ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী:
মহেশখালীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মুল্য নির্ধারনে চরম বৈষম্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশী মৌজার একই শ্রেণীর জমিতে প্রতি একরে প্রায় ৩০ লাখ টাকার বিশাল ব্যবধানের শিকার হয়ে জমি মালিকের ঘরে ঘরে চলছে কান্নার রোল। তারা জানতে চায় কেন এতো বৈষম্য।কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন থেকে অধিগ্রহণকৃত ৪টি মৌজার জমির মধ্যে কালীগঞ্জ মৌজার জমির মুল্য নির্ধারণে চরম বৈষম্য করায় জমি মালিকদের মধ্যে চলছে বুক ফাটা আর্তনাদ।
অধিগ্রহণকৃত জমি মালিকদের অভিযোগে জানা যায় জানা যায়, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী ও সুমিতোমো কর্পোরেশন (জাপান) এর জন্য কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের ঝাপুয়া, কালিগঞ্জ, ইউনুছখালী ও কালারমারছড়া মৌজা থেকে ২০১৪ সালে ১ হাজার ৫ শত একর জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব করেন। উক্ত প্রস্তাবিত জমি সহ মহেশখালী উপজেলার ১৮টি মৌজার উপর ২০১৪ সাল থেকে জমি বেচা বিক্রির উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অদ্যবধি বলবৎ রয়েছে। কিন্তু ইউনুছ খালী মৌজার জমি উক্ত বিধি নিষেধের আওতামুক্ত ছিল। কালারমারছড়া ইউনিয়নের ৪টি মৌজার জমি অধিগ্রহণের জন্য এল.এ ৩/১৮-১৯ নং মামলা মূলে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারী ৪ ধারা নোটিশ জারী করেন। উক্ত ৪ ধারা নোটিশ পাওয়ার পর ৪টি মৌজার জমির মালিকগণ ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবরে সব মৌজার একই রকম মূল্য নির্ধারণের জন্য আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক তা শুনানীর জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কে দায়িত্ব অর্পণ করেন। এরই ফাঁকে মালিকপক্ষের দেয়া আবেদন শুনানী না করে এল.এ শাখা থেকে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ৭ ধারা নোটিশ জারী করেন। উক্ত ৭ ধারা নোটিশ ৪টি মৌজারই কোন জমির মালিক গ্রহণ করেননি। বিশেষ সূত্রে কালিগঞ্জ মৌজার জমির মালিকরা জানতে পারে অন্য ৩টি মৌজার চেয়ে কালিগঞ্জ মৌজার জমির মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা কম। এতে কালিগঞ্জ মৌজার জমির মালিক পক্ষ হতবিহবল হয়ে পড়েন। এমনকি কোন উপায় না দেখে জমির মালিকরা সাথানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাকে সাথে নিয়ে ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী বিষয়টি ভূমি মন্ত্রীর কাছে আবেদন আকারে তুলে ধরেন। ঐদিন বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত রাজস্ব সভায় কালারমারছড়া ইউনিয়ন থেকে অধিগ্রহণকৃত ৪টি মৌজার জমির মূল্য একই রকম নির্ধারণ করার জন্য ভূমি মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ভূমি মন্ত্রীর এ নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত কালিগঞ্জ মৌজার জমির মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারী মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ০৪.০০.০০০০.৫১২.০৩২.১৪-১০নং স্মারক মূলে জমির মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি আন্ত: মন্ত্রণালয়ে কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। ২০১৬ সালের ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত আন্ত: মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে মহেশখালী উপজেলা থেকে যে সমস্ত জমি অধিগ্রহণ করা হবে সকল মৌজার জমি একই শ্রেণী ও একই রকম মূল্য নির্ধারণ করার জন্য সুপারিশ করা হয়। এ সুপারিশের পর জমির শ্রেণী একই করলে ও মূল্য নির্ধারণে ছিল ভিন্নতা। এ করোনার দূর্যোগ মুহুর্তে ২০২০ সালের ১৮ মে এল.এ শাখা থেকে কালারমারছড়া ইউনিয়নের ৪টি মৌজার মধ্যে ঝাঁপুয়া মৌজার একর প্রতি ৩১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, ইউনুছখালী মৌজায় ৩৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, কালারমারছড়া মৌজায় ২৪ লাখ ৬৩ হাজার ৮ শত টাকা ও কালিগঞ্জ মৌজায় ৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে অনুমোদন দেয়া হয়। মূল্য বৈষম্যের কারণে অন্য ৩ মৌজার ন্যায় মূল্য নির্ধারণের জন্য কালিগঞ্জ মৌজার জমির মালিকদের পক্ষ থেকে মরহুম আবদুল হান্নানের পুত্র নুরে হাবিব তসলিম, মরহুম নুরুল হক চৌধুরীর পুত্র রিয়াজ মোর্শেদ, আবু জাফরের পুত্র মোহাম্মদ ইসহাক ও মরহুম মুরাদ চৌধুরীর পুত্র মো: ইয়াছিন আরফাতের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এহেছান এ ছিদ্দিক ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সচিব, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জেলা প্রশাসক সহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ১৬ জুলাই একটি ডিমান্ডিং জাস্টিস্ নোটিশ প্রেরণ করেন। জাস্টিস্ নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ইউনুছখালী, ঝাপুয়া, কালারমারছড়া ন্যায় কালিগঞ্জ মৌজার মূল্য নির্ধারণ কেন হবে না তা জানতে চেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কালিগঞ্জ মৌজার জমির মালিকরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের জমি ছেড়ে দিতে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু তাদেরকে ঐ ৩ মৌজার ন্যায় মূল্য নির্ধারণ করার দাবী জানান। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা স্থানিয় সাংসদ, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সহ ভূমি মন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।