সিবিএন:
কক্সবাজারের স্থানীয় কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি ও ধানের বীজ সহায়তা প্রদান করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
করোনাভাইরাস মহামারীতে একটি যৌথ জরুরী কার্যক্রমের অংশ হিসাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে সোমবার (২৯ জুন) এ সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থা দু’টি।
পাওয়ার টিলার, থ্রেশার মেশিন এবং ডিজেল জেনারেটর সমন্বিত এসব যন্ত্রপাতি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ২৫টি কৃষক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ৫০০ কৃষককে উপকৃত করবে। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে বিনিয়োগের জন্য পরামর্শ এবং উৎপাদন বাড়াতে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অপারেশনাল সহায়তার জন্য কাজ করবে।
পাশাপাশি এফএও প্রায় ২৪,০০০ কৃষককে ধানের বীজ এবং গৃহস্থালী হাইজিন পণ্য এবং আইওএম প্রায় ৪৮,০০০ কাপড়ের মাস্ক প্রদান করবে। কাপড়ের মাস্ক এবং হাইজিন পণ্যের মধ্যে হাতধোয়ার সাবানও আছে যার মাধ্যমে কৃষকগণ মাঠে কাজ করার পর হাত পরিষ্কার করতে পারেন যেন কোভিড-১৯-আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
কৃষিক্ষেত্র এবং খাদ্য সুরক্ষায় সহায়তার করার ক্ষেত্রে সরকারী অগ্রাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এই জরুরী সহায়তা করোনাভাইরাস মহামারী এবং ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাব মোকাবেলা করা কৃষকদের অনেক প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
কোভিড-১৯-এর বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চাপানো চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে কৃষি খামারগুলোতে শ্রমিকের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে এবং এর ফলে কৃষকরা কৃষি যন্ত্রপাতিসহ আরো যন্ত্রপাতির কিনতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
এফএও-এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন বলেনঃ “জাতিসংঘের দুটি সংস্থার এই যৌথ প্রচেষ্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল সময়ে কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি করতে সরকারের প্রচেষ্টাকে সাহায্য করবে।“ তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এফএও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে এবং খাদ্য সুরক্ষা সমর্থন করার উপায় হিসাবে কৃষিক্ষেত্র সম্প্রসারণকে সহায়তা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি আরো বলেনঃ “আমরা আজ ৫০০জন কৃষকের জন্য যন্ত্রপাতি বিতরণ করছি। এসব যন্ত্রপাতি কৃষকদের কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে কারণ তারা শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে খুব বেশি নির্ভরশীল হবে না। এসব যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কার্যকরভাবে আরও বেশি খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে এবং এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য সুরক্ষার চাবিকাঠি।“
আইওএম কক্সবাজারের ট্রানজিশন এন্ড রিকভারি ডিভিশনের প্রধান প্যাট্রিক শেরিগনন এই সমন্বিত কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেনঃ “রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই আইওএম এবং এফএও সমন্বিতভাবে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছে। এই দুই সংস্থার যৌথ কার্যক্রম সারা বিশ্বেই প্রশংসিত। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য এমন সহায়তা অব্যাহত রাখব এবং আমাদের যৌথ কার্যক্রমের পরিধি আরো বাড়াবো।“
যুক্তরাজ্য এই কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণে সহায়তা করেছে এবং কৃষকদের মাঝে ধানের বীজ বিতরণ ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এফএও-কে অর্থায়ন করেছে কানাডা, সুইডেন এবং নেদারল্যান্ড।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেনঃ “কোভিড-১৯ লকডাউন পরিস্থিতে স্থানীয় কৃষকদের কৃষিক্ষেত্রের প্রয়োজন মেটানোর এই যৌথ প্রয়াসকে সরকার স্বাগত জানায় । এই সহায়তা উপজেলার খাদ্য সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করবে।“
উখিয়ার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান বলেনঃ “কৃষকদের বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রাদি দিয়ে সহায়তা করা উপজেলার অন্যতম সফল জীবিকা সংস্থান কর্মসূচী। আমি আশা করি যে এই দৃষ্টান্তমূলক কর্মসূচীটি কমিউনিটিভিত্তিক কৃষি সহায়তার উদাহরণ হিসাবে প্রান্তিক কৃষকদের উপকৃত করবে যা কেবল এই জনগোষ্ঠীই নয় প্রতিবেশীদেরও উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।”
এফএও এবং আইওএম রোহিঙ্গা এবং কক্সবাজারসহ সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটাতে বৈশ্বিক এবং জাতীয় পর্যায়ে সহযোগিতা জোরদার করে চলেছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে এই দুটি সংস্থা ‘সেইফ এক্সেস টু ফুয়েল এন্ড এনার্জি প্লাস লাইভ্লিহুডস’ (সেইফ প্লাস) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এবং চুলা বিতরণ, বনাঞ্চল বৃদ্ধি এবং জীবিকা নির্বাহের কার্যক্রমের দ্বারা খাদ্য উৎপাদনের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে পরিবেশের অবক্ষয় রোধ করতে কাজ করছে।