রোবেল বড়ুয়া


নীল রং ওর খুব পছন্দের ছিল, অবশ্য আমারও পছন্দের রং নীল, আর আমরা দু’জনেই নীল রংয়ের যেকোনো জিনিস খুব পছন্দ করি। আমার আর ওর মধ্যেই খুবই যে মিল তা কিন্তু না, তা সত্বেও দু’জনেই একসাথে ভাবনার জগতটাকে খানিকটা পরিবর্তন করেই এক হয়েছিলাম।
আমাদের সম্পর্কের মধ্যে অনেক সামাজিক বাঁধা ছিল। বাঁধা ছিল বলতে সেভাবে ধরাবাঁধা নই, ও ছিল আমার খুব কাছেই। প্রতিদিন হয়ত দেখা হতো না আমাদের, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় আমরা প্রতিদিন ভিডিও কিংবা অডিও কলে সম্পর্কের যোগাযোগ রক্ষা করে যেতাম। তার আগে জেনে নেওয়া যাক ওর সাথে আর পরিচয়ের মুহুর্তটা। ও ছিল আমার বন্ধুর প্রেমিকা, বন্ধু বলতে সেরকম ক্লোজ না তবে আমরা একই এলাকার ছিলাম । একসাথে প্রায় বেড়ে উঠা আর বের হলেই দেখা হতো, আমার বন্ধুর সাথে ওর মানে আমার গার্লফ্রেন্ড এর প্রায় একবছরের রিলেশনশিপ বিচ্ছেদের হয়ে যাবার পর। আমি হঠাৎ একদিন ওর ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠাই, তখন আমার মাথায় এতো কিছু ছিলনা, আমি ওর সাথে কথা বলব কিংবা সম্পর্কে যাবো তাও কিন্তু না, আমি বন্ধুর সাবেক জিএফ হিসেবেই ওকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছিলাম। ঘন্টা দু-এক যেতেই দেখলাম ও আমার রিকুয়েষ্টটা একসেপ্ট করেছে।  এরপর থেকে আমি প্রতিদিন ওর ফেসবুকে লাইক দিতাম যেকোনো পোস্টে, ছবিতে, অবশ্য কমেন্ট করিনি সেভাবে। ফলোআপ করতাম না, নিউজ-ফিডে আসলে সচরাচর চোখ বুলিয়ে লাইক টাই দিতাম। একদিন সন্ধ্যা ফুরিয়ে রাত এসেছে, আমি ঘুমানোর আগে সাধারণত ফেসবুকে ডুকে একটু এদিক সেদিক ঘাটাঘাটি করি।  মুহুর্তেই মেসেঞ্জারে স্টোরিতে একটা ছবি দেখতে পেলাম, নীল রংয়ের শাড়ি পড়া সমুদ্রের জলে দাড়ানো, কেন জানি ছবিটা দেখেই আমার খুব পরিচিত মনে হলো, হৃদয়ে দোলা নাড়া দিতেই আমি একটু কৌতূহলী হয়ে লাভ রিয়েক্ট দিলাম আর রিপ্লাই অপশনে গিয়ে লিখেছিলাম, পাশে যদি নীল রংয়ের পাঞ্জাবী আর জিন্সের প্যান্ট পরা কেউ থাকতো তাহলে বোধহয় একেবারেই খারাপ লাগতো না। দু’মিনিট পরক্ষণেই ওপাশ থেকে আমি ফিডব্যাক পেয়েছিলাম, রিংটোন বেজে উঠতেই দেখি ওর রিপ্লাই, যেমনটা লিখেছিল তা হুবুহু তুলে ধরছি,,,””নীল রংয়ের পাঞ্জাবী পরা কেউ একজন তো থাকত হবে পাশে দাঁড়ানোর মতো”” আর তা দেখেই আমার কৌতূহল আর আগ্রহের শেষটা দেখে কে, সাথে সাথে আমিও রিপ্লাই দিয়েছিলাম “আমার একটা নীল রংয়ের পাঞ্জাবী ছিল, কেউ বললে অবশ্য ওটা পড়েই তার সামনে যাব” আমার ঔ বাক্য তার কেমন লেগেছিল জানিনা কিন্তু তাতে ও একটা হাসির ইমুজী দিয়েছিল।

