মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

গত ১৯ জুলাই রাতে খুরুস্কুল ব্রীজের কাছে পুলিশের সাথে এনকাউন্টারে নিহত মিজান থেকে ইয়াবা ব্যবসার নাটের গুরুদের নাম, ঠিকানা পেয়েছি। তাদেরকে চিহ্নিত করেছি। তারা যদি দেশে থাকেন তাহলে এসব নাটের গুরুদের খুব শীঘ্রই কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) থেকে এক কোটি ইয়াবা লুটের অভিযোগ আনা কক্সবাজার শহরের পশ্চিম টেকপাড়ার নিহত মিজান সম্পর্কে জানতে চাইলে সোমবার ২০ জুলাই তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিহত মিজান এ বিশাল ইয়াবার চালানের সাথে যারা জড়িত তাদের নাম বলেছেন এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। ইয়াবা বহনকারী থেকে উপরের দিকে ইয়াবা ব্যবসায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা ৫ স্থর পর্যন্ত মূল পাচারকারীদের নাম ঠিকানা সনাক্ত করেছেন বলে উল্লেখ করে এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) বলেন, তাদেরকে ধরার জন্য আমরা টার্গেট করেছি। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, কক্সবাজার জেলা সম্পৃক্ত ইয়াবা পাচারের সমস্ত রুট আমরা বন্ধ করে দিয়ে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মাঝের ঘাটে নোঙ্গর করা একটি ফিশিং ট্রলার থেকে এক কোটি পিচ ইয়াবা লুটের অভিযোগ আনা মিজানকে গত ১৭ মার্চ রাতে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। জানা গেছে, এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ইয়াবার এই বিশাল চালানটি লুটের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে মিজান দালালের মাধ্যমে ইয়াবা গুলো ২৪ কোটি টাকায় বিক্রি করে।

পরে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতেই বিমানযোগে মিজান ভারত পালিয়ে যায়। ভয়ংকর মিজান টেকপাড়া ও আশেপাশের এলাকার মানুষের কাছে এক মুর্তিমান আতংকের নাম। তার ভয়ে তটস্থ থাকতো এলাকার সাধারণ মানুষ। এজন্য তার অপকর্মের বিষয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে পারতো না। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছেও মিজান অধরা ছিলো।

এক কোটি ইয়াবা লুটের প্রধান হোতা মিজান (৩২) কক্সবাজার পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম টেকপাড়ার বাসিন্দা গোলাম মওলা বাবুল প্রকাশ ‘জজ বাবুল’ এর পুত্র। গোলাম মওলা বাবুল কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে চাকুরীরত অবস্থায় নিজেকে ‘জজ বাবুল’ হিসাবে জাহির করতে করতে সে এখন সবার কাছে ‘জজ বাবুল’ হিসাবে পরিচিত। একজন চতুর্থ শ্রেণির সাবেক কর্মচারি হয়েও নামের আগে ‘জজ’ শব্দ ব্যবহার করতে পেরে গোলাম মওলা বাবুল এটা নিয়ে এখন বেশ গর্ববোধ করেন। তার সন্তান নিহত মিজানের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এবছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(গ)/৪২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। যার নম্বর ৮৭/২০২০ ইংরেজি।

এই চাঞ্চল্যকর এক কোটি ইয়াবা লুটের ঘটনার দীর্ঘ ৫ মাস পরে মিজান সড়ক পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় যশোরের বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ মিজানকে আটক করতে সক্ষম হন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের একটি দল মিজানকে যশোর থেকে ২০ জুলাই কক্সবাজার নিয়ে আসে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে সে প্রচুর তথ্য দেয়। একইদিন রাত্রে পুলিশের সাথে এনকাউন্টারে শহরের খুরুস্কুল ব্রীজের কাছে টেকপাড়ার ত্রাস মিজান নিহত হন। মিজান অধ্যায় শেষ হওয়ার খবরে বৃহত্তর টেকপাড়ার সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।