সিবিএন ডেস্ক:

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন তিন জন। তার ঠিক ১০ দিন পর করোনা শনাক্ত রোগীর মৃত্যু হয়। দেশে করোনা সংক্রমণের ১১৪তম দিনে (২৯ জুন) এসে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ১৪ জন, মারা গেছেন ৪৫ জন। এর আগে, গত ১৭ জুন শনাক্ত হয়েছিলেন ৪ হাজার ৮ জন, সেদিন পর্যন্ত সেটাই ছিল সর্বোচ্চ। এদিকে, গত ১৬ জুন সর্বোচ্চ ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর মঙ্গলবার (৩০ জুন) সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে অধিদফতর। একদিনে এটিই সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা। বুধবার (১ জুলাই) মারা গেছেন ৪১ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ৮৮৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ৭৭৫ জন। দেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৪৯ হাজার ২৫৮ জন। করোনায় শনাক্ত হয়ে পুরো মার্চ মাসে মোট পাঁচ জন মারা যান, এপ্রিলে ১৬৩ জন আর মে মাসে ৪৮২ জন।

৬ এপ্রিল থেকে নিয়মিত মৃত্যুর সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা ১০ জনের মধ্যে, ১০ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত মৃত্যু হয় ১১ থেকে ১৯ জনের মধ্যে। ১৮ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দুদিন বাদে মৃত্যু হয় ২০ থেকে ২৮ জনের। গত ৩১ মে থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা ৩০-এর ওপর চলে যায়।

গত ২৫ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের মোট সংখ্যা ৫০১ জনে দাঁড়ায়। ১০ জুন মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। সেদিন ৩৭ জনের মৃত্যুসহ মোট ১০১২ জনের মৃত্যু সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারি অবসানের কাছাকাছিও পৌঁছায়নি। সোমবার (২৯ জুন) এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আডানোম গেব্রিয়াসিস সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এখনও আসেনি বলে জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমান পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে আমরা সবচেয়ে খারাপ কিছুর আশঙ্কা করছি।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিশ্বের কয়েকটি দেশ খানিকটা অগ্রগতি অর্জন করলেও সত্যিকার অর্থে মহামারির গতি বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বলতে খারাপ লাগছে, কিন্তু সত্য হলো সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এখনও আসেনি।’

দেশে ৩০ মে সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার পর লকডাউন তুলে নেওয়া হয়। মূলত এরপর থেকেই শনাক্ত হওয়া রোগীর হার ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি নতুন করে রোগী শনাক্ত হওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন কার্যকর না হওয়া, ঈদের ছুটিতে মানুষের ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়া, সরকারি ছুটির পর সবকিছু খুলে দেওয়ার কারণে জনসমাগম বেড়েছে। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার হার বাড়ছে। তবে এখনও যদি কার্যকর লকডাউন করা যায়, তাহলে কিছুটা হলেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়ার দরকার ছিল, সেগুলা নেওয়া হয়নি, ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি বলেই করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে বেশি। কারণ, মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন।’

সমন্বয়হীনতার কথা বললেন জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুরু থেকে যে সমন্বয়হীনতা দেখেছি, সেটা এখনও রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের যে সমন্বয় করা উচিত ছিল সেগুলো হয়নি। প্রস্তুতির অনেক সময় আমরা পেয়েছিলাম কিন্তু সেগুলো আমলে নেইনি, সে অনুযায়ী কাজ করিনি। বিষয়টি বোঝার অভাব ছিল।’

বাংলাদেশে শনাক্তের হার একটা জায়গায় পৌঁছেছে মনে করি মন্তব্য করে চিন্ময় দাস বলেন, ‘যদি ম্যাসাকার কোনও সিদ্ধান্ত আমরা না নিই, তাহলে হয়তো ঊর্ধ্বমুখী নাও হতে পারে, নিচের দিকে নেমে যেতে পারে।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দিনে বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা বেশি হচ্ছে। কিন্তু সেটা এতটাও বেশি না যে তার প্রভাব পড়বে, গড়ে ২০ শতাংশের মতো থাকছে রোগী শনাক্তের হার।’ প্রথম থেকেই অনিয়ন্ত্রিত ও অব্যবস্থাপনাই সংক্রমণের মূল কারণ বলে উল্লেখ করেন ডা. জাহিদুর রহমান।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ঈদের পরে সব অফিস আদালত খুলেছে, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেনি বা করছে না। ফলে মানুষের চলাফেরার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে এখন। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে রোগী বাড়ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঢাকার চেয়েও বেশি।’