আলমগীর মানিক,রাঙামাটি :

প্রশাসন ও পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাঙামাটি শহরের রাঙাপানি এলাকায় একের পর পাহাড় কেটে শেষ করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। একদিকে পাহাড় কাটা হচ্ছে অন্যদিকে এ মাটি দিয়ে রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন এলাকা ভরাট করা হচ্ছে। বিলীন হচ্ছে এলাকার সড়কগুলো। প্রতিদিন শত শত ট্রাকে করে এসব মাটি পরিবহন করা হলেও এসব চক্রটির বিরুদ্ধে নেই কোন আইনী ব্যবস্থা।
সরেজমিনে দেখা গেছে অর্ধশতাধিক শ্রমিক প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটছে। এ মাটি ৩/৪টি ট্রাকে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। মাটি ভর্তি ট্রাকের চাপে ইতিমধ্যে রাঙাপানি লুম্বিনী সড়কের একাধিক অংশ বিলীন হয়ে গেছে। তবুও থেমে নেই পাহাড় কাটা ও মাটি পরিবহনের কাজ।
এ সড়ক দিয়ে আমছড়ি, মানিকছড়ি, লুম্বিনী, লিচু বাগান, আলুটিলা গ্রামের অর্ধহাজার পরিবার যাতায়াত করে। এসব গ্রামের একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, এ চক্রটি সারা বছর পাহাড় কাটে। সংশ্লিষ্ট্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এটি জানার পরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান এ পাহাড় কাটা ও পরিবহন কাজের নেতৃত্ব দেয় রাঙাপানি গ্রামের কালায়া চাকমা। এ অবৈধ কাজে তিনি কখনো সেনাবাহিনী, কখনো জেলা প্রশাসকসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ব্যবহার করেন। এজন্য এ কাজে তাকে এলাকার কেউ বাধা দেয় না।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, এ মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নামে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। প্রতি ট্রাক থেকে ১শ থেকে ২শ টাকা করে চাদা উত্তোলন করে ঐ চক্রটি। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে রাঙাপানি এলাকার বাসিন্দা কালাইয়া চাকমা ও জনৈক সুজিত দেওয়ান নামের দুই ব্যক্তির ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চলে আসলেও তাদের চোখ রাঙানির ভয়ে কেউ কিছু বলে না।
সারা বছর পাহাড় থেকে আনা মাটি পরিবহনের কার সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত লুম্বিনী-সাধনাপুর সুড়কটির অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। এর কারণে এখন এ সড়ক দিয়ে সিএনজিসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী যান চলতে পারে না। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু জানান, যে পাহাড় কাটা হচ্ছে এটি সরকারী জমি। প্রতিদিন পাহাড় কাটা ও মাটি বড় বড় ট্রাকে করে পরিবহনের কারণে কুটিরে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভিক্ষু ও পুন্যার্থীদের কষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয় চলাচলকারি মানুষজন চরম দুভোর্গে পড়েছে। এ সড়কে কাজ করতে সরকারের আরো অনেক টাকা ব্যয় হবে।
এদিকে দিনে-দুপুরে এই ধরনের অপকর্ম চলছে জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, স্থানীয়রা কেউই জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানায়নি। এই ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এ বিষয়ে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমা বলেন, পাহাড় কেটে মাটি আনা-নেয়ার ফলে পুরো রাস্তাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে একাধিকবার অভিযোগ পাওয়ার পর আমি সংশ্লিষ্ট্য কালাইয়া চাকমার সাথে কথা বলে পাহাড় না কাটার জন্য নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আমার কথা শুনেনি।
এদিকে অভিযুক্ত কালাইয়া চাকমার বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনের বাংলালিংক নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।