ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন:
পবিত্র ঈদুল আজহা বা কুরবানি ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। ঈদকে ঘিরে এরই মধ্যে জমে উঠেছে কুরবানির পশুর কেনাকাটা ।যদিও এবার করোনা সংকটে সীমিত আকারে পশুর হাট বসছে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে কুরবানি ঈদের আনন্দ যেন ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। যেহেতু কুরবানি দেয়া ধর্মীয় অনুশাসন; তাই দেখে-শুনে সুস্থ পশু কেনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন- মোটা গরু মানেই কিন্তু সুস্থ গরু নয়। সম্ভব হলে দেশি গরু কিনতে চেষ্টা করুন।এতে করে দেশের অর্থনীতি সচল হবে।

এত গেল সুস্থ পশুতে কুরবানির কথা। পাশাপাশি ঈদের খুশিতে নিজের শারীরিক সুস্থতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আসলে কুরবানি ঈদ মানেই কিন্তু খাওয়া আর খাওয়া। কুরবানি ঈদের অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মূল আয়োজন হলো মাংসের বিভিন্ন আইটেম। অবশ্যই মাংস খাবেন, কিন্তু চাই পরিমিতি জ্ঞান ও সংযম। চাই স্বাস্থ্য সচেতনতা।

মনে রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই দৈনিক খাদ্য তালিকায় চর্বি জাতীয় খাদ্য যেন ৩০ শতাংশের বেশি না হয়। মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করবেন। নয়তো কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। মনে রাখবেন, অল্প তাপে বেশি সময় ঢেকে মাংস রান্না করলে ভিটামিন ডি সংরক্ষিত থাকে। মাংস রান্নার সময় প্রথমে লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে পানি ফেলে দিলে কিছুটা হলেও চর্বির পরিমাণ কমে যায়।

মাংসের বেকড রান্না অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। কাবাবের একটা সুবিধা হচ্ছে ঝলসানোর কারণে রান্না মাংসের থেকে কাবাবে চর্বির পরিমাণ কমে যায়। তবে খেয়াল রাখবেন কাবাবের মাংস যেনও আধা-সেদ্ধ না থাকে, না হলে ফিতা কৃমি হওয়ার ভয় থেকে যায়। এ ছাড়া কাবাবের সঙ্গে নান-রুটি, পরোটা পরিহার করাই ভালো। পরিবর্তে কাবাবের সঙ্গে এক প্লেট ফ্রেশ সালাদ হতে পারে একটি চমৎকার কম্বিনেশন।

এই ঈদে অতিথি আপ্যায়নে কোল্ড ড্রিঙ্কের বদলে দই নিয়ে আসুন। সঙ্গে রাখুন ঘরে তৈরি বোরহানি, লাবাং, মাঠা ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর পানীয়। মাংস খাওয়া শেষে দই খাবেন। দই প্রবায়োটিকসের খুব ভালো উৎস, শুধু তাই নয়, ভূরিভোজের পরে টক বা মিষ্টি দই খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য ঈদের সময়ের আরেকটি সাধারণ সমস্যা। এ ক্ষেত্রে ঈদের আগের রাতে বা সকালে ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। এর সঙ্গে প্রচুর পানি পান করে নেবেন।

কুরবানির ঈদ বলেই সবজি বা মাছকে ভুললে চলবে না। বিশেষ করে আঁশ বা ফাইবার এ সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আঁশজাতীয় খাবার চর্বি হজমে বাধা দেয়; সুতরাং ঈদের দিন দুপুর ও রাতে অবশ্যই সবজির একটি পদ রাখবেন। আর সব খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করতে ভুলবেন না।

যাদের ইউরিক এসিড বেশি কিংবা যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত, তারা অবশ্যই একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মাংস খাবেন। এ ছাড়া যারা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ কিংবা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারা অবশ্যই পরিমানমতো খাবেন। অতিরিক্ত তেলমশলা এড়িয়ে যাবেন। পোলাও/বিরিয়ানি যে কোনো একটি একবেলা খাবেন; মগজ/কলিজা এড়িয়ে যাওয়া ভালো; খাবারের সঙ্গে সালাদ, টক দই, লেবু খাবেন। দিনের কোনো এক সময় অবশ্যই ৩০ মিনিট হেঁটে নেবেন। অবশ্যই ঈদের পরদিন থেকে স্বাভাবিক খাবারে ফেরত আসবেন।

যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করছেন, উৎসব-আনন্দে তাদের ওষুধ সেবন যেন বাদ না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করুন। মনে রাখবেন, পানি বিশেষ করে রক্ত ঝরানোটা খুব প্রয়োজন। নয়তো ফ্রিজের ঠাণ্ডায় মাংসের ভিতরে তা জমে বরফ হয়ে যায়, এতে করে মাংসের পুষ্টি মান কমে যায়, এমনকি স্বাদ ও নষ্ট হয়। ফ্রিজিংয়ের বাজে প্রভাব এড়াতে মাংস ছোট ছোট প্যাকেট করে ফ্রিজিং করুন। এভাবে সংরক্ষণ করলে মাংসের প্রোটিন, আয়রন ও ফসফরাস সংরক্ষিত থাকে।

সব ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা এড়িয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ পরিমিত মজাদার খাবারের সঙ্গে সবার ঈদ হয়ে উঠুক আনন্দময়; সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা।

ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন
নার্সিং কর্মকর্তা
জেলা সদর হাসপাতাল, কক্সবাজার।