– এম.আর মাহমুদ 

বিবেকের তাড়নায় বাধ্য হয়ে নিজের পরিবার ও প্রতিবেশী সববয়সী নারীদের ইজ্জত আব্রু রক্ষার জন্য বাবা মোহাম্মদ হাসান আলী, মা মমতাজ বেগম নিজের মাদকাসক্ত ও চরিত্রহীন সন্তানকে গ্রেফতারের আকুতি নিয়ে থানায় গিয়ে নজির স্থাপন করলেন চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের হালকাকারার মৌলভীরচর গ্রামের বাবা-মা।

গত ১৫ জুলাই দুপুরে চকরিয়া থানা সেবা ছাউনীতে চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম, মহিলা কাউন্সিলর রাশেদা বেগমের উপস্থিতিতে ২০/২৫ জন নারীর জটলা দেখে পেশাগত কারণে বিষয়টি জানার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখা গেছে অন্যরকম এক দৃশ্য। কাউন্সিলর রেজাউল করিম জানিয়েছেন, তারা থানায় গিয়েছেন এক লম্পটকে গ্রেফতারের দাবী জানাতে। এ সময় থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন না বিধায় থানার পুলিশ তাদেরকে সেবা ছাউনীতে বসিয়ে রেখেছে। পরে লম্পটের পরিচয় জানতে চাইলে মোহাম্মদ হাসান আলী দাবী করেন, তার পুত্র আবদুল কাদের মাদকাসক্ত। বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত। প্রতিনিয়ত এলাকার সববয়সী নারীদের ইজ্জত আব্রু নষ্টের চেষ্টায় লিপ্ত তার জন্ম দেওয়া সন্তান। তাকে সৎ পথে আনার চেষ্টা করে পিতা-মাতা ব্যর্থ হয়েছে। মা মমতাজ বেগম পায়ের আঘাত দেখিয়ে বলেছেন, আমার ছেলে চরিত্রহীন। তাকে সৎ পথে আসার উপদেশ দিতে গিয়ে বেশ ক’বার আক্রান্ত হয়েছি। সর্বশেষ পায়ে ছুরিকাঘাতের চি‎‎হ্নও দেখালেন।

ইতিমধ্যে তার এমন গর্হিত কাজে অতিষ্ট হয়ে তার স্ত্রী ৩ সন্তান নিয়ে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। অপর ৩ ভাইয়ের বউ তার লালসার শিকার থেকে বাঁচার তাগিদে বাবার বাড়ি চলে গেছে। এছাড়া তার মা-বাবার সাথে থানায় হাজির হওয়া অন্তত ১৫/২০ জন মহিলার একই অভিযোগ। তার নিয়মিত ইজ্জত আব্রো নিয়ে বাড়িতে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা তার ইভটিজিং সহ অনৈতিক কর্মকান্ডের ভয়ে নিয়মিত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাওয়ার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছে।

এসব কথা বলতে বলতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বি.এম.চর ইউনিয়নের বিট পুলিশের মিটিং শেষ করে নিজ দপ্তরে হাজির হলেন। সকলেই একসাথে অভিযোগ করতে থানায় যাওয়ার পথে আটকিয়ে দিলেন প্রহরী। বললেন, করোনা কালে এত লোক একসাথে থানায় প্রবেশ করা যাবে না। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে ২ কাউন্সিলর অবাধ্য সন্তানের পিতা ও কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার চেম্বারে প্রবেশ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চেয়ারে বসলেন। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অভিযোগ শোনে নানা অপকর্মের হোতা আবদুল কাদেরকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলেন। ওই কুলঙ্কার সন্তানের বাবা তার পুত্রের বিরুদ্ধে একটি মামলায় গ্রেফতারী পরওয়ানার নম্বরও দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে।

এ ধরণের নজিরবিহীন ঘটনা দেখে মনে হয়েছে “বিবেকের তাড়নায় বাবা-মা গেলেন থানায়” সমাজে এ ধরণের পিতা-মাতা থাকলে হয়তো পথভ্রষ্ট, নৈতিক চরিত্রহীন, চোর-ডাকাত ও লম্পটেরা এত বেপরোয়া হতে পারতো বলে মনে হয় না। এখন দেখার বিষয় থানা পুলিশ বাবা-মার অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা দ্রুত করছে কিনা। তবে এলাকাবাসীর ধারণা চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন। তবে যেখানে মা-বাবা গিয়ে কুলঙ্কার পুত্রের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে সত্যতা যাচাইয়ের কোন প্রয়োজন আছে বলে কেউ মনে করে না।

দ্রুততার সাথে এমন অপরাধীকে আইনের আওতায় না আনলে যেকোন সময় ধর্ষণের মত জঘন্যতম অপরাধের অবতারণা হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।