ব্যাপারটাতে আমি একটু আশাহত হলাম, কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা, কেমন জানি মনের মধ্যে একটা বিশেষ সুখ আর কৌতূহল জেগেছে তা মেটাতেই হবে। আমার একটা খারাপ দিক আছে তা হলো কারো ব্যাপারে জানার আগ্রহ। আমি খুবই আগ্রহ নিয়ে তাকে এর পরেরদিন সকালে “শুভ সকাল” মেসেজটা লিখে চলে গেলাম নেটওয়ার্ক এর বাহিরে কেননা আমি যেখানে কাজ করি সেখানে নেটওয়ার্ক থাকেনা, নেটওয়ার্ক থাকে কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করার মতো নই। সেকারণেই আমি প্রায় ৫ঘন্টা ফেসবুকের বাহিরে ছিলাম, বাড়িতে এসেই মোবাইলের ডাটা অন করতেই তার মেসেজ সে-ও আমাকে সকালের শুভেচ্ছা জানিয়েছে, এবং কেমন আছি তা জানতে চেয়েছে। একটা মজার ব্যাপার হলো, বন্ধুর সাথে তার সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে সে জানতো না আমি তার বয়ফ্রেন্ড এর (বর্তমান এক্স) বন্ধু। ওহ সরি আমি তো মূল কথা থেকেই সরে এসেছি, তারপর আমিও তার সাথে মেসেঞ্জারে আলাপ জমাতে থাকলাম। আমাদের অল্প সময়ের আলাপে ভাবটা খুব বেশি বেড়ে যায় এবং আমাদের এটা রুটিনের মতো হয়ে গেল, কেননা আমি কর্মব্যস্ততার কারনেই দিনের নির্দিষ্ট একটা সময়েই ফেসবুকে আসতাম এবং আমি আসার সাথে সাথেই সে আমাকে মেসেজ দিতো, আমিও দিতাম, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমি আগে দিতাম। এভাবে আমাদের মধ্যে সুন্দর একটা সময় কেটে যাচ্ছে, বন্ধুর মতো ভাব জমেছে কিছুটা এবং চ্যাট করতে করতে আমরা আরো বেশি কাছাকাছি চলে এলাম, তার ভাল লাগার কারণ গুলো জানতে চাইতাম আর পছন্দের জিনিসগুলো ও জানতে চাইতাম। মেয়েদের হয়ত প্রেমে পটাতে এভাবে কৌশল নিতে হয়, হঠাৎ একদিন আমাদের ফোনে কথা হয় এবং তা দিনে দিনে বাড়তেই থাকলো, একসময় গিয়ে বুঝতে পেরেছি, সেও আমার প্রতি ভিষণ দূর্বল হয়ে পড়ছে, আমায় খুব কেয়ার করতে শুরু করল।

এদিকে লকডাউনের কারণে আমার আর কাজে যাওয়া হয়না । সারাদিন বাড়িতে থাকি, অলস মাথায় নাকি শয়তানের কারখানা হয় সে-কথাটি একবারেই মিথ্যা তা কিন্তু নয়, ঠিকই হলো আমার বেলায়। হঠাৎ একদিন সকালে তাকে আমি প্রতিদিনের মতো শুভসূচনা করলাম ভাললাগার একটি গান শেয়ার দিয়েই,,, একপায়ে নূপুর আমার অন্য পা খালি তপুর গানটা ওর মেসেঞ্জারে শেয়ার করলাম। আসলে তখনও আমার মনের কথা তাকে মুখ খুলে বলতে পারিনি, কারণ আমি আগে থেকেই জানতাম সে ছিল ভিষণ রকমের রগচটা আর রাগী, এদিকে বুক পাটে তো মুখ পাটে না অবস্থা আমার 😃,, সেদিন সাহস করেই তাকে আমার মনের কথাগুলো অগোছালো ভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু আমার কিন্তু টেনশনও কাজ করেছিল, এবং ও আমার প্রপোজালটা দেখে একঘন্টা নিরবে ছিল জানিনা কারণটা কি ছিল? পরে যা দেখেছি তা শুনে মহাখুশি হয়েছিলাম এবং মুহূর্তেই আমার কেন জানি খুব সুন্দর একটা সময় কেটে গেলো, আসলেই সুখের সময়টা বা ভাল লাগার সময়টা আমাদের একটু তারাতাড়ি ফুরিয়ে যায়। এতোদিন আমরা একজন আরেকজনের বন্ধু ছিলাম, কিন্তু খানিকটা সময়ের ব্যবধানে সে আমার মনের মানুষ হয়ে গিয়েছিল তার সম্মতিতেই তাকে আমি বলেছিলাম, “”খুব ভালবাসি তোমাকে”” রীতিমতো সেও আমাকে ভালবাসি বলেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করল।

আর এভাবেই চলতে লাগতো আমার আর সেই নীল শাড়ি আর নীল চুড়ি পড়ুয়া মেয়েটির পথচলা। আজও আমরা একসাথেই আছি বিশাল নীল সাগগের কাছাকাছি। তবে তাকে নিয়ে আমার এখনও নীল পাঞ্জাবি পড়ে বিশাল নীল সাগরের সমুদ্র পাড়ে যাওয়া হয়নি লকডাউনের প্রভাবে । আমরা এখন নীল আকাশের নীচেই আছি । আর নীল যেন আমাদের সম্পর্কের একটা রং। নীলে নীলাক্ত আকাশের রংয়ের আমরা মিলে গেলাম। আর আমি তাকে ডাকি নীল পরী নীলাঞ্জনা বলেই।

বিঃদ্রঃ – এটা আমার প্রথম  লেখা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত জীবনেরই একটি কাহিনী মাত্র, তবে সেটা লেখকের ও হতে পারে বা বন্ধুর প্রেমের কাহিনী ও হতে পারে। বিষয়টা ধোয়াশার মধ্যেই থাক।


লেখক : রোবেল বড়ুয়া , ছাত্র, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,  উখিয়া কলেজ।