ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :

দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থীর কাছে আকর্ষণীয় স্থান প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বনাঞ্চলে গড়ে তোলা দেশের একমাত্র কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মানুষের প্রবেশ বন্ধ রয়েছে প্রায় পাঁচমাস। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনার আলোকে দীর্ঘদিন ধরে পার্কটি বন্ধ থাকলেও বিরাট সফলতা এসেছে বিভিন্ন পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণির প্রজননের ক্ষেত্রে। বিরল প্রজাতির প্রাণির ঘরেও এসেছে নতুন অতিথি।

পার্কের দায়িত্বলীলরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় যদি বছরের ৬ মাস একনাগাড়ে বন্ধ রাখা যায় তাহলে এসব প্রাণির প্রজননের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে এই সাফারি পার্ক। যার সুফল ইতোমধ্যে এসেছে এই পার্কে। সেই হিসেবে আরো একমাস যদি এই পার্কে পর্যটক-দর্শনার্থী প্রবেশ না করে তাহলে প্রজননের ক্ষেত্রে ষোলকলা পূর্ণ হবে পার্কটির।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্কের অভ্যন্তরে তথা বিভিন্ন বন্যপ্রাণির বেষ্টনীর কাছে মানুষের বিচরণ না থাকায় পার্কে থাকা বিভিন্ন বন্যপ্রাণি ও পশু-পাখির ঘর আলোকিত করে এসেছে নতুন অতিথি। তন্মধ্যে বন্ধকালীন সময়ে বাচ্চা প্রসব করেছে বিরল প্রজাতির আফ্রিকান ওয়াইল্ডবিষ্ট, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ, মায়া হরিণ, বানর, বিলুপ্ত প্রায় কালিম পাখি, সাধারণ প্রজাতির ময়ূঁরসহ বিভিন্ন পশু-পাখির।

কর্র্তৃপক্ষ আরো জানায়, এই ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েকমাসের মধ্যে বাঘের প্রজননও বৃদ্ধি পাবে। যার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বাঘ ও সিংহ বেষ্টনীতে।

সরজমিন পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় পাঁচমাস ধরে পর্যটক-দর্শনার্থীর প্রবেশ না থাকায় পার্কের অভ্যন্তরে বিরাজ করছে সুনশান নিরবতা। উম্মুক্ত থাকাকালীন পার্কের ভেতর যেভাবে ময়লা-আবর্জনার দেখা মিলতো বর্তমানে সেসবের দেখা নেই। শুধুমাত্র হরেক রকমের পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণির চিৎকার-চেঁচামেচিতেই মুখর হয়ে রয়েছে পার্কটি। মানুষের বিচরণ না থাকায় নতুন করে গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন রকমের গাছ-গাছালি ও লতাগুল্ম। এসব কারণে পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণির জন্য বর্তমানে নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি।

দিদারুল আলম, মোরশেদসহ পার্কের একাধিক কর্মচারি দৈনিক আজাদীকে বলেন, অনেকটাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে সাফারি পার্কের পরিবেশ। গগণচুম্বি মাদার ট্রিসহ (গর্জন) পার্কের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ-গাছালির সাথে আপন মহিমায় বেড়ে উঠছে রকমারী ফুল, লতাগুল্ম। সুনশান পরিবেশে সময় কাটাচ্ছে বিভিন্ন পশু-পাখি ও তৃণভোজী বন্যপ্রাণি। লেকের পানিতে খেলা করছে সাদা বক, বেষ্টনীতে পানিতে সাঁতরাচ্ছে জলহস্তি। মানুষের শব্দ শুনলেই এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির হরিণের দল মুহূর্তের ঢুকে পড়ছে জঙ্গলের ভেতর। আর বানরের দল তো পুরো পার্ক জুড়েই করছে রাজত্ব। আফ্রিকান জেব্রার দল বিশাল বেষ্টনীতে সদলবলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাঁচার ভেতর সময় কাটছে বাঘ ও সিংহের। বাঘ এবং সিংহ বর্তমানে ফুরফুরে মেঁজাজেই রয়েছে। এতে প্রজননের বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারি তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এই পার্কটির অবস্থান একমাত্র প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন-জঙ্গলের পরিবেশে। এটি শিক্ষা, গবেষণা, চিত্ত বিনোদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশ তথা ভারতের কানহা ন্যাশনাল পার্কের মতো যদি বছরের ৬ মাস এই পার্কটিও বন্ধ রাখা যায় তাহলে এখানে বিলুপ্ত বন্যপ্রাণি ও পশু-পাখির প্রজননে বিরাট সফলতা আসবে। ইতোমধ্যে বন্ধ থাকা পাঁচমাসে অনেক প্রাণি ও পশু-পাখির ঘর আলোকিত করে এসেছে নতুন অতিথি।

৬ মাস বন্ধ রাখার ব্যাখ্যা দিয়ে পার্ক কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘পার্কটি মূলত প্রতিষ্ঠা হয়েছে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য। এর পর চিত্ত বিনোদনের বিষয়টি রাখা হয়েছে। কারণ পুরো বছরই যদি সাফারি পার্কে মানুষের বিচরণ থাকে তাহলে প্রজননের ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধতা কাজ করে। তাই বিলুপ্ত প্রাণির প্রজনন বাড়ানোর ক্ষেত্রে এর বিকল্প নেই। সেই হিসেবে চলতি বছর আরো একমাস যদি এই পার্ক বন্ধ রাখা হয় তাহলে বিলুপ্ত প্রাণির প্রজননে সফলতা হাতছানি দেবে।’

অবশ্য করোনাকালীন দীর্ঘসময় বন্ধ থাকার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল পর্যটন স্পট আজ সোমবার থেকে খুলে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সেই ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কখন খুলছে, জানতে চাইলে পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সাফারি পার্কটি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে প্রায় পাঁচমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। তাই ঠিক কখন এই সাফারি পার্ক পর্যটক-দর্শনার্থীর জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে সেই নির্দেশনা এখনো আসেনি। হয়তো আরো একমাস বন্ধ থাকবে এই পার্ক। এর পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়।’ ##