অনলাইন ডেস্ক :  নতুন এই ব্যবস্থার নাম, ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’। এছাড়া, ট্রেন স্টেশনগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়, যাতে টিকেট ছাড়া কেউ স্টেশন চত্বরে প্রবেশ করতে না পারে

ট্রেনে ভ্রমণের জন্য টিকেট কাটার নতুন পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নতুন নিয়মে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া এখন থেকে টিকেট কেনা যাবে না। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে পরিচিতি নিশ্চিত করা না গেলে আর ট্রেনে ভ্রমণ করা যাবে না।

সোমবার (২৭ জুলাই) এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। অক্টোবরের শেষ নাগাদ নতুন এই নিয়ম চালু হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহবুব কবীর। এক প্রতিবেদনে এখবর নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

টিকেট কাটা

নতুন ব্যবস্থার একটি নামকরণ করেছে রেলওয়ে, “টিকিট যার, ভ্রমণ তার”। রেলওয়ে জানায়, টিকেট কালোবাজারি বন্ধ ও ভ্রমণের সময় যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

নতুন পরিকল্পনায় একজন যাত্রীকে রেলওয়ের ওয়েবসাইটে নিজের ন্যাশনাল আইডি কার্ড অর্থাৎ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ফলে একজন ব্যক্তি রেজিস্ট্রেশন করার সাথে সাথে তার ছবি ও পরিচিতি যেটা জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারে দেওয়া আছে, সেটা রেলের সার্ভারে চলে আসবে।

এজন্য রেলওয়ে মন্ত্রণালয় আগস্ট মাসে নির্বাচন কমিশনের আওতায় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পের সঙ্গে রেলওয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর।

এখন রেলওয়ের টিকেট কাটার অ্যাপসে যারা আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ব্যবস্থায় যুক্ত হয়ে যাবেন। তাদের নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না।

নতুন নিয়মে একজন যাত্রী তার রেজিস্ট্রেশন করা আইডি থেকে নিজের নামে বা পরিবার বা বন্ধু অর্থাৎ যারা তার ভ্রমণসঙ্গী হবেন – তাদের নামে চারটি পর্যন্ত টিকেট কাটতে পারবেন।

যাত্রাকালে ট্রেনে চেকার তার কাছে থাকা স্মার্টফোন বা ট্যাবে রেলের সার্ভারে থাকা যাত্রীর নাম-পরিচয়ের সঙ্গে টিকেটে থাকা নাম-পরিচয় মিলিয়ে দেখবেন, অর্থাৎ যার নামে টিকেট তাকে ভ্রমণ করতে হবে, এবং যাত্রাকালে “অন বোর্ড” নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। এতে যাত্রীর স্মার্টফোন থাকার প্রয়োজন নেই, কিংবা তাকে জাতীয় পরিচয়পত্রও বহন করতে হবে না।

যাদের এনআইডি নেই তাদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা হবে, জানতে চাইলে মাহবুব কবীর বলেন, “এখন তো ১৬ বছর বয়সী পর্যন্ত অর্থাৎ ২০০৪ সালে যারা জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের পর্যন্ত তথ্য আছে। ওই বয়স পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলেও একটি রেজিস্টার্ড আইডি নম্বর থাকে সেটি দিয়ে তারা টিকেট কাটতে পারবে।”

তবে ১৬ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে কী হবে সেবিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু ১২ বছর বয়স হলেই রেলের টিকেট কাটা যায়, সেক্ষেত্রে রেলওয়ের পরিকল্পনা হচ্ছে জন্মসনদ দিয়ে টিকেট কাটার ব্যবস্থা করা।

অনেক সময় ভাসমান বিভিন্ন পেশায় থাকা নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ যাদের এনআইডি নেই, নতুন ব্যবস্থা চালু হলে তারা আর রেল ভ্রমণ করতে পারবেন না।

তিনি জানান, এখন দু’য়েকটি ধাপে পাইলট করে অক্টোবরের শেষ নাগাদ এই ব্যবস্থা চালু করে দেওয়া যাবে।

অনলাইন রিফান্ড

আগস্টের মাঝামাঝি চালু হবে নতুন এই ব্যবস্থা। এরফলে একজন যাত্রী অনলাইনে টিকেট কাটার পর যদি সেটি পরিবর্তন করেন বা যাত্রা বাতিল করতে চান, তাহলে তিনি টিকেট ফেরত দিয়ে অনলাইনেই অর্থ ফেরত পাবেন। এখন টিকেট ফেরতের অর্থ পেতে একজন যাত্রীকে কাউন্টারে আসতে হয়।

অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহবুব কবীর জানিয়েছেন, এটিও রেলওয়ে টিকেটিং ব্যবস্থা আধুনিকায়নের একটি অংশ। এছাড়া, ট্রেন স্টেশনগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়, যাতে টিকেট ছাড়া কেউ স্টেশন চত্বরে প্রবেশ করতে না পারে।

পাশাপাশি, ইতোমধ্যেই রেলের স্ট্যান্ডিং টিকেট দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

-ঢাকা ট্রিবিউন