সিবিএন ডেস্ক:

দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ‘পিক টাইম’ (চূড়ান্ত পর্যায়) কবে হতে পারে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো টাইম ফ্রেমের বিষয়ে জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আশা করছেন, এ মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে দেশে সংক্রমণ কমতে পারে। তবে চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমেছে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের দাবি, চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ‘পিক টাইম’ অতিক্রম করে নিচের দিকে নামছে।

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে দু্ইজনের এবং সুস্থ হয়েছেন তিনজন। নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরিমাণও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০৫ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা গত দেড়মাসে সর্বনিম্ন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ হাজার ৪৯০ জন।

চট্টগ্রামের ছয়টি ল্যাবে দৈনিক দেড় হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা থাকলেও গতকাল নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৪২৫টি। এর আগে শুক্রবার কক্সবাজারসহ সাতটি ল্যাবে এক হাজার ৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হন ১৯২ জন, শনিবার ৭৮১টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হন ১৬২ জন।

যদিও জুন মাসের শেষ সপ্তাহে এ চিত্র ছিল ভিন্ন। ২৯ জুন চট্টগ্রামের ছয়টি ও কক্সবাজার ল্যাবে ১৫৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করে একদিনে সর্বোচ্চ ৪৪৫ জন রোগী শনাক্ত হন। এর আগের দিন ২৮ জুন ৯৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হন ৩৪৬ জন এবং পরের দিন ৩০ জুন ১৩৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৭২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তবে অনেকে বলছেন, পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্তের পরিমাণ কমেছে।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) ল্যাবপ্রধান ডা. শাকিল আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহ একেবারেই কমে গেছে। এখন দিনের নমুনা দিনেই পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিচ্ছি। এটি একটি ইতিবাচক দিক। মনে হচ্ছে চট্টগ্রামে সংক্রমণের পরিমান অনেকটাই কমে এসেছে।’

তবে এর বিপরীত একটি দিক আছে বলেও মনে করেন এই চিকিৎসক। তার মতে, সমাজে যদি উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়, কিংবা সচেতনতা কম হয় তাহলেও নমুনা সংগ্রহ কম হতে পারে, যা করোনার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ (দ্বিতীয় ধাক্কা) তৈরিতে সহায়ক হবে। তাই এই করোনাযোদ্ধার পরামর্শ, সন্দেহ হলেই যেন নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নেন নগরবাসী।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নমুনা কম পরীক্ষা হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। মূলত নমুনাই কম জমা হচ্ছে। এখন আমাদের ল্যাবগুলোতে আর কোনো জট নেই। আগে অনেকে কোনো প্রকার উপসর্গ ছাড়াই নমুনা দিতে ভিড় করতেন। মূলত আতঙ্কের কারণে এমন হতো। এখন ধীরে ধীরে আতঙ্ক কমে যাচ্ছে। আবার ফি নির্ধারণ করায়ও অনেকে এখন আর প্রয়োজন ছাড়া নমুনা পরীক্ষা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে যারা নমুনা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে সংক্রমণে হারও কমে আসছে। এটি ইতিবাচক দিক।’

মৃত্যু কমলেও সুস্থ হচ্ছে কম

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে গত তিন দিনে চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু হয়েছে সাতজনের, যা গতমাসের যেকোনো সপ্তাহের চাইতে অনেক কম। এছাড়াও কমছে জটিল উপসর্গে ভোগা রোগীর সংখ্যাও। কিন্তু সুস্থতার হার চট্টগ্রামে তুলনামূলক কম।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা ৮৮ হাজার ৩৪ জন এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৩০৫ জন। সে হিসেবে দেশে সুস্থতার শতকরা হার ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং মৃত্যু হয়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ রোগীর।

অথচ চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫২ জনের। এর মধ্যে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৩৮৫ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩১৮ জন, আর মৃত্যুবরণ করেছেন ২১৪ জন। সে হিসেবে চট্টগ্রামে সুস্থতার শতকরা হার ১১ দশমিক ৫৮ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সংক্রমণ কমেছে-এমনটা বলার সময় এখনো আসেনি। সামনে কোরবানির ঈদ, তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আগামী অন্তত এক থেকে দেড় মাস টেস্ট করিয়ে যেতে হবে। তারপর বলা যাবে যে, এটা কমছে কি বাড়ছে। সরকার ও হাসপাতালগুলোকেও প্রস্তুত থাকতে হবে, যেন দেশের কোনো মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।’