ডেস্ক নিউজ:

কক্সবাজার উখিয়া উপজেলার সোনার পাড়া মকতুল হোসেন প্রকাশ লাল মতু’র পুত্র আবু ছৈয়দ (৪০)প্রকাশ সন্ত্রাসী ফজলি ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

ওই সন্ত্রাসী ফজলি এখন সাগর উপকূলের চল্লিশ হাজার মানুষের আতঙ্কের নাম । সে উপকূলের সাধারণ মানুষের সাথে এমন কোন অপরাধ বাকী রাখেনি যার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নাই।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মাদক, মানবপাচার, জালিয়াতি, সাধারণ মানুষদের মারধর, ভূমিদস্যুতা, জালনোট ও হুন্ডির, স্কুলের জমি দখল, মানুষের দীর্ঘদিনের চলাচলের রাস্তা দখলসহ নানান রকম অপকর্মের হোতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা যায়, সন্ত্রাসী ফজলি দীর্ঘ সময়ধরে সুদের টাকা ও হুন্ডি এবং জালনোটের ব্যবসা করে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক বনে বর্তমান সময়ের ইয়াবা-ফেন্সিডিল ও ডায়াব্লো ১২পার্সেন্ট নামের মাদকের উপকুলীয় এলাকার প্রধান ডিলারশীপ গ্রহণ করেন।

সে মাদকের ডিলারশীপ নেয়ার পর থেকে এতো বেশি টাকা বানিয়েছে এ পর্যন্ত কক্সবাজার দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার চল্লিশ হাজার মানুষ তার কাছে বিভিন্ন রোষানলের শিকার হয়েছে।

সে এই মাদক গুলো থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে টেকনাফ হয়ে নিয়ে অাসেন তার পরিচিত রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে। পরে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লাই দিয়ে থাকেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন।

এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে অারো জানা যায়, ফজলি মাদকগুলো অামদানি করে প্রথমে তার সোনার পাড়ার বাড়িতে স্টক করে উখিয়ার বিভিন্ন দোকানে ৩০০ টাকা দামে বিক্রি করেন।

এমনকি এসব ডায়াব্লো মাদকটি নিয়ে অাসার সাথে সাথে সোনারপাড়া তহসিল অফিস সংলগ্ন বটগাছ তলায় সন্ধ্যা নামলে একটা মদের অাসরের অায়োজন করেন ফজলি সিন্ডিকেট।
সেখানে এই ডায়াব্লো মদটি তার পরিচিত লোকদের খাওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করেন বলে অভিযোগ অাছে ফজলির বিরুদ্ধে।

তার মদের অাসরের এক সদস্য এই প্রতিবেদককে বলেন, ফজলি রাত ৮টার দিকে ডায়াব্লো খেয়ে মাতাল হয়ে নাচানাচি করে বিভিন্ন লোকজনকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করতে থাকে রীতিমত । অাবু নামের স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, সোনারপাড়া এলাকায় অন্তত একশতাধিক তরুণকে মাদকের ছোঁয়া লাগিয়েছে সন্ত্রাসী ফজলি।

ইউসুফ নুর নামের এক ব্যক্তি বলেন, অামার ভাতিজা কোনদিন ইয়াবা ও বারো পারসেন নামক ডায়াব্লো মদ যে দেশে অাছে তা জানতো না! অথচ অাজ হঠাৎ ফজলির খপ্পরে পড়ে মাদকসেবী হয়ে পড়েছে।

এখন সে ঠিক মতোন নেশা করতে না পারলে বাড়ির অাসবাবপত্র চুরি করে বিক্রি করে ফজলি থেকে মাদক কিনতে চলে যায়।

সম্প্রতি করোনাকালে তার গ্রুপের তিনজন ইয়াবাসেবীদের স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে ধরে পুলিশকে দেয়ার চেষ্টা করলে ফজলি তাদের পরিবার থেকে তিনহাজার টাকা করে নিয়ে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা অাসার অাগেই ছেড়ে দেই।

অন্যদিকে ওই সন্ত্রাসী ফজলি মাদকের ডিলার থেকে লাভবান হওয়ার পর থেকে সাধারণ লোকজন তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে পর্যন্ত সাহস করেনা।
কেউ তাকে নিয়ে কথা বললে তাৎক্ষণিক মামলার ভয় দেখিয়ে ভিটেমাটি ছাড়া করার হুমকি প্রদর্শন করে এই সন্ত্রাসী ফজলি। এ নিয়ে সন্ত্রাসী ফজলি যেন পুরো জালিয়াপালং ইউনিয়নের এক মহা অাতঙ্ক!

সূত্র জানায়, উখিয়া সীমান্তের পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকায় ফজলির মাদকের ২০জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এদের মধ্যে অাব্দুল মাজেদ, সাদেক অালী, অালম, মনির উল্লেখযোগ্য। তবে তার গ্রুপের সাগরপথের ইয়াবা পাচারকারী অাব্দুল মাজেদ প্রকাশ বর্মাইয়া মাজেদ ২০দিন ধরে এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

ফজলির এক নিকটস্থ প্রতিবেশী জানায়, এলাকায় ডায়াব্লো (বারো পারসেন) মদটি বিক্রি করে তার স্ত্রীর অাগের জামাইর বড় সন্তান। সে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করে অার দূরদূরান্তের মাদকগুলো ফজলি নিজেই সাপ্লাই দিয়ে থাকে। বলতে গেলে এলাকায় ফজলি এই মাদকের পরিবেশে বানিয়ে ফেলেছে।

কার্জন নামের অারো এক যুবক বলেন, ফজলি ২বছর ধরে খুচরা ইয়াবা বিক্রি করলেও নতুন করে তার মাদককারবারী সিন্ডিকেট দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে থাইল্যান্ডের বারো পারসেন ডায়াব্লো মাদকটি সরবরাহ করছে প্রতিনিয়ত।

তার কারণে সকল পান বিতান গুলোতে এখন ডায়াব্লো মদটি পাওয়া যায়।

তার বিরুদ্ধে অারো অভিযোগ অাছে সে এক বছরধরে টেকনাফ শহরে মহিষ কিনতে যাওয়ার নাম করে বারো ডায়াব্লো বারো পারসেনটি নিয়ে অাসে।

সম্প্রতি উখিয়ার বালুখালির নুরুল অাবছার প্রকাশ অাবছার মেম্বার দশ হাজার ইয়াবা নিয়ে র‌্যাবের হাতে অাটক হলে তার কোমর ভেঙে পড়ে।

কারণ অাবছার মেম্বারের শাশুড়বাড়ি সন্ত্রাসী ফজলির বাড়ির নিকটস্থ হওয়ায় তার সাথে নিয়মিত মদের ব্যবসার হিসাব নিকাশ অবশিষ্ট থেকে যায়।

অাবছার মেম্বার অাটক হওয়ার অাগে ফজলি নিয়মিত বালুখালি পানবাজারে অাসা যাওয়া করতো হরদম। পরবর্তীতে তার মাদক অামদানি বৈধ করার জন্য সেখানে একটি দোকানও নিয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীর দাবী চলমান মাদক বিরুধী অভিযানে এই কুখ্যাত ফজলিকে তদন্তপূর্বক অাইনের অাওতায় অানতে পারলে উপকূলের মাদক নির্মূল করা কিছুটা হলেও লাগব হবে।

অন্যদিকে সন্ত্রাসী ফজলি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উখিয়ার জালিয়াপালং ডেইলপাড়া গ্রামের আওয়ামীলীগ কর্মী মনজুর অালমের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে যে বর্বর হামলা হয়েছিল তার পুরোপুরি নেতৃত্ব দেন সন্ত্রাসী ফজলি।

সেই হামলায় অাহত মনজুর অালমকে উপুর্যপুরি কুপাতে থাকে ফজলির সন্ত্রাসীরা এমনকি সেখানে যে রামদা কিরিচ ব্যবহার করা হয়েছিল সবগুলো সন্ত্রাসী ফজলি নিজেই নির্বাচনের অাগে কোটবাজার কামারের দোকান থেকে সংগ্রহ করে রাখেন।

তার বাহিনীকে এসব ধারালো অস্ত্র পূর্ব প্রস্তুতিমূলক বিতরণ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি অাছে।

সেই ঘটনায় সন্ত্রাসী ফজলিসহ অন্তত ২০জনকে অাসামী করে উখিয়া থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন অাহত মনজুর অালমের স্ত্রী। যার মামলা নাম্বার- জি অার ০৪/১৮

এই সন্ত্রাসী ফজলির বাড়ি জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে হলেও সে ভাড়াটিয়া হিসেবে সবখানে হামলায় অংশগ্রহণ করতে চলে যায়।
যেমনটি গত নির্বাচনী সহিংসতায় বাস্তবতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ প্রশাসন। সে ৪নং ওয়ার্ডে গিয়ে অাওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের কুপাতে যাওয়ার লোমহর্ষক ঘটনা অাজো কেউ ভূলতে পারে না।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় অাসার সম্ভাবনা নিয়ে তার ক্যাডার বাহিনী পুরো উপকূলে ব্যাপক নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের কাছে। সেই অস্থিরতায় সন্ত্রাসী ফজলি মাদক ও মানবপাচারের লাখ-লাখ টাকার অর্থ যোগান দিয়েছিল।

এরপর প্রশাসন যখন তাকে খুঁজতে থাকে সে নিজেকে বাঁচাতে আইনজীবী দাবী করে বসে।

এদিকে আবার কখনো র‌্যাবের সোর্স পরিচয়ে দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসী ফজলি।

সূত্র জানায়,এই ফজলি’র হাত থেকে রেহায় পেতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, পুলিশ সুপার, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ঠ সব দপ্তরে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগিরা।
সে বিভিন্ন অপরাধের মামলায় জেল খাটলেও বের হয়ে পুণরায় শুরু করে অপরাধ কর্মকান্ড।

