বলরাম দাশ অনুপম :

কক্সবাজারে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ কক্সবাজারের মৎস্যঘাট গুলোতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মৎস্য শিকারে যাওয়া ফিশিং ট্রলারগুলো ইলিশ বোঝাই করে কূলে ফিরতে শুরু করেছে। শুধু মাত্র কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়াস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেই (ফিশারীঘাট) গত ৩ দিনে প্রায় ২০ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হয়েছে এর মধ্যে ইলিশের পরিমান প্রায় ১০ মেট্রিক টনের মতো। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে সাগরে যাওয়া অন্য ট্রলারগুলো ফিরতে শুরু করবে। তখন আরো বেশী ইলিশ নিয়ে ট্রলার গুলো ফিরে আসবে এমনিই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটিতে ৬৫দিন পর্যন্ত ছিলনা কোন কোলাহল। তবে এখন মাছ নিয়ে ফিরে আসা ট্রলার গুলোর হাক ডাক ও বেচাবিক্রিতে সকাল থেকে সরগরম হয়ে উঠে ফিশারি ঘাট নামে পরিচিত এই অবতরন কেন্দ্রটি। ফিরে আসা ট্রলার গুলো নিয়ে আসছে মন মন ইলিশ। ফিরে আসা জেলেরা জানান, সাগরে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।
শুধু ইলিশই নয় এর সাথে ধরা পড়ছে রূপচাঁদা, লইট্যাসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। সাগরে প্রচুর পরিমান ইলিশ ধরা পড়ায় মৎস্যজীবিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। আড়ত গুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্যতা। এসব মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
ফিশারি ঘাটে কথা হয় মায়ের দোয়া ফিশিং ট্রলারের জেলে আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, টানা অনেক দিন মৎস্য শিকার বন্ধ থাকায় অনেক কষ্টে দিন গেছে। তার উপর করোনার দুর্যোগও ছিল। সবমিলিয়ে অনেক দুঃখ-কষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে তাদের। এবার সাগরে প্রচুর পরিমাণ মাছ ধরা পড়ায় হয়তো সেই দুঃখ-কষ্ট ভুলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুশিতে কয়েকটা দিন কাটাতো যাবে।
একই সুরে কথা বলেন এমবি নুসরাত ফিশিং ট্রলারের মাঝি কলিম উল্লাহ। তিনি বলেন, মৎস্য শিকারে যেতে না পারায় গত রমজানের ঈদে ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের কাউকে নতুন জামা কাপড় দিতে পারিনি। বর্তমানে মৎস্য শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে আর আমরাও সাগরে মাছ শিকার করছি এবং আশানুরুপ মাছও পাচ্ছি। আশাকরি এবারের কোরবানির ঈদটা পরিবারের সকলকে নিয়ে হাসি-খুশিতে কাটাতে পারবো।
কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিশিং ট্রলারগুলো গত কয়েকদিন ধরে সাগরে মৎস্য শিকারে গেছে। কিছু কিছু ট্রলার ফিরেও এসেছে। সব ট্রলারেই ছিল মাছ ভর্তি। বিশেষ করে ইলিশ মাছ। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে যে ক্ষতি হয়েছে আশা করি তা পুষিয়ে নিয়ে লাভের মুখ দেখবে ফিশিং ট্রলার মালিকেরা।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ৩শতাধিক ট্রলার ফিরেছে এতে সোয়া ১লাখ টাকার মতো রাজস্ব আয় হয়েছে। ট্রলারগুলো ফিরতে শুরু করায় মাছের পরিমান ও রাজস্ব উভয়ই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য-মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ করে গত ২৩ জুলাই থেকে ফের মৎস্য শিকারে যান মাঝি-মাল্লারা।