লাইফস্টাইল ডেস্ক:
বিজ্ঞানীদের মতামত অনুযায়ী, দূষিত কোনও জায়গায় গেলেই অথবা কিছুক্ষণের জন্য ঘরের বাইরে মানুষের সঙ্গে দেখা হলেই যে এই ভাইরাস দ্বারা আপনিও আক্রান্ত হবেন বা সেটা ছড়িয়ে পড়বে, ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। বরং, মূল সমস্যাটা তখন হবে যখন একে অপরের সঙ্গে এই সাক্ষাতটা একটু বেশি সময়ের জন্য হবে বা আপনি যখন সরাসরি কারোর সংস্পর্শে আসবেন। ভিড়ের মধ্যে বা যেখানে বাতাস চলাচলের জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই, অথবা এমন কোনও আয়োজন যেখানে মানুষ জোরে কথা বলছে বা গান গাইছে– এ ধরনের জায়গাগুলোই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। করোনাভাইরাস আসলে কীভাবে ছড়ায়, জেনে নিন সেটা।

ড্রপলেট
করোনাভাইরাস আক্রান্ত কেউ কাশি কিংবা হাঁচি দিলে, অথবা কথা বললে সেই ব্যক্তির নাক এবং মুখ থেকে বাতাসের মাধ্যমে ড্রপলেটগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ওই ব্যক্তির ৬ ফিটের মধ্যে থাকা যে কেউ নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ড্রপলেটগুলো নিয়ে নিতে পারে নিজের শরীরে।
বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমণ
গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাসটি ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকে। ফলে যে বাতাসে ভাইরাসের উপস্থিতি আছে, সেখানে নিঃশ্বাস নেওয়ার ফলে আপনার ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে করোনাভাইরাস।
হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ড্রপলেট বেরিয়ে ছড়াতে পারে এই ভাইরাস বিশেষ সারফেস থেকে সংক্রমণ
করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি যদি কাউন্টার টপ বা দরজার হাতল স্পর্শ করে এবং আপনি সেই একই স্থান স্পর্শ করার পর নিজের নাক, মুখ কিংবা চোখে স্পর্শ করেন, তবে আপনি কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হবেন।
প্লাস্টিক কিংবা স্টেইনলেস স্টিলের মততো সারফেসে এই ভাইরাসটির ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এটি থেকে মুক্তি পেতে দিনে কয়েকবার সেসব জায়গাগুলো ডিসইনফেকটেন্ট করুন যেখানে আপনার বা আপনার পরিবারের অন্যান্যরা বারবার হাত দিয়ে স্পর্শ করেন, যেমন দরজার হাতল, সুইচবোর্ড ইত্যাদি।
আক্রান্ত ব্যক্তির মল থেকে সংক্রমণ
গবেষণায় এটিও দেখা গেছে যে, সংক্রমিত ব্যক্তির মল দ্বারা ভাইরাসটির ছড়াতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা এখনও নিশ্চিত নন যে সংক্রমিত ব্যক্তির মলের কাছাকাছি কোনওভাবে গেলেই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে কিনা। যদি সেই ব্যক্তি বাথরুম ব্যবহার করেন এবং এরপর হাত না ধুয়ে থাকেন তাহলে সেই হাতে কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে স্পর্শ করলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
কমিউনিটি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া
ইতোমধ্যে যিনি এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, তার সংস্পর্শে গেলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেক সময়ই আমরা নিজেদের আক্রান্ত হওয়ার কারণটা জানি না। কমিউনিটি স্প্রেডের অর্থটাই হচ্ছে এমন কোনওভাবে আক্রান্ত হওয়া যখন আপনি জ্ঞানত কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পরসে না গিয়েও কোভিড-১৯ পজিটিভ হচ্ছেন।
পোষা প্রাণী এবং কোভিড-১৯
বেশ কিছু পোষা প্রাণীকে করোনাভাইরাস টেস্ট করানোর পর পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। এদের মধ্যে সবাই যে অসুস্থ ছিল এমনটা নয় কিন্তু কারোর কারোর মধ্যে হালকা লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। এই পোষা প্রাণীরা হয়তো এমন সব ব্যক্তির সংস্পর্শে গিয়েছিল যারা ইতোমধ্যেই এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ছিলেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখনও এটি নিয়ে পর্যালোচনা করছেন তবে পোষা প্রাণী দ্বারা এই ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার কোন প্রমাণ এখনও তারা পাননি।
আক্রান্ত হওয়া কতোটা সহজ?
গবেষকরা বলছেন, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত একজন ব্যক্তি ২ থেকে ২.৫ জন মানুষের মধ্যে এটি সংক্রমিত করতে পারে। একটি গবেষণায় এটিও দেখা গেছে যে সংক্রমিত করার হারের এই সংখ্যাটা আর অনেক বেশি, ৪.৭ থেকে ৬.৬ পর্যন্তও হতে পারে।
ফ্লুয়ের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, সেটি ১.১ থেকে ২.৩ জন হারে সংক্রমিত করতে পারে। আবার হামের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১২ থেকে ১৮ জন পর্যন্ত।