মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে নেওয়া মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানকে হত্যার পর রামু থানা পুলিশের দায়ের করা মামলায় শিপ্রা রানী দেবনাথ জামিন পাওয়ায় আইনজীবীরা বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবীগণ এটাকে ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন।

৩১ জুলাই রাত্রে গ্রেফতার হয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারে থাকা শিপ্রা রানী দেবনাথ কারগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। বিষয়টি কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ মোকাম্মেল হোসেন নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রোববার ৯ আগস্ট বিকেল ৩ টার দিকে আদালত থেকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফ্লিম এন্ড মিডিয়া বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শিপ্রা রানী দেবনাথ এর জামিননামা কারাগারে পৌঁছে। অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারা ফটকে আাসা শিপ্রা রানী দেবনাথ এর অভিভাবকগণ তাকে নিয়ে যায় বলে জেল সুপার মোহাম্মদ মোকাম্মেল হোসেন জানিয়েছেন।

একটি ডকুমেন্টারি ফ্লিম তৈরি করতে আরো ৩ সদস্য সহ শিপ্রা রানী দেবনাথ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানের সাথে গত ৩ জুলাই কক্সবাজার এসেছিলেন।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে গত ৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ৯ টার দিকে যখন মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে খুন হন, তখন তাদের ডকুমেন্টারি ফ্লিম তৈরির টিমের অপর ২ সদস্য যথাক্রমে ঢাকার স্টামফোর্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শিপ্রা রানী দেব ও তাহসিন রিফাত নুর ছিলেন-হিমছড়ি ‘নীলিমা রিসোর্ট’ নামক একটি কটেজে। হিমছড়ি এলাকাটি ভৌগোলিকভাবে রামু উপজেলাতে হওয়ায় রামু থানার হিমছড়ি ফাঁড়ির পুলিশ খুনের ঘটনার পর পরই এসে শিপ্রা রানী দেব ও তাহসিন রিফাত নুর’কে হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্ট থেকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী নীলিমা রিসোর্ট থেকে ৫টি বিদেশি মদের বোতল, ১ লি: বাংলা মদ ও এক পোটলা গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

গত ৩১ আগস্ট রাত্রে শিপ্রা রানী দেব ও তাহসিন রিফাত নুর’কে গ্রেপ্তার করার পর পরই তাদের রামু থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাহসিন রিফাত নুর’কে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আর উদ্ধারকৃত মালামাল গুলো সহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রামু থানায় একটি মামলা রুজু করে শিপ্রা রানী দেব’কে গত ১ আগস্ট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। মামলা নং জিআর : ৩১১/২০২০ ইংরেজি (রামু)। একই সাথে মামলার আইও রামু থানার এসআই দীপংকর আসামি শিপ্রা রানী দেবের বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদনও করেছিলেন। শিপ্রা রানী দেবনাথ তখন থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট শিপ্রা রানী দেবনাথের জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত জামিন আবেদনটি ৯ আগস্ট শুনানীর জন্য রাখেন। আদালত নম্বর-১ এর বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন আজ রোববার ৯ আগস্ট জামিন আবেদনটির শুনানি শেষে শিপ্রা রানী দেবনাথকে ৫ হাজার টাকা বন্ডে পুলিশ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।

শিপ্রা রানী দেবনাথ এর পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীরা বলেছেন, তারা আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট এবং ন্যায় বিচার পেয়েছেন।

শিপ্রা রানী দেবনাথ এর জামিন হওয়া নিয়ে সাবেক পিপি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, প্রবীণ আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন,
“পরিস্থিতির শিকার নিরীহ ছাত্রী শিপ্রাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ায় জনসমক্ষে আইন-আদালতের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।”

একই বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেছেন, শিপ্রা রানী দেবনাথ এর জামিন স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বলিষ্ঠ উদাহরণ। যা বিচারঙ্গনে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেছেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় আসামীদের জামিন দেওয়ার এখতিয়ার থাকলেও আইনের স্বাভাবিক চর্চা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ জামিন আবেদন সাধারণত না মঞ্জুর করেন। দায়রা জজ অথাবা উচ্চ আদালতে এ জাতীয় মামলার আসামীদের জামিন হয়। শিপ্রা রানী দেবনাথ এর জামিন এক্ষেত্রে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এ জামিনে সুবিচারের সঠিক প্রতিফলন ঘটেছে।
ঢাকার স্টামফোর্ট ইউনিভার্সিটি সুত্র জানা গেছে, শিপ্রা রানী দেবনাথ গত ৮দিন আগেও অনলাইনে বিশ্বিবদ্যালয়ের পরীক্ষা দিয়েছে। ফটোগ্রাফার হিসাবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার হাজারাহাটি গ্রামের নব কুমার দেবনাথ এর কন্যা শিপ্রা রানী দেবনাথ। নব কুমার দেবনাথ বিজিবি’র একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। শিপ্রা রানী দেবনাথ ২ ভাই বোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ।