মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শাপলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন মেজর নিহত হয়েছেন। গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার নাম সিনহা মো: রাসেদ খান। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) লং কোর্সের ৫১ তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। সিনহা মো. রাশেদ খান এক সময় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) কর্মরত ছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে পুলিশ গণমাধ্যমকে জানান, মেজর (অব:) সিনহা মো: রাসেদ গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আরো ২ সঙ্গী সহ নিজস্ব গাড়ি নিয়ে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া শাপলাপুরে পুলিশের চেকপোস্টে পৌঁছালে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে চেক করতে চাইলে সিনহা মো: রাসেদ খান এতে বাঁধা দেন। এনিয়ে পুলিশ ও সিনহা মো: রাসেদ খান এর মধ্যে তুমুল বাক বিতন্ডতা চলে। একপর্যায়ে সিনহা মো: রাসেদ খান তাঁর নিজস্ব পিস্তল বের হাতে নিলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। এতে সিনহা মো: রাসেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরতর আহত হন। সেখান থেকে গুরুতর আহত মেজর (অব:) সিনহা মো: রাসেদ খান কে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষনা করে। শনিবার ১ আগস্ট সকালে নিহত মেজর (অব:) সিনহা মো. রাসেদ খান এর লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও পুলিশের কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে টেকনাফ মডেল থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গাড়ীর আরোহী অপর ২ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ পিস্তলটি জব্দ করেছে। এছাড়া গাড়িটি তল্লাশি করে ৫০ পিচ ইয়াবা, কিছু গাঁজা এবং দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত মেজর (অব:) সিনহা মো. রাসেদ খান তথ্যচিত্র ধারণের কাজে কক্সবাজার এসেছিলেন বলে জানা গেছে। এজন্য তিনি কয়েকজন সঙ্গি সহ গত প্রায় এক মাস ধরে হিমছড়ির একটি রেস্টহাউজ ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন।
অপরদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর শনিবার বিকালে মেরিন ড্রাইভ রোডের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর একটি তদন্ত দল ঘটনা তদন্তে যায়। এসময় এলাকার লোকজন সেনাবাহিনীর তদন্ত দলটিকে দেখে এগিয়ে আসেন। লোকজনের নিকট তদন্ত দলের কর্মকর্তারা শুক্রবার রাতের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ব্কতব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র ফুটে উঠে।
মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা রাশেদ খান সম্পকে জানা যায় ,তিনি ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপসচিব মো. এরশাদ খানের ছেলে। তিনি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজন ছাত্রছাত্রীসহ একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি ট্রাভেল ভিডিও তৈরি করতে কক্সবাজার আসেন। প্রায় এক মাস যাবত তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করেন।
ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত: সেনাসদর
এ ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত জানিয়ে সেনাসদর বলছে: মেজর (অব.) সিনহা গাড়ি থামিয়ে তাদের পরিচয় দিলে প্রথমে তাদের যাওয়ার জন্য সংকেত দিলেও এসআই লিয়াকত তাদের পুনরায় থামায় এবং তাদের দিকে পিস্তল লক্ষ্য করে গাড়ি থেকে নামতে বলে। মেজর সিনহা হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামার পরপরই এসআই লিয়াকত তাকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি করে। জানা যায় যে, এসআই লিয়াকত কোনরূপ কথাবার্তা না বলেই গাড়ি থেকে নামার পরপরই মেজর সিনহাকে করে লক্ষ্য গুলি করে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সেনাসদর জানায়: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ দু’টি সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে দেশমাতৃকার সেবায় কাজ করে আসছে। পেশাদার এ দুটি বাহিনীর মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও কর্মপরিবশে অত্যন্ত চমৎকার। কক্সবাজার পুলিশ দ্বারা বর্ণিত অপ্রীতিকর ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত।
ঘটনার বিবরণী বিশ্লেষণ করে সেনাসদর বলছে: ‘‘প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী স্যুটিংয়ের জন্য মেজর (অব.) সিনহা সামরিক পোশাক পরিধান করেছেন, যা পরিধান করার আগে স্থানীয় সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা উচিত ছিল।
একজন সামরিক পোশাকধারী কর্মকর্তা পরিচয় প্রদানের পরও কোনো জিজ্ঞাসাবাদ ব্যতিত এসআই লিয়াকত কর্তৃক গুলিবর্ষণ করার ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একইসাথে একজন ব্যক্তি হাত তুলে গাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তাকে আটক না করে সরাসরি গুলি করা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভুত।
পুলিশ কর্তৃক এএসইউ এর মাঠকর্মী পরিচয় জানার পরেও তার পরিচয় ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়াটা সমীচিন হয়নি।’’
সেনাসদর জানায়: ‘‘সামরিক পোশাক পরিহিত থাকা অবস্থায় মেজর (অব.) গুলি করার পরই তার বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্ট অভিযোগ উত্থাপনের ঘটনাটিকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা বলে অনুমেয়।
ঘটনাটির যথাযথ তদন্তের প্রয়োজনে উভয় বাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি যৌথ তদন্ত দল গঠন করাসহ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে দোষী ব্যক্তিদের যথাযথ আইনের আওতায় আনা যেতে পারে।
করোনা মহামারির এই কঠিন সময়ে সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ সম্মুখ সারিতে থেকে দেশের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে দুই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যে কোন ধরণের ভুল বুঝাবুঝি এড়ানোর লক্ষ্যে যৌথ তদন্ত কার্যক্রম অনতিবিলম্বে শুরু করা এবং তা সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহতি করা উচিৎ।’’
গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে সিনহা রাশেদ খান নিহত হন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।