তাওসিফুল ইসলাম


আজকের পৃথিবীতে যারাই সেক্সুয়াল ডিসায়ারকে অস্বীকার করে আল্ট্রা মডার্নিজমকে প্রাধান্য দিয়েছে তারাই ফ্রাস্ট্রেটেড এবং অনগ্রসর। যেমন, পশ্চিমা দেশগুলো নারী-পুরুষকে শুধুই মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিছে। এর বাইরে স্পেসিফিক কোন নৈতিকতার সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি। এর পেছনের কারণ হলো দুনিয়াবি প্রতিযোগিতা। সাথে সাথে লিভ টুগেদার, হোমোসেক্সুয়ালিটিকে লেজিটিমেট করছে তথাকথিত উন্নত দেশগুলো। এই বৈধতা দানকেই তারা আধুনিকতা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে মনে করছেন। কি হলো পরিণতি?ধর্ষণের প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে ১ নাম্বার থেকে নামানোই যাচ্ছেনা। ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির প্রথম আলো’র এক প্রতিবেদনে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি পাঁচজন নারীর একজনই জীবনে কোনো না কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হন। মোট সংখ্যার দিক থেকে এটি প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ। ভুক্তভোগী এই নারীদের প্রায় অর্ধেকই ১৮ বছর বয়সের আগে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। তাহলে এতো স্বাধীনতার পরেও হলোটা কি? সম্প্রতি এই হার বেড়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০০ সালে যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের হার ছিল ৩৭ শতাংশ, ২০১০ সালে তা ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০১৮ সালের ১০ জুনের বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রতি এক লাখ আমেরিকানের মধ্যে ৩৫ জন আত্মহত্যা করে। এর পেছনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক ঋণকে দায়ী করেছেন।

আজকাল আমরা শুনতে পাই,অতি উন্নত দেশগুলোতে পাত্রীর অভাবে যুবক বিয়ে করতে পারছেনা অহরহ। সন্তান জন্ম দিলে সরকার এই দিবে সেই দিবে। কারণ প্রাকৃতিক নিয়মকে তারা অগ্রাহ্য করেছে।তাদের কারণে আজকে ফ্যামিলি সিস্টেম ভেঙ্গে গিয়েছে। ছেলেমেয়ে তার বাবা মাকে সম্মান করেনা। তাদের আলাদা করে, ঘটা করে বাবা দিবস, মা দিবস পালন করতে হয়। কারণ ছোটবেলা থেকেই আলাদা হয়ে যেতে দেখছে মা বাবাকে। তারা ছেলে-মা, ভাইবোন……. ইন্টারকোর্সেও দ্বিধা করছেনা।কিন্তু ইসলাম কি বলছে? “তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদের, মেয়েদের, বোনদের, ফুফুদের, খালাদের, ভাতিজিদের, ভাগ্নিদের, তোমাদের সেই সব মাতাকে যাঁরা তোমাদের দুধ পান করিয়েছেন, তোমাদের দুধবোনদের, তোমাদের শাশুড়িদের, তোমরা যেসব স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত (দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন) হয়েছ সেই সব স্ত্রীর অন্য স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদের, আর যদি তোমরা তাদের সঙ্গে মিলিত না হয়ে থাকো, তবে তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদের এবং দুই বোনকে একত্র করা (তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে অন্যের বিবাহিতদের। তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসী) তারা ছাড়া। এটি তোমাদের ওপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সব নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদের চাইবে বিয়ে করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়।” (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৩-২৪)
এভাবে সুনির্দিষ্টভাবে আর কোন গ্রন্থ ব্যাখ্যা করেছে পৃথিবীতে?

পৃথিবীতে মানুষ আর জন্তুর পার্থক্যের মধ্যে অন্যতম হলো পিতৃ পরিচয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে আজ এসব পরিচয় ভুলে অনৈতিক, অশালীন কর্মকান্ড বেড়েছে।রক্ষণশীলতার প্রয়োজন আছে। রক্ষণশীলতা মানে নারীদের ঘরে বন্দী করে রাখা নয়। শালীনতা বজায় রাখা। পুরুষত্ব মানে নারীদের নির্যাতন করা নয়। রক্ষণশীলতা পুরুষদের জন্যও। নিজের নফস, চোখকে রক্ষা করা। নিজেকে নৈতিক হিসেবে গড়ে তোলা। অন্যদিকে যে ব্যক্তিস্বাধীনতা সামগ্রিক স্বাধীনতাকে খর্ব করবে তা কখনো আধুনিক হতে পারেনা।আর নৈতিকতার প্রশ্নে ধর্মের কাছে যেতেই হবে। ধর্মের মধ্যে ইসলামই সবচেয়ে বেশি সম্মান দিয়েছে মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং অন্যান্য ধর্মকে। কারণ ইসলাম সব ধর্মকে ধর্ম চর্চা করার স্বাধীনতা দেয়। অন্যের ধর্মীয় মতকে হেয় করার ইজাজত ইসলাম দেয়না।আমরা উল্টোটা চাই। আমরা সোনার মানুষ না হয়ে নৈতিকতার পৃথিবী গড়তে চাই। কিন্তু আসলেই কি সম্ভব? আমি মনে করি নৈতিক মানুষ হয়ে তবেই নৈতিক সমাজ গঠন করা যাবে। তার জন্য ইসলামই সবচেয়ে সুন্দর জীবন ব্যাবস্থা।


লেখক: ছাত্র, ইংরেজি বিভাগ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।