সায়ীদ আলমগীর :

জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে কলেজ ছাত্রী ও বৃদ্ধসহ ৪ জনকে মধ্যযুগীয় কায়দায় কুপানোর ঘটনায় মামলা করে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন বাদি ও আহতরা। মামলা তুলে না নিলে এবার প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে আসামী ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকেই ভুক্তভোগীদের মাঝে আতংক ভর করেছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল সাম্পানঘাট এলাকায় ৩ জুলাই এ হামলার ঘটনা ঘটে। একইদিন রাতে হামলায় অংশ নেয়া ১৪ জনকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও হামলাকারিদের কেউ গ্রেফতার হননি। উল্টো মামলা তুলে নিতে তারা নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এসব বিষয় থানা পুলিশ ও মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

মামলার বাদি খুরুশকুল সাম্পানঘাট এলাকার মৃত সাধন চন্দ্র দে’র ছেলে মনি কাঞ্চন দে (৪০) জানান, তার বাবার (সাধন চন্দ্র দে) নামীয় বসতভিটা ও নাল জমিগুলো প্রতিবেশী ভূমিদস্যু চক্র দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছিল। তা রুখতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) আদালত-কক্সবাজারে মামলা দায়ের করা হয় (এম.আর মামলা নং-১৩৬৭/১৯)। আদালত উক্ত জায়গায় ১৪৪ ধারা জারী করেন। একই সাথে সদরের সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) বিরোধীয় জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনাও দেয় আদালত। আদালতের নির্দেশনা নোটিশের মাধ্যমে অভিযুক্ত ভূমিদস্যুদের জানিয়ে দেয় সদর থানা। বিষয়টি জানার পর আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সাম্পানঘাট এলাকার মনিন্দ্র দে’র ছেলে পরিধন দে, পরীক্ষিত দে, বাবুল দে, একই এলাকার কার্তিক দে’র ছেলে অক্ষয় দে ডালিম, কাঞ্চন দে, বাবুল দে’র ছেলে রানা দে, রনি দে, মৃত যোগেন্দ্র দে’র ছেলে মনোরঞ্জন দে, সতীষ চন্দ্র দে, নন্দ্র কুমার দে ও স্থানীয় পার্থ দে’র নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের দুর্বৃত্ত দল শুক্রবার (৩ জুলাই) সকালে অতর্কিত ভাবে জমি দখল করতে আসে। বাধা দেয়ার চেষ্টা করার আগেই তাদের হাতে থাকা দা, কিরিচ, লোহার রড, কাঠের লাঠিসহ বিভিন্ন দৈশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা ও ভাংচুর চালায়।

তিনি আরো জানান, তাদের এলোপাতাড়ি কুপে মারাত্মক জখম হয়েছেন তার বড়ভাই গুরাধন দে (৫৫), ছোট ভাই অরূপ দে (৩২), গুরাধনের মেয়ে কক্সবাজার সিটি কলেজের স্নাতকে অধ্যয়নরত মুন্নী দে (২০) ও ছেলে বাপন দে (২২)। হামলাকারিরা বাড়ি হতে নগদ ৬০ হাজার টাকা, পরণের ২ ভরি নানা ধরণের স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। গুরুতর আহত গুরাধন এখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা ব্যান্ডেজসহ বাড়ি ফিরলেও এখনো কাতরাচ্ছে। আর আসামীরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়ালেও এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি।

মনি কাঞ্চন দে বলেন, মামলা করে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। রোববার (৫ জুলাই) বিকেলে প্রবল বৃষ্টির মাঝে কয়েকটি সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে ৮-১০ জন লোক এসে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে গেছে। মামলা তুলে না নিলে এবার না কুপিয়ে, সরাসরি হত্যা করা হবে বলে শাসিয়ে গেছে তারা। বিষয়টি মামলার আইও এবং সদর থানায় অবগত করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও পুলিশী তৎপরতা বাড়েনি।

হত্যার হুমকির বিষয়ে জানতে মামলায় প্রধান অভিযুক্ত পরিধন দে’র মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি (অপারেশন) মাসুম খান বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই থানার উপ-পরিদর্শক আমিনুলের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর মামলাও হয়েছে। রিমোর্ট এরিয়া হওয়ায় দিনে বা রাতে যখনই পুলিশ যায় আসামীরা আত্মগোপনে চলে যায়। অপরাধীরা নিজেদের রক্ষায় হুমকি-ধমকসহ নানা ভাবে প্রচেষ্টা চালায়। সবকিছু মাথায় নিয়েই আসামীদের গ্রেফতারে অব্যাহত চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।