প্রনোদনা বাস্তবায়ন আলোচনায় কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স ও স্থানীয় ব্যবসায়িক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ

পর্যটন খাতের সংকট উত্তরণে সরকারের বিশেষ প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবী

প্রকাশ: ১১ জুলাই, ২০২০ ০৪:১১ , আপডেট: ১১ জুলাই, ২০২০ ০৪:১৪

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


ইমাম খাইর:
করোনাকালীন সংকটে কক্সবাজার জেলার পর্যটন খাতের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারের বিশেষ প্রনোদনা প্যাকেজ দাবী করেছে কক্সবাজারের ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রতিনিধিরা।

তাদের দাবী, সরকার ঘোষিত কোভিড-১৯ সিএমএসএমই প্রণোদণা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই তাদের সহযোগিতামূলক ভূমিকা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে স্থানীয় উদ্যোক্তাগণ এই প্যাকেজের সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।

শুক্রবার (১০ জুলাই) বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে সরকারের প্রনোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের উপর  ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভার আয়োজন করে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স।

এতে কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতি, জেলা রেস্তোঁরা মালিক সমিতি, চিংড়ী পোনা হ্যাচারী মালিক সমিতি, শুটকী ব্যবসায়ী সমিতি, লবণ মিল মালিক সমিতি, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন।

সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের উপর বিশদ আলোচনা করেন আবু মোরশেদ চৌধুরী এবং তার উপর আলোচনায় অংশগ্রহণকারীগণ সরকারের প্যাকেজ বাস্তবায়ন ও করোনা সংকট কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়সমুহ দাবী করেন; ১. করোনাকালীন সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য কক্সবাজার পর্যটন খাতের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, ২. জেলার স্থানীয় ব্যাংকসমূহে “হেল্প ডেস্ক” চালু করতে হবে যাতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের উপর প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেতে পারে, ৩. লবণ চাষীদের রক্ষার জন্য কক্সবাজার জেলার অধীনে “লবণ উন্নয়ন বোর্ড” গঠন করতে হবে এবং ৪. লক-ডাউন তুলে নিয়ে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই যাতে তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও ব্যবসাসমূহ চালু করতে পারে তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ও বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, চট্রগ্রাম চেম্বার অব কমার্স সভাপতি মোঃ মাহাবুব আলম, প্রিমিয়ার ব্যাংকের উপদেষ্টা, সাবেক এমডি এস.আই.বি.এল ও ইউসিবিএল মোহাম্মদ আলী, এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার নাজিম হাসান সাত্তার, বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহিলা চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা মনোয়ারা হাকিম আলী, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, হোটেল ওশান প্যারাডাইসের চেয়ারম্যান এম এন করিম, হোটেল রয়েল টিউলিপ ব্যবস্থাপক আমিনুল হক শামিম, সায়মন বীচ রিসোর্ট পরিচালক মোহাম্মদ সাবেদ উর রহমান, চিংড়ী পোনা হ্যাচারী মালিক সমিতির সদস্য সচিব মুহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, জেলা রেস্তোঁরা মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামশুল আলম আজাদ।

ডেইরী ফার্মের পক্ষে বক্তব্য রাখেন- কাজী মোরশেদ আহমদ বাবু, শুটকি ব্যবসায়ীর পক্ষে আবিদ আহসান সাগর, কাকরা ব্যবসায়ীর পক্ষে ইশতিয়াক আহমদ জয় ও ট্যুরিজমের পক্ষে এম রেজাউল করিম। এছাড়া স্থানীয় শুটকী, লবণ, হ্যাচরী এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসমূহ বক্তব্য দেন।

আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, ট্যুরিজমকে প্রমোট করার জন্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল উদ্যোগই কক্সবাজারে নিয়েছেন, কিন্তু করোনা সংকট এক্ষেত্রে অচলবস্থা সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যকেজের কার্যকর বাস্তবায়ন দরকার এবং ব্যাংকগুলো যদি তাদের সহযোগীতা নিশ্চিত করে তাহলে কক্সবাজারের পর্যটন খাত, স্থানীয় উদ্যোক্তা সবাই উপকৃত হবে এবং সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে।

সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, কক্সবাজার হচ্ছে পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি এবং এর সাথে সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত। করোনার কারনে এসকল বন্ধ রয়েছে, সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল ব্যবসা কার্যক্রম আবার চালু হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে স্থানীয় সবার সাথে আলাপ করতে পারি।

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, পর্যটন খাতের সাথে পরোক্ষভাবে প্রায় তিন লাখ মানুষ জড়িত যারা এ মুহুর্তে বেকার হয়ে পরেছে। এদের জীবন-জীবিকার কথা আমরা চিন্তা করছি, ব্যাংকগুলোর সাথে আমরা কথা বলতে পারি যাতে তারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহযোগীতা করে এবং তারা ব্যবসা শুরু করতে পারে। আমরা চেম্বার অব কমার্স একসাথে কাজ করতে পারি।

চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স সভাপতি মাহাবুব আলম, বলেন ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তারাই হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী শক্তি। এ সেক্টরের যাতে কোনভাবেই ক্ষতি না হয় সরকারকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, প্রণোদনা বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই সহযোগীতার হাত বাড়াতে হবে, তাহলে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে।

কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ এনজিওদের সাথে জড়িত এবং তারা ৩০ হাজার থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত আর্থিক সহযোগীতা পাচ্ছে। এনজিওগুলি ভালভাবে কাজ করতে পারলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সাপোর্ট নিশ্চিত হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন এনজিওসমূহকে এ বিষয়ে সমন্বয় করতে পারে।

এসএমই ফাউন্ডেশন জেনারেল ম্যানেজার নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, বাংলাদেশে ৮৫ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাগণ ব্যাংক সেবা থেকে বঞ্চিত এদেরকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা জরুরী।

প্রিমিয়ার ব্যাংক উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী বলেন, কোভিড-১৯ সময়ে অচল প্রায় সিএমএসএমই খাতকে পুনুরোজ্জিবিত করতে হলে ব্যাংক এবং ব্যবসায়ীদের পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বিসিক ডিজিএম মুহাম্মদহাফিজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সিএমএসএম খাতকে ঋণ এবং তদারকির পক্ষে ১১ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করেন।

জেলা রেস্তোঁরা মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক চৌধূরী টুটুল বলেন, রেস্তোঁরা হোটেল কর্মচারীরা গত ৪মাস ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আদহা উপলক্ষে বিশেষ প্রনোদণা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন।