সিবিএন ডেস্ক:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মুসলমানরা নিজেদের সভ্যতা থেকে বের হয়ে মক্কার নিকটে পাহাড়ের আস্তানায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।

এতদিন অবধি, তাদের একমাত্র বিরোধী ছিল মক্কার কাফের পুরুষরা, তবে এখন তারা প্রকৃতির প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়ল। তাদের সমস্ত দক্ষতা, শক্তি এবং ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করে তারা তিন বছর অবধি কঠোর পরিস্থিতিতে বেঁচে ছিল। তিন বছর যাবত কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে এই প্রতিকূল পরিবেশের ভিতরেও তারা টিকে ছিল।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী খাদিজা (রাযিঃ) ছিলেন সম্ভ্রান্ত বংশের মেয়ে ও প্রচুর বিত্তশালী। তবুও এই চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে, তখন তিনি কেবল এই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন তাই নয় বরং তিনি তার সমস্ত সম্পদ মুসলমানদের জন্য খরচও করেছিলেন।

সকলে ক্ষুধার্ত অবস্থায় গাছের পাতা ও ছাল খেয়ে দিনাতিপাত করত। কিন্তু এত কষ্টের মাঝেও কেউ ইসলামকে ছেড়ে দেয় নি; বরং ঈমানের উপর তাঁরা আরও অটল হয়েছিল।

এরকম ত্যাগ স্বীকার করা তাদের পক্ষে কিভাবে সম্ভব হয়েছে?

বর্তমান সময়ে আমরা যত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি ততই আমরা এ সকল ঘটনার বিপরীত অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছি।

প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের মত এ সকল গুণ অর্জন করতে বর্তমান প্রজন্মের মুসলমানরা কিভাবে অনুপ্রেরণা পেতে পারে?

‘অনুপ্রেরণা’ শব্দের সহজ সংজ্ঞা হল “যা আমাদেরকে কোনো কাজ করতে স্বতঃস্ফুর্তভাবে পরিচালিত করে।” এটি এক বা একাধিক অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত কোনো নিয়ামক হতে পারে যা কোনো বাসনা বা নির্দিষ্ট কোনো উপায়ে কোনোকিছু অর্জন করার জন্য একটি স্বতঃস্ফূর্ত মাধ্যম হতে পারে। অনুপ্রেরণা এমন একটি ধারণা যা যেকোনো বয়স এবং যেকোনো পরিবেশেই প্রয়োগ হতে পারে।

কিছু প্রেরণা প্রাকৃতিক আচরণ যেমন ভালোবাসা, সংযুক্তি, ভয় বা ক্রোধের দ্বারা জাগ্রত হয়। আবার কিছু প্রেরণা অভ্যন্তরীণ আকাঙ্ক্ষাগুলি পূরণের প্রয়োজনে বাহ্যিক পুরষ্কার দ্বারা জাগ্রত হই। কিছু তত্ত্ব মানব আচরণ বর্ণনা করার জন্য প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি, অভ্যন্তরীণ বাসনা এবং বাহ্যিক পুরষ্কারকে একত্রিত করে।

মানুষ হিসেবে আমাদের মনে প্রায়ই এই প্রশ্ন আসে যে, আমরা এখানে কেন এলাম? এখানে আমাদের উদ্দেশ্যটা কি? এই প্রশ্নের সদুত্তর না পেলে কেউই তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত অনুপ্রেরণা পাবে না।

তাই আল্লাহ তা’আলা ইতিমধ্যে আমাদের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছেনঃ

“আমি জ্বীন ও মানবজাতিকে কেবলমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি” (আল কুরআন-৫১:৫৬)

একবার আমাদের মনে জীবনের উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে এখন এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আমরা কিভাবে অনুপ্রাণিত হব?

এই উদ্দেশ্য পূরণ না হলে আমাদের কি ক্ষতি হতে পারে?

কুরআন আমাদেরকে এরই উত্তর দিয়েছেঃ

“কসম যুগের (সময়ের), নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের।” (আল কুরআন-১০৩:১-৩)

“পুরুষ আর নারীদের মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে আর সে মু’মিনও, তাকে আমি অবশ্য অবশ্যই উত্তম জীবন দান করব আর তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই তারা যা করে তার চেয়ে উত্তম প্রতিফল দান করব।” (আল কুরআন-১৬:৯৭)

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আমাদেরকে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এমন বিভিন্ন সৎকর্মের কথা বলা হয়েছে। আর উদেশ্য পূরণে যারা সফল হবে তাদের জন্য পুরষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য।

আমরা যখন জীবন চলার পথে বিভিন্ন কারণে এই উদ্দেশ্যকে ভুলে যায়, বিভিন্ন আনন্দ-ফুর্তিতে মত্ত হয়ে উঠি তখন আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে থেকে ছুটে যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি বলে এর সমাধান দিয়েছেনঃ

“জীবনের স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো” (তিরমিযী)

প্রকৃতপক্ষে, মৃত্যুর কথা স্মরণ আমাদের মাঝে সত্যিকারের সচেতনতা ফিরিয়ে আনে। সুতরাং, যদি সমস্ত কিছু ব্যর্থ হয় তবে একাকী মৃত্যুর স্মরণই একজন মুমিনের জীবনে প্রেরণার জন্য যথেষ্ট।

“প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে…” (আল কুরআন-৩:১৮৫)

মৃত্যুর সচেতনতা এবং এর বাস্তবতা একজনকে তওবা করতে এবং নিয়মিতভাবে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করে। এটি আমাদেরকে নম্র ও বিনয়ী হতে সাহায্য করে। এটি আমদের উদ্দেশ্য পালনের পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

“তারা দু’আ করে-হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করুন” (আল কুরআন-২:২০১)।