রিয়াজুল হাসান খোকন, বাহারছড়া, টেকনাফ :

টেকনাফ উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। এখানে নেই কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা। সাগরে মা মাছের প্রজনন মৌসুমে ৬৫ দিন ধরে সরকারী ভাবে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলে এই জনপদের জেলে পরিবার গুলোতে নেমে আসে এক ধরণের অভাব জনিত অন্ধকার। সামান্য আয়ের এই মানুষ গুলোর প্রতিদিন যেন কাটছে অভাব অনটনে। ছোট ছোট ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরে তাদের যে সামান্য আয়ের উৎস ছিল তা নিষেধাজ্ঞা কারণে দুই মাসের অধিক বন্ধ থাকতে হবে।

জেলেরা বিভিন্ন মহাজন থেকে সুদে  কিছু টাকা নিয়ে কোনো রকম তাদের সংসার খেয়ে না খেয়ে চালালেও মুলত দৈনিক আয় না থাকাতে সেই টাকা কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। পরে তাদের পরিবারের অনেক সময় না খেয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন রাত পার করতে হয়। অনেক জেলে বলেন, আমাদের এই কষ্ট দেখার কেউ নেই। কার কাছে গিয়ে আমরা সাহায্য চাইব! কার কাছে গিয়ে আমরা ভিক্ষা করব!। সামনে কোরবানের ঈদে তারা কি ভাবে যে স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের আবদার পূরণ করবে তা নিয়ে ঘোর অন্ধকারে রয়েছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের জন্য কিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও মুলত জেলে পরিবার গুলোতে সদস্য সংখ্যা বেশি থাকায় এই চাউল তাদের দশ থেকে পনের দিনও বেশি যায়নি বলে জেলেরা জানান।

সাগরকে কেন্দ্র করে এই জনপদের সব ব্যবসা বাণিজ্য। সাগর থেকে মাছ ধরতে পারলে উপকূলের সব দোকান পাটের ব্যবসা চলে। স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন পণ্যের দোকানে প্রাণ চঞ্চলতা ফিরে আসে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস জনিত মহামারী দুর্যোগে যেখানে সব কিছু স্থবির হয়ে আছে সেখানে নিম্ন আয়ের এই মানুষদের জন্য সাগরে মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা যেন মরার উপর খাড়া ঘা। বলতে গেলে এই জেলে পাড়ার হাজার হাজার মানুষের আয় রোজগার সব বন্ধ। তারা যেন এক ধরণের হাত পা বাধা অবস্থায় বউ বাচ্চা নিয়ে ক্ষুর্ধাত অবস্থায় পড়ে আছে।

মানুষের মনে হাসি নেই,অভাবে সবার মনে প্রাণ চঞ্চলতা নেই। অন্যদিকে নৌকার মালিকদেরও করুণ অবস্থা। তারা নৌকাতে লক্ষ লক্ষ টাকা পূজিঁ করে কিছু টাকা আয়ের আশা করছিল। কিন্তু পুরো দুই মাস পাঁচদিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলে তাদের পরিবারেও নেমে আসে এক ধরণের কষ্ট জনিত চাপা অভাব। নৌকাতে জীবনের সব পূজিঁ দিয়ে সেই নৌকা এখন অলস ভাবে পড়ে আছে। উপকূলীয় অঞ্চলের এই সব জেলেদের একটাই দাবী দীর্ঘ এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সরকার যেন একটু নমনীয় হয়। ইতিমধ্যে পুরো এক মাস চলে গেছে।

জেলেদের দাবী যা অবশিষ্ট নিষেধাজ্ঞার সময় আছে সেখান থেকে সাপ্তাহে দুইবার তারা যেন সাগরে গিয়ে মাছ ধরতে পারে। জেলেরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন সভা সেমিনার ও মানববন্ধন করেছে। কিন্তু অবস্থার কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে জেলে পরিবার গুলোর প্রতিদিন কাটছে অভাব আর নির্মম কষ্টে। এই ব্যাপারে বাহারছড়া শামলাপুর নৌকা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেলাল উদ্দীন বলেন দীর্ঘ দুই মাস সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হওয়াতে আমাদের কষ্টের কোনো শেষ নেই। এখন সবার ঘরে অভাব অনটন। আমাদের অভাব দেখার কেউ নেই। তাই আমাদের প্রতি একটু নমনীয় হওয়ার জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সহ সরকারের মৎস্য বিভাগের সহায়তা কামনা করছি।