ইমাম খাইর:
জলবায়ু উদ্ভাস্তুদের জন্য কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে নির্মিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ন প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে আজ।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণকেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতোমধ্যে আমন্ত্রিত অতিথিরা সভাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।
উপস্থিতির মধ্যে রয়েছেন- জাফর আলম এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, শাহীন আকতার এমপি, কানিজ ফাতেমা আহমদ এমপি, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আযাদ, সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি এথিন রাখাইন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন।
এছাড়া প্রশাসন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়েছেন। রয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছবিঃ মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল।

প্রথমিকভাবে গত ১৪ জুলাই লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ১৯ টি পরিবারকে আজ চাবি বুঝিয়ে দেয়া হবে।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ৬০০ পরিবার তাদের জন্য নির্ধারিত আবাসিক ফ্ল্যাট পাবে।
মোট ২৫৩ একর জমির প্রকল্পে পাঁচতলা বিশিষ্ট ১৩৯ টি ভবনে পুনর্বাসন করা হচ্ছে ৪৪০৯ টি পরিবার। ২০২৩ সালে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ।-ছবি-এম সাইফুল ইসলাম।

৫ তলা বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত প্রত্যেক তলায় ৮টি করে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের মোট ৩২টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রত্যেকটি ভবনের নিচতলা উম্মুক্ত রাখা হয়েছে।
এখানে সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয়টি হচ্ছে, অসম্পূর্ণ একটিসহ ২০টি অত্যাধুনিক ভবনের নামকরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই করেছেন।
নামগুলো হচ্ছে-১) সাম্পান, ২) কেওড়া, ৩) রজনীগন্ধা, ৪) গন্ধরাজ, ৫) হাসনাহেনা, ৬) কামিনী, ৭) গুলমোহর, ৮) গোলাপ, ৯) সোনালী, ১০) নীলাম্বরী, ১১) ঝিনুক, ১২) কোরাল, ১৩) মুক্তা, ১৪) প্রবাল, ১৫) সোপান, ১৬) মনখালী, ১৭) শনখালী, ১৮) দোলনচাঁপা , ১৯) ইনানী, ২০) বাঁকখালী।
১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে উদ্বাস্তু হওয়া লোকজনের জন্যই এই প্রকল্প।
খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদের পুনর্বাসিত করা হচ্ছে তারা সবাই কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়ার বাসিন্দা।
বিমান বন্দর সম্প্রসারণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে আশ্রয়হীন হয়ে না পড়ে তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিতির একাংশ।-ছবি-এম সাইফুল ইসলাম।

খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে মূল শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ব্রিজ নির্মাণ ও সংযোগ সড়ক স্থাপনের। কস্তুরাঘাট এলাকা হয়ে বাঁকখালী নদীর উপর নির্মাণ করা হচ্ছে ৫৯৫.০০ মিটার ব্রিজ। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
প্রকল্পটিতে বহুমূখী যাতায়াত ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে জেটিঘাট হতে অফিস পর্যন্ত এইচবিবি রাস্তা নির্মাণ, কৃষ্টের দোকান থেকে সালেহ আহমেদ কোম্পানী পর্যন্ত এইচবিবি রাস্তা নির্মাণ, আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন সংযোগ সড়ক নির্মাণ।
৪৪০৯টি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার যাতে নিরাপদে পানি ব্যবহার করতে পারে তারও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজন্য ৯৭২ লক্ষ টাকার বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে। যার লক্ষ্য পাম্প হাউস ও পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা পুনর্বাসিত হবে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যও নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।
পুনর্বাসিত পরিবারকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, বিনোদনের জন্য পার্ক, স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
স্থানত্যাগ করতে যাওয়াদের অধিকাংশই মৎস্যজীবী বিধায় তাদের জীবিকার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আধুনিক শুটকি পল্লী নির্মাণে। যেটি নির্মিত হবে আধুনিক নগরায়ন পরিকল্পনায়। এই প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প হবে কক্সবাজার জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা।