ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দিন


(করোনা বা মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশী সময় দিয়ে কাজ করতে পারে। নারীরা রান্নাঘর, সন্তান,সংসার সামলানোর ঝামেলা ও শারীরিক সংক্ষমতার দরুণ পুরুষের সমান সময় দিয়ে কাজ করতে পারে না।)
একটি সুখবর দিয়ে শুরু করতে চাই নার্সিংয়ে বিশ্বের সব দেশে নারী পুরুষ সকলের সমান অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে ।নার্সিং পেশায় আগ্রহী করতে নানা চমকপ্রদ সুযোগ সুবিধা ও দেয়া হচ্ছে।২০২০ সাল নার্স ও মিডওয়াইফ বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে এটিকে কেন্দ্র করে এ বছরের মধ্যে নার্সিং পেশায় পুরুষের অংশগ্রহন বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশ সেটাই করছে।
আমেরিকা এবছরের মধ্যে নার্সিং পেশায় পুরুষদের অংশগ্রহণ ২০℅করার জন উদ্যোগ গ্রহন করেছে। তবে এটি সত্যি যে নার্সিং শিক্ষার গোড়াপত্তন হয় নারী পেশা হিসেবে। তাই কোন দেশেই পুরুষরা তেমন আগ্রহী হননি এ পেশায় কাজ করতে।ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল( যিনি নার্সিংয়ের জনক) তিনিও বিশ্বাস করতেন নার্সিংটা মেয়েদের স্বভাগত বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ নার্স বললে মেয়েদের অবয়ব বা কোমলপ্রাণ এটি বোঝায়।তাই তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা নারীদের জন্য শুরু করেছিলেন। যুগ যুগ ধরে এ পেশায় পুরুষদের ক্যারিয়ার গঠন বা সংযুক্ত হওয়ার বিষয়টি উপেক্ষিত রয়ে গেছে।
১৯০১ সালে প্রথম নার্সিং কাউন্সিল আইন নিউজিল্যান্ডে হয়। Nosocomial শব্দটি ল্যাটিন শব্দ nosocomi যার অর্থ পুরুষ পরিচর্যা কারী।ঐতিহাসিকভাবে পুরুষদের এ পেশায় আগমন মহামারীকে কেন্দ্র করে।প্লেগ রোগের বিস্তার সময় ইউরোপে প্রথম পুরুষেরা প্রাথমিক সেবা দানকারী হিসেবে যোগদান করেন।তৃতীয় শতাব্দীতে প্যারাবোলানীর পুরুষেরা একটি হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন এতে নার্সিং সেবা প্রদান করতেন। চৌদ্দশত শতাব্দীতে এলেকজিয়ান নার্সরা সেন্ট গডস ব্রাদার হসপিটাল প্রতিষ্টা করেন রোমে।ক্রিস ক্যালভিন পৃথিবীর প্রথম পুরুষ নার্স। এভাবে নার্সিং পেশায় পুরুষেদের অার্বিভাব। পুরুষরা ধীরে ধীরে নিজকে নিয়োজিত করে।তবে এখনো অবধি অনেক দেশে নার্সিং পেশার পুরুষদের শতকরা হারে অনেক কম চায়নায় মাত্র ১%।
সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে ৩২%।

বাংলাদেশে এ হার অনেক প্রায় ৯.৪শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কতৃক মার্চ ২০১৯ সালে Gender equity in health workforce এই শিরোনামে বিশ্বের ১০৪ টি দেশে সমাজ ও স্বাস্থ্য কর্মীদের উপর একটি জরিপ চালানো হয় সেখানে দেখা যায় প্রায় ৭০%নারীই এ খাতে কাজ করেন।তারা আবার চিকিৎসক ও নার্সদের উপর পুরুষ ও নারীর সংখ্যার তুলনামূলক চিত্র প্রদান করেন।


মহামারীর সময় যতটা কম সংখ্যক নার্স কাজে লাগানো যায় তবে ততকম আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।সেজন্য মহামারী বা সংকটকালীন সময় যেমনঃ ঘুর্ণিঝড়,ভুমিকম্প, ভুমিধস,অগ্নিকাণ্ড,সড়ক দূর্ঘটনা বা দূর্ঘম এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে পুরুষদের সংযুক্ত করতে পারলে তারা নারীদের চেয়ে বেশী ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে পারে।মহামারীতে কর্মঘন্টা দীর্ঘক্ষন করলে জনবল বাঁচবে।অনেক সময় নারীরা সন্তানসম্ভবা,স্তন্যদানকারী,সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন। ফলে আপদকালীন সময়ে পুরুষ নার্সদের বেশি বেশি সম্পৃক্ত করতে পারলে আমরা এতগুলো স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারতাম।
আরেকটি বিষয়, অনেক পুরুষ রোগীরা পুরুষ নার্স দিয়ে আর নারীরা নারী নার্স দিয়ে সেবা নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।এক্ষেত্রে রোগীর পছন্দের বিষয়টি বিবেচনায় পুরুষ নার্সদের এ পেশায় আগ্রহী করা দরকার।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিশ্বের সবদেশে নার্সিং পেশায় পুরুষদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য নানা প্রদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশ এখনো ১০% কোটা রেখে দিয়েছে।
২০০৮ সালের ৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নার্সিং ও পরিদর্শন শাখা থেকে সরকারি সেবা ইনস্টিটিউট ও কলেজের নার্সিংয়ে ভর্তি সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করে। সেখানে এই কোর্সে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি সংক্রান্ত শর্তাবলী অধ্যায়ের ৮ নম্বর কলামে বলা হয়, সেবা ইনস্টিটিউট বা কলেজের মোট আসনের সংখ্যার অনধিক ১০ শতাংশ আসন পুরুষ প্রার্থী কর্তৃক পূরণ করা হবে। বাকি ৯০ শতাংশ ভর্তি করা হয় নারী শিক্ষার্থীদের দ্বারা।
ফলে অনেক পুরুষরা এ পেশায় আাসার সুযোগ পাচ্ছে না।উল্লেখ্য যে ভর্তি ক্ষেত্রে এই বিধানকে সংবিধানের ২৮ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এনিয়ে তৎকালীন সময়ে ভর্তি সুবিধা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট কোটা স্থগিতের আদেশও দেন যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।
পুরুষদের এ পেশায় আগ্রহী করতে
আমাদের একটি প্রস্তবনা হলঃ
১.নার্সিং শিক্ষার্থী ভর্তি নারী পুরুষ সমান সুযোগ রাখা।
২.আলাদা বিশেষায়িত হাসপাতালে পুরুষদের নার্সিং কোর্স যেমনঃ অর্থোপেডিক,সার্জিকাল নার্সিং,ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিং,ইমারজেন্সী নার্সিংও ডিজাস্টার নার্সিং ইত্যাদিতে সম্পৃক্ত করা।
৩.সংখ্যালঘু বিবেচনায় পুরুষদের আবাসন ও বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করা।
আসুন লিঙ্গবৈষম্য ভুলে নার্সিংয়ে নারী পুরুষ সবার সমান সুযোগ রাখি।
আমাদের স্বাস্থ্য সেবা সমুন্নত করি।

লেখকঃনার্সিং কর্মকর্তা ও সাবেক শিক্ষক চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল নার্সিং ইনস্টিটিউট,চট্টগ্রাম।
ইমেইলঃsyedahmedtanshiruddin@gmail.com