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সুত্র মতে, মঙ্গলবার ১৮ আগস্ট ৮জনের বক্তব্য নেওয়া যদি সম্ভব না হয়, বুধবার ১৯ আগস্ট বাকীদের বক্তব্য নেওয়া হবে। ৮জনের মধ্যে প্রদীপ কুমার দাশ ছাড়া বাকী ৭জন আসামীকে রিমান্ড করার জন্য কারাগার থেকে গত ১৪ আগস্ট মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ হত্যা মামলার আইও সিনিয়র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম এর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মামলার আইও যেহেতু আদালতের একটি অংশ, তাই আইও এর সহয়তায় রিমান্ডে থাকা এই ৭ জন আসামীর বক্তব্য নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন সাক্ষীর পূর্বের দেওয়া বক্তব্যের সাথে সম্পৃক্ত আরো কিছু তথ্য জানার জন্য দ্বিতীয় দফায় আগামী ১৯ আগস্ট বুধবার তাদের আবারো বক্তব্য নেওয়া হবে। একইদিন সাক্ষীদের বক্তব্য নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে জানান সুত্রটি।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (যুগ্মসচিব) মো. মিজানুর রহমান আরো বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের বেঁধে দেওয়া সময় আগামী ২৩ আগস্ট রোববারের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার টার্গেট নিয়ে তদন্ত কমিটি পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটিকে দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী, ঘটনার উৎস, ঘটনার কারণ, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে।

গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (যুগ্মসচিব) মো. মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করে গঠন করে দেওয়া তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, লে. কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ, অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ জাকির হোসেন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহা. শাজাহান আলি।

গত ৩১ জুলাই খুন হওয়া মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের বড়বোন ও মোঃ শামসুজ্জামানের সহধর্মিণী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস (৪২) বাদী হয়ে চাকুরী থেকে বরখাস্ত হওয়া প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী, নন্দলাল রক্ষিত, সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া সহ ৯জনকে আসামী করে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ৫ আগস্ট সকালে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানার মামলা নম্বর : ৯/২০২০, জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ)।