-এম.মোস্তফা কামাল আজিজি 

সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মান জনক পেশা তাই এই পেশার সাথে জড়িত সবাইকে জাতির বিবেক বলা হয়। তবে অনেকে-ই এই পেশাকে ইদানিং কলুষিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

কেউবা আবার প্রশ্ন তুলেছে সাংবাদিকতায় ডিগ্রী কিংবা যোগ্যতা নিয়ে, আবার কেউ পদ-পদবি ও মর্যাদার লড়াই নিয়ে দিচ্ছে কাঁদা ছুড়াছুড়ি।

আবার কেউ সাংবাদিকতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আঞ্জাম দিয়ে আসছে সমাজের যত সব অপকর্মের, যার কারণে প্রতিনিয়ত মানক্ষুন্ন হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকদের ।

প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে একটা নির্দিষ্ট নিয়োগ নীতি বা আইন থাকে। যার উপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিচালিত হয়। কিন্তু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তেমন কোন নিয়োগ-নীতি বা আইন না থাকায়, অথবা থাকলেও তার কোন তোয়াক্কা না করার কারণে অপসাংবাদিকতার পাশাপাশি বেড়ে চলেছে মূর্খ সমালোচকদের সমালোচনা।

যেমন একজন মানুষ ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে হবে। আবার কেউ ব্যারিস্টার হতে চাইলে তাকে ‘ল’ নিয়ে পড়তে হবে। যদি কেউ ব্যাংকার হতে চাই তাহলে তাকে স্পেশাল তার উপর পড়তে হবে।

আপনি সাংবাদিকতা করতে চাইলে আপনাকে জার্নালিজম নিয়ে পড়ে ডিগ্রি অর্জন করে তার পর সাংবাদিকতা করতে হবে এমনটাই নিয়ম।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখুন জার্নালিজম এর উপর লেখা-পড়া করে ডিগ্রি অর্জন করে সাংবাদিকতা করছে এমন কজনই বা আছে। অনেকই বলবে আবার কেন আমার ডিগ্রী আছে না ? জানি আপনি এসএসসি, এইচএসসি বা ইন্টার পাশ করেছেন কিন্তু আপনার সেই ডিগ্রী দিয়ে কী আপনি ডাক্তারি করতে পারবেন? আপনার সেই ডিগ্রী দিয়ে কী ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ব্যারিস্টারি করতে পারবেন? যদি না-ই পারেন, তবে আপনার সেই হাতুড়ি ডিগ্রি দিয়ে কিভাবে সাংবাদিকতা করবেন ? সাংবাদিকতার জন্য আপনাকে জার্নালিজম নিয়ে পড়ে ডিগ্রি অর্জন করে তার পর সাংবাদিকতা করতে হবে।

আর তাই আমি বলব ডিগ্রি থাকুক না থাকুক সাংবাদিকতায় সবাই এক কাতারে। কেননা আমাদের দেশে সাংবাদিকতার ওপর কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই। তবে এতোটুকু বলতে পারি, টিভি সাংবাদিকতার জন্য সুন্দর উপস্থাপনা এবং প্রিন্ট পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকার জন্য নির্ভুল,সাহিত্যপূর্ণ, ক্ষুরধার লেখনি, এই যোগ্যতাগুলো যাদের আছে, তাদেরকে সিনিয়রদের ভাল গাইড কিংবা নিজ এলাকার প্রেসক্লাবের মাধ্যমে বিশেষ কোর্স এর আওতায় এনে নবীন লেখকদের সাংবাদিকতায় সুযোগ করে দিলে অধিক উত্তম হবে বলে মনে করি।

মনে রাখতে হবে একদিন আপনি ও নবীন লেখক ছিলেন, আজ প্রবীন হয়েছেন।

যদি তা না হয়, তাহলে আপনাকেও শুদ্ধ করে দু’কলম লিখতে না জানা ব্যক্তিদের বড় বড় কথা শুনতে হবে সাংবাদিকতা নিয়ে।

আবার কিছু শিক্ষিত মহাশয় আছে যারা নিজেরা তো কিছু করে না বরং অন্যরা কিছু করলেও সেটা সহ্য করতে পারেনা। ধিক্কার জানাই সেসব শিক্ষিত মহাশয়দের যারা অন্যের মেধা ও মননকে সঠিক মূল্যায়ন করতে জানে না।

নিজে দু’কলম সুন্দর ভাবে সাজিয়ে লিখতে না পারলেও অন্যের লেখায় ঠিকই ভুল খুজতে বের হয়ে যায় হারিকেন নিয়ে।

বাংলা ব্যাকরণের প্রসিদ্ধতম গুরুচন্ডালী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সেটা আবার কি? জিজ্ঞেস করা ব্যক্তিটাও লম্বা লম্বা কথা বলে সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে।

একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ই ডিসেম্বর, ও ২৬ শে মার্চ কোনটা কোন দিবস জিজ্ঞেস করলে হা করে থাকিয়ে থাকা ডিগ্রীধারী শিক্ষিত ব্যাক্তিটা ও লম্বা লম্বা কথা বললে সাংবাদিকতা নিয়ে আপনাকে দু’কান পেতে শুনতে হয়।

এমন পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। তার জন্য দরকার একে অপরের প্রতি সম্মান, স্নেহ, সহযোগিতা ও ভালবাসা।
সাথে সাথে বন্ধ করতে হবে একে অপরের প্রতি কাঁদা ছুড়াছুড়ি ও পদ-পদবির লড়াই। ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সুন্দর একটি সিস্টেমের মাধ্যমে আশার আলো দেখাতে হবে আগামী প্রজন্মকে।

অন্যথায় অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিবে সাংবাদিকতা থেকে, আর হারাতে হবে আমাদের অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তিদের যেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মোটেও কাম্য নয়।