এম.এ আজিজ রাসেল :
গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ এমপি বলেছেন, ‘সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠনই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য। সাধারণ মানুষের জীবনধারণ উপযোগী শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর লক্ষ্য। এই দর্শন ও আদর্শকে ধারণ করে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এগিয়ে যাবেই। প্রধানমন্ত্রী অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ গঠনের কাজে যেভাবে আত্মনিয়োগ করেছেন, তাতে আমাদের সবার সহযোগিতা করতে হবে। ’
সোমবার (১৭ আগস্ট) সকালে জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত ‘আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন বলেই এ জাতির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আত্মপ্রত্যয় ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান এই মহান নেতা অন্যায়ের কাছে কখনোই মাথা নত করেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব, তাদের দুই পুত্র, দুই পুত্রবধূ ও শিশু শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দুসরেরা এখনও সক্রিয় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তারা মাথা চাড়া দিয়ে দাঁড়াতে না পারে।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ জাফর আলম, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক ৩ বারের সফল চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. শাহজাহান, পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ফরিদুল আলম চৌধুরী ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘ব্রিটিশ আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশ পুননির্মাণে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল চিরস্মরণীয়। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরে সেনাবাহীনি, নৌ-বাহিনী, বিমান বাহীনি, পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই লোক প্রশাসনের যাত্রা শুরু করেন। শিক্ষা ব্যবস্থা তিনি ঢেলে সাজিয়েছেন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে তার সুদুর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি বিশ^কে হতবাক করে।’
চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ জাফর আলম বলেন, ‘হত্যাকারীরা মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তার জানত না বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চকরিয়ায় ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৭৫ লাখ টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণার। সেখানে রয়েছে ২টি হল রুম। এই বঙ্গবন্ধু কর্ণারে প্রতিদিন দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে। তারা এখানে এসে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ আন্দোলনের মাস্টার সূর্য সেন, ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গর্ণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন ও ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর দেশ গড়ার ইতিহাস সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারছে। তিনি কক্সবাজারেও একটি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর স্থাপনের আহবান জানান।’
সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘কক্সবাজারের মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজর রয়েছে। কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর কক্সবাজারবাসীকে উপহার দিয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এগিয়ে যাচ্ছে। এই যাত্রায় তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন’।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। যিনি সারাজীবন নির্লোভ ও নির্মোহ থেকে বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। ২৫ মার্চের কাল রাতেও অদম্য সাহসিকতার সঙ্গে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। পদ-পদবির লোভ না করে বৃহত্তর লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি এগিয়ে গেছেন। তার আদর্শ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তপক্ষের নব নির্মিতব্য ভবনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ ও অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ প্রমূখ।
পরে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে আলোচনা সভার সমাপ্তি হয়।