বলরাম দাশ অনুপম :

দীর্ঘ ৪ মাস বন্ধ থাকার পর কোরবানি ঈদ শেষে সীমিত পরিসরে খুলছে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্র। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সৈকত ভ্রমণ উন্মুক্ত আর পর্যটন কেন্দ্রগুলো চালু করা হবে। ফলে আবারও দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এতে করোনাকালীন ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন পর্যটন শিল্পনির্ভর ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার চেষ্টা করছে লোকজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারী জয় করতে মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হলে করোনা প্রতিরোধ আরও কার্যকর হবে।

গত চার মাস ধরে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, প্রায় ছয়শত রেস্টুরেন্ট, বার্মিজ মার্কেটসহ পর্যটননির্ভর পাঁচ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টের হাজার হাজার কর্মচারী। করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির কারণে গত চার মাসে পর্যটন খাতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, ঈদের পর কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার খবরে এ খাতের ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে সৈকতের আশেপাশে কিছু কিছু ঝিনুকের দোকান নিজেদের জিনিসপত্র গোছাতে দেখা গেছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বাঁধার মুখেও মাঝে মধ্যেই ছুটে চলছে সৈকতের ঘোড়াগুলো, বিচ ফটোগ্রাফাররা ছুটছেন পর্যটকদের আশায়।

কক্সবাজার আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, গত ৪ মাস পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রশাসনের আশ্বাসের পর ঈদুল আযহার পর হোটেল মোটেল চালু করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পর্যটকবিহীন দুইটা ঈদ কেটে যাবে এমনটি কখনও ঘটেনি বলেও জানান তিনি।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. শাকের জানান, কোরবানির ঈদের পর পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের সৈকত ভ্রমণে আসতে হবে। সমুদ্র সৈকতের প্রতিটি স্পটে স্বাস্থ্যবিধি সরঞ্জামসহ ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য মোতায়েন থাকবে।

তিনি জানান, করোনার কারণে সৈকত ভ্রমণ বন্ধ থাকলেও বেশ কিছুদিন থেকেই কিছু কিছু পর্যটক ও স্থানীয়রা কক্সবাজার সৈকতে ঘুরতে আসছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করার পাশাপাশি সৈকত ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছেন বলেও জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী ঈদুল আজহার পর পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটিও করা হয়েছে। এতে আশান্বিত হয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আগামী ঈদুল আযহার পর কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বাণিজ্য সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হবে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে পর্যটন খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পর্যটন খোলা হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলার সকল পর্যটন স্পট বন্ধ করে দেওয়া হয়।