শিপ্ত বড়ুয়া 

আইন বেশ জটিল এবং সূক্ষ্ম একটি বিষয়। বিস্তারিতভাবে এবং উদহারন দিয়ে অনেকে অনেক রকম ভাবে আইনকে ব্যাখ্যা করতে পারেন। আমি যেহেতু সদ্য আইন পাশ করে বের হই একটি বিষয় লক্ষ্য করি আমাদের সাধারণ মানুষের মধ্যে মামলা নিয়ে অনেক জানার ঘাটতি রয়েছে। যার কারণে আমরা নিত্যদিন নানান হয়রানি বা সমস্যায় পড়ি। ফৌজদারি কার্যবিধি মূলত একটি পদ্ধতিগত আইন যেখানে বলা আছে কিভাবে বাংলাদেশের ক্রিমিনাল কেসগুলো চলবে। আদালত এবং আইনজীবীরা মূলত এই ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে মামলা পরিচালনা করেন এবং পুলিশ এই আইনের অধীন মামলা তদন্ত, গ্রেফতার ইত্যাদি করেন। তবে অন্যান্য বিশেষ অনেক আইন রয়েছে যেগুলোতে আলাদাভাবে পদ্ধতি দেওয়া আছে। তবে মূল পদ্ধতিগত আইন হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধিকে মানা হয়।

অনেকেই বলেন আমি সরাসরি আদালতে গিয়ে মামলা করবো, এই যে আদালতে গিয়ে মামলা করা একে বলা হয় সি.আর (C.R) যার পূর্ণরূপ কমপ্লেইন্ট রেজিস্ট্রার। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগ শুনানি করে মামলা গ্রহণ কিংবা প্রত্যাহার করেন বিশেষভাবে অ-আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কে ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে অভিযোগ জানাতে হয়। তবে আমলযোগ্য অপরাধ সম্পর্কেও আপনি চাইলে কোর্টে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে মামলা দায়ের করতে পারেন সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট মামলার ধরণ অনুযায়ী সিধান্ত নেন যা সচরাচর থানাকে মামলা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় যা তখন জি.আর কেস কিংবা রাষ্ট্রবাদী মামলাও বলা যায়। জি.আর (G.R) মানে জেনারেল রেজিষ্ট্রার, থানায় যেসকল মামলা হয় তা। আরেকধরণের কেস অবশ্য আছে যা আপনি না জানলেও চলবে তা হলো নন জি.আর (Non-G.R) যা জিডি থেকে মামলায় রূপ নেয়। এখন আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে আমলযোগ্য অপরাধ ও অ-আমলযোগ্য অপরাধ কোনগুলো, সেগুলো বলা আছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩ নং শিডিউল এর ২ নং কলামে। গুরুতর অপরাধগুলোকে এখানে আমলযোগ্য বর্নণা করা হয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে জি.আর কেস ফাইল হলে পুলিশ ইমেডিয়েট তদন্ত করে কিংবা অভিযোগের প্রাইমাফেসি (যা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা) নির্ধারণ করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেন, কোনরকম আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই। অন্যদিকে সি.আর মামলায় আদালত সাধারণত তদন্ত শেষে সমন বা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে কেবল তা কার্যকর করা যায়। আইনের মতে সকল ধরণের আমলযোগ্য অপরাধ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ সুতরাং সকল ক্রিমিনাল কেস এ বাদী রাষ্ট্র।

ইদানিং সি.আর মামলার হার অনেক বেশি দেখা যায় তার মধ্যে অধিকাংশ মামলা আমলযোগ্য হওয়ার আদালত সংশ্লিষ্ট থানাকে নিয়মিত মামলা রুজু করতে নির্দেশ দেন। যখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন অভিযোগ নিতে অপারগতা বা অনীহা প্রকাশ করেন তখনই আপনি আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আইনের গতিপথ উন্মুক্ত যেকোন সময় যেকোন দিকে বাক নিতে পারে। সুতরাং আইনি যেকোন সিদ্ধান্ত ভেবে-চিন্তে বিজ্ঞ আইনজ্ঞের পরামর্শক্রমে করা শ্রেয়। ধন্যবাদ।


লেখক:  শিক্ষানবীশ আইনজীবী, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

shipta52@gmail.com