সিবিএন:
জলবায়ু উদ্ভাস্তুদের জন্য কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে নির্মিত বিশ্বের বৃহত্তম আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মজিবুর রহমানের শারীরিক খোঁজ নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি মেয়র মুজিবের কাছে জানতে চান- শরীর কেমন?
এরপর মুজিবুর রহমান বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাকে মেয়র করেছেন। আমি কিন্তু কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এটি আপনার হাতে দেওয়া। এতে আমি গর্বিত। আপনার হাতে দেওয়ার চেয়ে আর বড় কিছু হতে পারে না। এজন্য আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। আজীবন কৃতজ্ঞ।
আরেকটা কারণে আমি কৃতজ্ঞ, আমি যখন করোনা আক্রান্ত হয়েছি, তখন আপনি আমার দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আপনি যদি সেদিন না বলতেন; আমি যদি কক্সবাজারে চিকিৎসা করতাম, হয়তো আমি পৃথিবীতে থাকতাম না। এজন্য আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
যে বিষয়টি আমি আপনাকে বলতে চেয়েছি, আজ থেকে ৬ বছর আগে জেলা আওয়ামী লীগকে গণভবনে ডেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। পার্টির কথা বলেছিলেন। এক পর্যায়ে বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার কথা বলেছিলেন আপনি।
সেদিন আমি তাৎক্ষণিকভাবে বললাম যে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বিমানবন্দর করবেন, ঠিক আছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দাদের কি করা হবে? সঙ্গে সঙ্গে আপনি বলেছিলেন যে, ‘তাদের জন্য আমি আশ্রয়ণ প্রকল্প করে দেব।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, সেই স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্প শুভ উদ্বোধন করার জন্য আপনি গণভবন বসে আছেন। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প কেন্দ্র প্রাঙ্গণে আছি। এজন্য আপনাকে কক্সবাজার জেলাবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কক্সবাজার শহরকে আধুনিক করার জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই সিদ্ধান্তের আলোকে আজকে কক্সবাজারের রাস্তায় রাস্তায়, মহল্লায় মহল্লায়, গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন। সমস্ত এলাকায় উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সব জেলায় কি হয়েছে সেটা আমি বলব না। আমার কক্সবাজার পৌর এলাকা হওয়ার কারণে বিত্তবানরা নিজ দায়িত্বে সহযোগিতা করেছেন। আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে অনেকে হাইফ্লো নেজাল কেনোলা উপহার দিয়েছেন।
পৌর পিতা বলেন, আমার মা-বাবা ও মৃত স্ত্রীর জন্য আমি একটি নেজাল কেনোলা উপহার দিয়েছি। আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর সেই ঝাউবাগান বৃক্ষরোপন শুরু হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে একটা অনুরোধ করব- প্রশাসনকে আপনি বলে রাখবেন, যে কোন জায়গায় যেন জেলা আওয়ামী লীগকে প্রধান্য দেয়। আপনার সান্বিধ্যে এসে তারা উচ্ছ্বসিত, উজ্জীবিত ও উৎসাহিত হয়। আপনার সম্মানে যারা পাগলের মতো ছুটে যেতে চায়।
মেয়র বলেন- বঙ্গবন্ধু ৭ কোটি মানুষের জন্য ১৪ বছর জেল খেটেছেন। এই মানুষের জন্য আমি এবং আমার পরিবার করোনা আক্রান্ত হয়েছি। আমাকে নিয়ে গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে। আমার পুরো পরিবার লকডাউন। জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রতিমুহুর্তে খোঁজ নিয়েছেন। এমনকি ঘরে চালডালশুদ্ধ পাঠিয়েছেন। এ জন্য জেলা প্রশাসকের প্রতি আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমি অনুরোধ করব, যে কোন অনুষ্ঠানে আমার জেলা আওয়ামী লীগকে প্রধান্য দেওয়ার জন্য। তাদের নিয়েই জেলায় যে কোন আন্দোলন করে থাকি।
আপনি এত সুন্দর, আপনি এত চমৎকার যে বিশ্ববাসী আপনাকে পছন্দ করে। শুধু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ নয়। বিশ্বের সাতশ কোটি মানুষ আপনাকে পছন্দ করে।
প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেন- ওকে, ওকে। বসেন। নাইস হয়েছে। ঠিক আছে। ধন্যবাদ।
কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান প্রায় সাড়ে ৪ মিনিট বক্তব্য প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সকাল ১১ টা ২০ মিনিটের দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে কক্সবাজারের এই আশ্রয়ণকেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন।
এতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
এ সময় জাফর আলম এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, কানিজ ফাতেমা আহমদ এমপি, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আযাদ, সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি এথিন রাখাইন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনসহ প্রশাসন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৪ জুলাই লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ১৯ টি পরিবারকে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানে চাবি হস্তান্তর করা হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথমিকভাবে ৬০০ পরিবারকে নির্ধারিত ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়া হবে।
মোট ২৫৩ একর জমির প্রকল্পে পাঁচতলা বিশিষ্ট ১৩৯ টি ভবনে পুনর্বাসন করা হচ্ছে ৪৪০৯ টি পরিবার। ২০২৩ সালে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
৫ তলা বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত প্রত্যেক তলায় ৮টি করে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের মোট ৩২টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রত্যেকটি ভবনের নিচতলা উম্মুক্ত রাখা হয়েছে।
১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে উদ্বাস্তু হওয়া লোকজনের জন্যই এই প্রকল্প।
খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদের পুনর্বাসিত করা হচ্ছে তারা সবাই কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়ার বাসিন্দা।