– শামসুল হক শারেক

করোনা পরিস্থিতিতে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন কলিগের খবর নিতে নিয়মিত না হলেও ফোন করার চেষ্টা করি। ২৬ জুন জুমাবারে এভাবে সাংবাদিকদের তালিকা ধরে ফোন করছিলাম কয়েকজনকে। সামনে সাংবাদিক আব্দুল মোনায়েম খানের নামটা আসতেই দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শরীরটা যেন অবস হয়েগেল। হাত পা নাড়াচাড়া করতেও কষ্ট হল কিছুক্ষণ।

ভাবতে কষ্ট হচ্ছিল মোনায়েম ভাই আর নেই। সাংবাদিক মোনায়েম ভাইয়ের মোবাইল আর রিসিভ হবেনা কোন দিন।

করোনা আক্রান্ত হয়ে চির দিনের জন্য তিনি চলে গেলেন এই নস্বর পৃথিবী ছেড়ে। গত ৭ জুন শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন তিনি। ইন্না-লিল্লাহি ওইন্না ইলাইহি রাজিউন।

জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত একজনের জানাজায় অংশ নেয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর উখিয়া আইসোলেশন হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। না, মহান আল্লাহর ফায়সালা অলঙ্ঘনীয়। যার যখন চলে যাবার ডাক আসবে তাকে ঠিক তখনই চলে যেতে হবে। তার আগেও না, পরেও না।
وَلَن يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ-

প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।
(সুরা আল মুনাফিকুন, আয়াত-১১)

স্বভাবজাত নম্র, ভদ্র এবং কক্সবাজারে যেকয়জন উচ্চশিক্ষিত সাংবাদিক আছেন মোনায়েম ভাই তার অন্যতম। এছাড়াও এই দুর্দিনেও তিনি ছিলেন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রতীক। ইন্তেকালের সময় পর্যন্ত তিনি কালের কণ্ঠের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি ও ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের কক্সবাজার প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি এক সময় ডেইলী স্টারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। স্থানীয় দৈনিক হিমছড়ি ও দৈনন্দিন পত্রিকায় বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন অনেক দিন।

১৯৯৭ সালের দিকে দৈনিক হিমছড়ি বের হত রোমালিয়ার ছরা ষ্টেশনের বাবুল ম্যানশন থেকে। ওটা ছিল আমার ফুফাত বোন রেনুদের বিল্ডিং। ওখানে আমার বাসা আর হিমছড়ির অফিস ছিল। প্রেস ছিল প্রধান সড়কে। হিমছড়ির প্রথম বার্তা সম্পাদক ছিলেন সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বক্সী। তখন সাংবাদিক ইকরাম চৌধুরী টিপু ছিলেন চিফ রিপোর্টার।

এর পরে সাংবাদিক আব্দুল মোনায়েম খান বার্তা সম্পাদক হিসেবে দৈনিক হিমছড়িতে অনেক দিন কাজ করেছেন। তখন থেকেই আমি দেখেছি তিনি একজন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদকর্মী ও আদর্শ সাংবাদিক। নীতি নৈতিকতার ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপোষহীন।

আমি ইনকিলাবে যোগ দেয়ার পরেও তাঁর সাথে ভালো সম্পর্ক এবং যোগাযোগ ছিল। ইনকিলাবের যে কোন অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিতেন। বিভিন্নভাবে আমাকে উৎসাহিত করতেন এবং আমাকে পরামর্শ দিতেন। মাঝে মধ্যে ফোনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন।

গত শীতে ‘ওইন রক’ নামের একটি এনজিওর তিন দিনের একটি কর্মশালায় তিনি অনেকটা জোর করে আমাকে যোগদান করিয়েছিলেন। ‘শিশু শ্রমের’ উপর ওই কর্মশালার প্রধান বিষয় ছিল নাজিরার টেকের শুঁটকি পল্লীতে শিশু শ্রমের উপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করা।

অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য নাজিরার টেকের শুঁটকি পল্লীতে আমি আর মোনায়েম ভাই একসাথেই গিয়েছিলাম। আমাদের চাহিদা মত বিশ কিছু ছবিও তুলেছিলাম। মোনায়েম ভাইকে নিয়ে কিছু চমৎকার সর্টও আমি নিয়েছিলাম। আজ ওগুলো যেন শুধুই স্মৃতি।

এর পর নাজিরার টেক শুঁটকি পল্লীতে শিশু শ্রমের উপর আমার অনুসন্ধানী রিপোর্টটি সবচাইতে ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
২০১৭ সালে আমি দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে পদউন্নিত হলে সহকর্মী সাংবাদিকেরা মিলে হোটেল সী গালে আমার সম্মানে একটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন। আর সেখানে বলতে গেলে প্রথম কাতারেই ছিলেন মোনায়েম ভাই।

আমি আজ সাংবাদিক আব্দুল মোনায়েম খানের মাগফিরাত কামনা করছি- আল্লাহ মোনায়েম ভাইকে তুমি রহম কর, ক্ষমা কর, তার নেক আমল গুলো কবুল কর, তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানিয়ে নাও। তার শোকাহত পরিবারকে শোক কাটিয়ে উঠার তাওফিক দান করুন। আমিন।