মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা ১০ আসামির বক্তব্য নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। সোমবার ১৭ আগস্ট তাদের সাক্ষ্য নিতে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার), কক্সবাজারের জেল সুপার মোহাম্মদ মোকাম্মেল হোসেন, সিনহা মোঃ রাশেদ হত্যায় তাঁর বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এর করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (IO) র‍্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তদন্ত কমিটি হতে এ বিষয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (যুগ্মসচিব) মো. মিজানুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার ১৭ আগস্ট যাদের বক্তব্য নেওয়া হবে, তাদের মধ্যে ৩ জন যথাক্রমে টেকনাফ মডেল থানার বহিস্কৃত ওসি (১) প্রদীপ কুমার দাশ, পিতা-হরেন্দ্র লাল দাশ, বহিস্কৃত ইন্সপেক্টর (২) লিয়াকত আলী, পিতা-মৃত সাহেব মিয়া এবং পুলিশের দায়েরকৃত মামলার বাদী বহিস্কৃত এসআই (৩) নন্দ দুলাল রক্ষিত। এরা ৩জনকে কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপারের সহায়তায় জেল কোড অনুযায়ী কারা ফটকে এনে হত্যাকান্ড সম্পর্কে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করা হবে।

বাকী ৭ জন হলো, হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী পুলিশের বহিস্কৃত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, সন্দেহজনক আসামি টেকনাফের বাহারছরার মারশবনিয়া এলাকার নাজিম উদ্দিন নাজু’র পুত্র নুরুল আমিন, নজির আহমদের পুত্র নিজাম উদ্দিন ও জালাল আহমদের পুত্র মোহাম্মদ আয়াছ। এই ৭ জন আসামীকে রিমান্ড করার জন্য কারাগার থেকে গত ১৪ আগস্ট মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ হত্যা মামলার আইও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম এর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহবায়ক মো. মিজানুর রহমান বলেন, মামলার আইও যেহেতু আদালতের একটি অংশ, তাই আইও এর সহয়তায় রিমান্ডে থাকা এই ৭ জন আসামীর বক্তব্য নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক মো. মিজানুর রহমানের কাছে মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের টিমের সদস্য ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাহেদুর রহমান সিফাত ও শিপ্রা রানী দেবনাথ এর বক্তব্য নেওয়া হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে তারা ২ জনের বক্তব্য নিয়েই তদন্ত কমিটি বাকী সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া শুরু করেছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন সাক্ষীর পূর্বের দেওয়া বক্তব্যের সাথে সম্পৃক্ত আরো কিছু তথ্য জানার জন্য দ্বিতীয় দফায় আগামী ১৮ আগস্ট মঙ্গলবার তাদের বক্তব্য নেওয়া হবে। একইদিন সাক্ষীদের বক্তব্য নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (যুগ্মসচিব) মো. মিজানুর রহমান আরো বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের বেঁধে দেওয়া সময় আগামী ২৩ আগস্ট রোববারের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার টার্গেট নিয়ে তদন্ত কমিটি পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি আরো বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটিকে দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী, ঘটনার উৎস, ঘটনার কারণ, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে।

গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে গঠন করে দেওয়া তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, লে. কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ, অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ জাকির হোসেন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহা. শাজাহান আলি।

গত ৩১ জুলাই খুন হওয়া মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের বড়বোন ও মোঃ শামসুজ্জামানের সহধর্মিণী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস (৪২) বাদী হয়ে চাকুরী থেকে বরখাস্ত হওয়া প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী, নন্দলাল রক্ষিত, সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া সহ ৯জনকে আসামী করে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ৫ আগস্ট সকালে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানার মামলা নম্বর : ৯/২০২০, জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ)।

এদিকে, টেকনাফের বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে তদন্ত কমিটি রোববার ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে সাক্ষ্য নেওয়া ৯ জন ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।