এদিকে মানবপাচারে সোনারপাড়ার গডফাদার ফজলি। চিহ্নিত এই মানপাচারাকারী প্রলোভনে ফেলে শুধুমাত্র সোনার পাড়া ও ইনানী থেকে মালয়েশিয়া পাচার করেছে শতাধিক সহজ সরল যুবক। এরমধ্যে অনেককে জোর করে পাচার করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শত শত স্বপ্নবাজ যুবকদের ফুসলি এনে পাচার করেছে মালয়েশিয়ায়।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, চিহ্নিত মানবপাচারকারী ফজলি উখিয়া উপজেলার মানবপাচারের ডন রেবি ম্যাডামের অন্যতম সহযোগি ছিলেন। একের পর এক নিজের মামলা’র জামিন আর নিরীহ মানুষদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে ফাঁসাতে এক সময় ফজলি নিজেই আইনজীবী সহকারীর মত দক্ষ হয়ে উঠে। সেই সুবাদে নিজেকে এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে এ্যাডভোকেট হিসেবেই পরিচয় দেয়। তার হাত ধরে অন্তত এক হাজারেরও বেশি নিরীহ মানুষ মালয়েশিয়া পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

মানবপাচারের ব্যবসায় কোটি টাকার মালিক বনেছেন ফজলি। এরমধ্যে ইসলামী ব্যাংক কোটবাজার শাখায় অন্তত অর্ধকোটি টাকা জমা রয়েছে তার। এছাড়াও কক্সবাজারের বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকে তার লাখ লাখ টাকা জমা রয়েছে। ওই সূত্রের মতে, ব্যাংকে জমানো সব টাকায় সে মানব পাচার করে জমিয়েছেন।

তবে বেশ কিছুদিন ধরে মানবপাচার বন্ধ থাকায় ব্যবসার কৌশল পাল্টেছে ফজলি। এ ছাড়া পুরো উখিয়া উপজেলায় হুন্ডি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন ফজলি। তার নেতৃত্বে রমরমা চলে আসছে হুন্ডি ব্যবসা। হুন্ডি’র টাকা পাচারের ঘটনায় ২০১৪ সালে মরিচ্যা বাজারে ফজলিকে স্থানীয়রা ধরে মাথা ন্যাড়া করে দেন। এটি এখনো উখিয়ার আলোচিত ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত।

হরতালে উখিয়ার কোটবাজার, সোনারপাড়া ও মরিচ্যা এলাকায় নাশকতার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিএনপি জামায়াতের অন্যতম বিশ্বস্থ লোক আবু ছৈয়দ প্রকাশ ফজলি।
জামায়াতের হরতালে কোটবাজারে অসংখ্য গাড়ি ভাংচুর করেছে সে।

এছাড়াও উখিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক নাশকতার মামলা রয়েছে। এরমধ্যে একটি মামলায় জেলও খেটেছেন সে। তার বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে অর্থ যোগান দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

চাঁদাবাজিতেও শীর্ষে আবু ছৈয়দ ফজলি। সোনারপাড়া ও ইনানী এলাকার পর্যটন, হ্যাচারীসহ সব ধরণের ব্যবসায়ীরা তার বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ফজলি’র দাবিকৃত চাঁদা দিতে না পেরে ব্যবসা ফেলে পালিয়েছে অসংখ্য ব্যবসায়ী। ২০০৯ সালে ফজলিসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুড়িশিয়াল আদালতে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করে এক ভুক্তভোগি। মামলা নং- ২০০/০৯। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যটন ব্যবসায়ী ও হ্যচারী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে শীর্ষ এই সন্ত্রাসী। সোনার পাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও রেহায় পাননা তার হাত থেকে। অনেক সময় চাঁদা দিতে না চাইলে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেয় ফজলি।

ভূমিদস্যুতার পাহাড় সম অভিযোগ রয়েছে ফজলি’র বিরুদ্ধে। নিরীহ ও সহজ সরল মানুষের জমি জোর পূর্বক দখলে নিয়ে মোটা অংকে বিক্রি করে দেয় সে। এরমধ্যে
সোনারপাড়ার এালাকার অালীম উল্লাহর জমি ও সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কেনা জমিও জোরপূর্বক দখল করে বাগানবাড়ি বানিয়ে রেখেছে।
এই জমি উদ্বার করতে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিলন বড়ুয়া প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেন। এমনকি সোনারপাড়া সাবেক মেম্বার ফজল কাদেরের দীর্ঘ দিনের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে অাবু ছৈয়দ ফজলির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি অামার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। অামি একজন অাইনজীবি। কক্সবাজারে নিয়মিত উকিল চেম্বারে বসি। অামাকে সম্মানহানির চেষ্টা মাত্র।
– ভয়েস ওয়ার্ল্ড