– তাওহীদুল ইসলাম নূরী

সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার বেড়েই চলেছে। মৃত্যুর মিছিলও দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ৩০ জুলাই পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের পরিমাণ ১ কোটি ৭০ লাখ ৫৭ হাজার ৭০০ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৬ লাখ ৭১ হাজার ১২ জন। মাত্র ১৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের আমাদের বাংলাদেশেও এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ অতিক্রম করে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৯ জন, যার মধ্যে ৩০৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে করোনায় ৩০০০ হাজারের কমবেশি মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ৩০-৪০ জন মারা যাচ্ছে।

এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে কড়া নাড়ছে মসুলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা প্রচলিত অর্থে কোরবানির ঈদ। পরিস্থিতি বিবেচনায় জীবনধারায় অনেক কিছুতে পরিবর্তন আনতে হয়। আমাদেরকেও এই ঈদে তাই করতে হবে। করোনাযুদ্ধে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার চেয়ে সামাজিক চিকিৎসাই তথা সামাজিক সচেতনতা বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ঈদ পালন করতে গিয়ে অতিউৎসাহী হয়ে যে স্বাস্থ্যবিধি দেয়া হয়েছে তা কোনভাবেই লংঘন করা যাবে না। পশুর হাটে যেভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের কথা ছিল, তা অতটা কার্যকর হতে দেখা যায় নি। তাই, আসন্ন ঈদুল আযহা এবং এর পরবর্তীতে জনগণের সচেতনতা বিশ্লেষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। আর,উৎসবের নামে দূরবর্তী জায়গায় ঘুরাঘুরি সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নয় বরং মানুষের পেটের দায়ের কথা বিবেচনা এবং দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। কারণ, রাষ্ট্রকে জীবনের পাশাপাশি জীবিকাসহ সব দেখেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হয়। আমরা সবাই জানি গত ঈদ তথা ঈদুল ফিতর এবং এর পরবর্তীতে করোনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল। ধারণা করা হয় যে, বর্তমানে করোনার যে প্রকোপ তার প্রায়ই ঈদুল ফিতরের সময় স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে ঘরমুখো মানুষের যাওয়া-আসা থেকেই।

এখানে একটা পরিবারের উদাহরণ দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি। ঈদুল ফিতরের সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসেছিল আব্দুল্লাহ। তখন তার বাবা ছিল। এবার কোরবানির ঈদেও সে চট্টগ্রাম আসবে। কিন্তু, এবার বাবা ছাড়াই ঈদুল আযহা পালন করবে আব্দুল্লাহ এবং তার পরিবার। পরিবারের সাথে ঈদ করতে সব বাধা পেরিয়ে রোজায় বাড়ি এসে পাঁচদিন থেকে ঢাকা ফিরে যায় সে। যাওয়ার সময় পরিবারে রেখে যায় করোনা। মরণপণ লড়াই করে মা ও ভাই ফিরলেও না ফেরার দেশে চলে যায় আব্দুল্লাহর বাবা। শুধু এই একটা পরিবার নয়, এমন কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে আরও অসংখ্য পরিবার। তাইতো বিশেষজ্ঞরা এই ঈদের ছুটিতে নাড়ীর টানে বাড়িতে না গিয়ে, সবাইকে যার যার অবস্থানে থাকার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

আজকের এই যে কোরবানি, এখানে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) এবং তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.) এর হৃদয়বিদারক স্মৃতি জড়িত। আর,কোরআনের ভাষায় কোরবানির পশু কিংবা গোশত আল্লাহর কাছে কিছুই পৌঁছে না। পৌঁছে শুধু বান্দার তাকওয়া। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর কাছ থেকে আমরা কোরবানির অনেক ফজিলত এবং গুরুত্বও শুনেছি। তাই,ধর্মীয় উৎসব হিসেবে ঈদুল আযহা পালনের পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ এবং এতে মৃত্যুর হার যেন আর না বাড়ে সে ব্যাপারে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলতে হবে। ঈদুল আযহার নামাজ, পশু জবাই, গোশত খাবার প্রক্রিয়াকরণ এবং বিতরণ ও পশুর চামড়া বিক্রয় প্রত্যেকটি কাজেই যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। মনে রাখতে হবে যে, কোন সরকারের একার পক্ষেই উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধান সম্ভব নয়। সবার সমন্বিত, সুপরিকল্পিত এবং আন্তরিকতাতেই সকল সমস্যার সমস্যা সমাধান হয়। তাই, আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হয়ে করোনার সংক্রমণ এবং বিস্তার ও এতে মৃত্যু রোধে ভূমিকা রাখতে হবে।

আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করে অতিদ্রুত চলমান এই মহামারী করোনাভাইরাসের হাত থেকে সমগ্র বিশ্বকে রক্ষা করুন।

 


লেখক : শিক্ষার্থী ,আইন বিভাগ  আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।