সংবাদদাতা :

করোনার কারণে এক অভাবিত বিপর্যয়ের সম্মুখীন বিশ্ব। করোনা এমন অদৃশ্য এক শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে মানছে না ধনী-দরিদ্র। মানছে না রাষ্ট্রের সীমারেখাও। সর্বোপরি আমাদের ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে এই করোনা। এমনই এক আঁধারভরা সময় এখন। কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপেও অনেকেই আসছেন সকালের সূর্য হয়ে। কিংবা আঁধারভরা সংকটে সমাজের কল্যাণে মানবিকতার সূর্য হয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে দিচ্ছেন অনেকেই। যার একজন শিকলবাহার ডাঃ ফারহানা মমতাজ।

যে কোন সংকটের সময় আমাদের মানবিকতা, আমাদের ভালো-মন্দ দুই দিক সবই প্রকাশিত হয়। আমরা কে, মানুষ না অন্য কিছু? আমাদের চোখের সামনেই তা উদ্ঘাটিত হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই উভয় দিকেরই কথা আমরা শুনেছি। একজন মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। আর অন্যজন বিপদ জেনেও মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে। প্রতিটি সংকটই আমাদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করে। আমরা কি কেবল শুধু নিজের জন্যই বাঁচব না সবাইকে নিয়ে বাঁচব? এই বিপরীতমুখী অবস্থানের যেকোনো একটি আমরা বেছে নিতে পারি। সে সিদ্ধান্ত আমাদের, অন্য কারও নয়। এমনই করে আবেগ ভরা কন্ঠে আক্ষেপ করা কথাগুলো বলেন ডাঃ ফারহানা মমতাজ।

তিনি বলেন, বিপদের সময় যারা ভীরু, তারা ঘরে খিল দিয়ে বসে। যারা সাহসী, তারা মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ায়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে যে মহাদুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে, তা যুদ্ধের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই যুদ্ধে আমাদের অবস্থান কী, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখনই সময়। এখনই সময় আমাদের প্রকৃত মানবিকতা প্রকাশের। করোনার মতো দুঃসময়ে আমার কিছু করার থাকলে কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকব? এমন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষাই আমার বাবা আমাকে দিয়েছে। বলেন, মানুষের জন্য কাজ করাই আমার উদ্দেশ্য। আমি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।

শিকলবাহা এলাকার সামাজিক সংগঠক ও ব্যাবসায়ী মোঃ মনির উদ্দিনের সাথে এবিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ডাক্তাররাও যখন রোগীর চিকিৎসা নিয়ে আতঙ্কে আছেন, সেই সময়ে মানবিক ডাক্তার ফারহানা মমতাজের প্রচেষ্টায় দরিদ্র মানুষ পাচ্ছে চিকিৎসা সেবা। তিনি নিয়মিত এলাকার অসহায় মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিলেও আগামী ১৭ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শিকলবাহার সকলে পাবেন এই চিকিৎসা সেবা।

মাষ্টার হাট এলাকার সমাজ সচেতন যুবক হাসান মুরাদ সাগর বলেন, ডাক্তার ফারহানা মমতাজ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) থেকে প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যায় কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিয়েছেন উচ্চতর প্রশিক্ষণ। করোনাভাইরাসের কারণে প্রসূতিরা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আগ্রহী নয়। এ অবস্থায় মহিলা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ডা. ফারহানা মমতাজ দুর্যোগময় মুহূর্তে সৃষ্টি করেছেন অনন্য এক উদাহরণ।

কর্ণফুলি উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুল হালিম বলেন, সারা দেশে যখন একের পর এক হাসপাতাল, ক্লিনিক রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছে, তখন চেয়ারম্যান বকুলের মেয়ে ডাক্তার ফারহানা মমতাজ নিজের প্রাণের মায়া না করে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন শিকলবাহার মানুষকে সুস্থ রাখার প্রত্যয়ে। এসময় সবাই ডাক্তার ফারহানা মমতাজের পাশে বন্ধু হয়ে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

শিকলবাহা ইউনিয়নের চরহাজারী আজল উদ্দীন সারাং জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সওদাগরের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রাক্কালে শিকলবাহার জনগণের পাশে মানবিক চিকিৎসক ফারহানা মমতাজ অক্লান্তভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, রোগ নিয়ে গেলে ডাক্তারের আলাপনেই সারিয়ে তোলে অসুখের অনেকটাই। সহজ করে কঠিন রোগের পথ্য বাতলে দেন। নির্ভরতা পান সবাই। তাই সকলের কাছে মানবিক ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন ফারহানা মমতাজ।

কর্ণফুলি উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের সিডিএ টেক এলাকার বকুল চেয়ারম্যান বাংলোতে আলাপ হয় সাবেক চেয়ারম্যান সদ্যপ্রয়াত আবুল কালাম বকুলের একমাত্র কন্যা ডাক্তার ফারহানা মমতাজের সাথে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে পেরে আমার ভালো লাগে। আমার বাবা শিকলবাহার সাবেক চেয়ারম্যান সদ্যপ্রয়াত আবুল কালাম বকুলের ইতিহাস সমাজকর্ম করার ইতিহাস, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইতিহাস, মানুষকে বুকে টেনে নেয়ার ইতিহাস। তার সেই কাজকে আমি শুধু ধরেই রাখতে চাই না, আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

ডাক্তার ফারহানা মমতাজ আরও বলেন, আমার বাবা তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মানুষের সেবায়। তাঁর আদর্শ ও লক্ষ্য ছিল কোন দরিদ্র মানুষ বিনা চিকিৎসায়, অনাহারে, মারা যাবে না। তিনি এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। সেই মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আপনারা সবাই এই মানুষটির জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন সেই আদর্শ পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি। আমি এই অঞ্চলের সন্তান। আমাকে আপনাদের সন্তান মনে করে নির্দিধায় আদেশ-নির্দেশ-উপদেশ দেবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছুই চাই না। আমি আপনাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।